উনিশ শতকে বাংলায় শিক্ষা সংস্কার - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা
নারী শিক্ষার প্রসারে বিদ্যাসার
উদ্দ্যেশ্য ও উপলব্ধি :
ঊনিশ শতকের প্রথমভাগেও বাংলাদেশে নারী-শিক্ষাকে সুনজরে দেখা হত না । মনে করা হত, মেয়েরা লেখাপড়া শিখলে তার স্বামীর অমঙ্গল হবে । বিদ্যাসাগর বুঝেছিলেন এই ধারণা না ভাঙতে পারলে এবং নারী-শিক্ষার প্রসার ঘটাতে না পারলে সমাজের অর্ধাংশ শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত থেকে যাবে । এবং তা সমাজের অগ্রগতির প্রতি প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে ।
কর্মসূচী ও পরিকল্পনা গ্রহণ :
নারী-শিক্ষার সপক্ষে প্রচার
সরকারকে নারী-শিক্ষার প্রসারে আগ্রহী করে তোলা
নারী-শিক্ষার প্রসারে মেয়েদের জন্য বিদ্যালয় স্থাপনের জন্য ব্যক্তিগত উদ্যোগ গ্রহণ করা
ব্রিটিশ সরকারকেও এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে উৎসাহিত করা
শিক্ষার প্রসারের জন্য উপযুক্ত পুস্তক রচনায় হাত দেওয়া
কর্মসূচীর বাস্তবায়ন :
প্রথমেই তিনি নারী-শিক্ষার প্রসারের প্রয়োজনীয়তা প্রচারের উদ্দ্যেশ্যে বাংলার বিভিন্ন জেলায় ‘স্ত্রীশিক্ষা বিধায়নী সম্মিলনী’ প্রতিষ্ঠা করেন ।
১৮৪৯ সালে ড্রিংকওয়াটার বিটন (বেথুন) এর সহযোগিতায় ‘হিন্দু বালিকা বিদ্যালয়’ (নেটিভ ফিমেল স্কুল) প্রতিষ্ঠা করেন । এটি বর্তমানে বেথুন স্কুল নামে পরিচিত । এটিই ভারতের প্রথম বালিকা বিদ্যালয় ।
১৮৫৪ সালের মধ্যে বাংলায় বালিকা বিদ্যালয়ের সংখ্যা দাঁড়ায় ২৮৮ টি ।
১৮৫৪ সালে (উডের ডেচপ্যাচ বা সুপারিশ অনুযায়ী) ব্রিটিশ সরকার নারী-শিক্ষার প্রসারে সরকারী অনুদানের ঘোষণা করে ।
১৮৫৭ সালে (মহাবিদ্রোহের সময়) বর্ধমান জেলায় বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেন ।
১৮৫৮ সালে ব্যক্তিগত উদ্যোগে নদীয়া, বর্ধমান, হুগলি ও মেদিনীপুর জেলায় ৩৫ টি বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন ।
ধারাবাহিক ভাবে তদবির করে এই বিদ্যালয়গুলোর জন্য সরকারী অনুদান পাওয়া নিশ্চিত করেন ।
১৮৭২ সালে কলকাতায় ‘মেট্রোপলিটন ইন্সটিটিউশন’ প্রতিষ্ঠা করেন । এটি বর্তমানে বিদ্যাসাগর কলেজ নামে পরিচিত ।
১৮৯০ সালে নিজের গ্রাম বীরসিংহে ভগবতী বিদ্যালয় ( নিজের মায়ের নামে) স্থাপন করেন ।
গুরুত্ব ও প্রভাব :
নারীদের বাল্যবিবাহ ও সতীদাহ প্রথা, পুরুষের বহুবিবাহ প্রভৃতির বিরুদ্ধে নারী সমাজের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি হয় ।
এই সময় বেশ কয়েকজন কৃতী নারীর আত্মপ্রকাশ ঘটে । এদের মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য নাম হল কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায় ও চন্দ্রমুখী বসু ।
কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায় বাংলার প্রথম স্নাতক ।
নানা রকম সামাজিক ও ধর্মীয় কুসংস্কার থেকে নারী সমাজ বেরিয়ে আসতে থাকে ।
যার প্রভাবে বাংলাদেশের সমাজ ও ধর্মীয় জীবনে (বিশেষ করে হিন্দু সমাজে) নবজাগরণ-এর ধারা আরও গতিলাভ করে ।
বিদ্যাসাগরের এই প্রভাব স্বীকৃতি মেলে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কথায় । তিনি লেখেন, ‘বিধাতা বিদ্যাসাগরের প্রতি বঙ্গভূমিকে মানুষ করিবার ভার দিয়াছিলেন’ ।
ছাত্র-ছাত্রীর সামর্থ যাচাই :
নিন্মলিখিত প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
১ )বিদ্যাসাগর কেন নারী-শিক্ষার প্রসার চেয়েছিলেন ?
২) তাঁর উদ্যোগে তৈরি প্রথম বালিকা বিদ্যালয়ের নাম কী ?
৩) এই বিদ্যালয়টির বর্তমান নাম কী ?
৪) বিদ্যালয়টির এই নাম করণের কারণ কী ?
৫ )নারী-শিক্ষার প্রসারের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরার জন্য বিদ্যাসাগর কোন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন ।
৬ )১৮৫৮ সালের মধ্যে ব্যক্তিগত উদ্যোগে বিদ্যাসাগর কটি বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন ?
৭) বাংলাদেশের প্রথম মহিলা স্নাতক ( বি এ ) হয়েছিলেন কে ?
বাড়ির কাজ :
নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর তৈরি করো ।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন