সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পোস্টগুলি

(২) দ্বিতীয় অধ্যায় লেবেল থাকা পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

বাংলার নবজাগরণের বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করো।

  অথবা উনিশ শতকে বাংলার নবজাগরণের প্রকৃতি বা চরিত্র আলোচনা করো। উনিশ শতকে পাশ্চাত্য সভ্যতার সংস্পর্শে আসার পর বাঙালি মধ্যবিত্ত সমাজে দেখা দেয় আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি তথা জাগরণ।বাংলার এই জাগরণকে ‘নবজাগরণ’ আখ্যা দেওয়া হয়। বাংলার এই নবজাগরণের চরিত্র নিয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে মত বিরোধের অন্ত নেই। বাংলার নবজাগরণের বৈশিষ্ট্য/প্রকৃতি ১) শহরকেন্দ্রিক : বাংলার নবজাগরণের ব্যাপ্তি ছিল খুবই সীমিত। তা ছিল মূলত শহরকেন্দ্রিক, বিশেষ করে কলকাতাকেন্দ্রিক। ২) উচ্চ শিক্ষিত মধ্যবিত্তের প্রাধান্য : এই নবজাগরণে কলকাতার মধ্যবিত্ত সম্প্রদায়ই প্রধান ভূমিকা পালন করেছিল। শিক্ষিত মধ্যবিত্ত সম্প্রদায় ছিল এর ধারক ও বাহক। কিন্তু গ্রামবাংলার সাধারণ মানুষ এর স্বাদ থেকে বঞ্চিত হয়েছিল।এই কারণে অধ্যাপক অনিল শীল এই জাগরণকে ‘এলিটিস্ট আন্দোলন’ বলে অভিহিত করেছেন। ৩) হিন্দুসমাজের জাগরণ : এই নবজাগরণ কেবলমাত্র হিন্দুসমাজের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছিল।তাই এই নবজাগরণ প্রকৃতপক্ষে হিন্দু জাগরণবাদে পর্যবসিত হয়।রামমোহন ও বিদ্যাসাগর হিন্দুশাস্ত্রকে ভিত্তি করে সমাজ পরিবর্তনের ডাক দেন। ৪) মানবতাবাদী আন্দোলন অনুপস্থিত : ইউরোপীয় নবজাগরণে যেখানে ম

উনিশ শতকে বাংলার নবজাগরণের চরিত্র বিশ্লেষণ করো।

১৪৫৩ সালে তুর্কি শাসকদের হাতে কনস্টান্টিনোপলের পতন ঘটলে সেখানকার জ্ঞানীগুণী পণ্ডিতবর্গ ইতালিতে চলে যান। তাঁদের উদ্যোগে পঞ্চদশ শতকে ইতালির বৌদ্ধিক জগতে যে বৈপ্লবিক অগ্রগতি ঘটে তা 'ইউরোপীয় নবজাগরণ'  নামে পরিচিত। উনবিংশ শতকের প্রথমদিকে বাংলাদেশে আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার ঘটলে বাঙালির ভাবজগতেরও এরকম এক বৌদ্ধিক আন্দোলন শুরু হয়, যা  ‘ বাংলার নবজাগরণ ’  নামে পরিচিত। বিতর্ক বা মতপার্থক্য : তবে এই বৌধিক আন্দোলন ও অগ্রগতিকে প্রকৃত অর্থে নবজাগরণ বলা যায় কিনা তা নিয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে বিতর্ক রয়েছে। নবজাগরণের পক্ষে যুক্তি : ঐতিহাসিক  যদুনাথ সরকার, সুশোভন সরকার  প্রমূখ একে নবজাগরণ বলে স্বীকার করে নিয়েছেন। অন্যদিকে,  অমলেশ ত্রিপাঠী  একে নবজাগরণ বলে স্বীকার করলেও তার সঙ্গে  ইতালির নবজাগরণের মূলগত পার্থক্য  রয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন। তাঁর মতে, ইতালিতে স্বাধীন ও স্বনির্ভর বুর্জোয়া শ্রেণি নবজাগরণে নেতৃত্ব দিয়েছিল। আর বাংলার নবজাগরণের নেতৃত্ব দিয়েছিল চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে সৃষ্ট বাংলার জমিদার শ্রেণী। অর্থাৎ এই নবজাগরণ মূলত জমিদার ও তাদের সহযোগী মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল।

ডেভিড হেয়ার স্মরণীয় কেন?

উনিশ শতকে বাংলায় পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে ডেভিড হেয়ার গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। মূলত তারই উদ্যোগে ১৮১৭ সালে 'ক্যালকাটা স্কুল বুক সোসাইটি' গড়ে ওঠে, পাশ্চাত্য শিক্ষার বিস্তারে সহায়তা করার জন্য বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় পাঠ্যপুস্তক রচনা, প্রকাশ ও বিতরণের উদ্দেশ্যে তিনি এই প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। তাঁরই সক্রিয় উদ্যোগে ১৮১৭ সালে গড়ে ওঠে হিন্দু কলেজ, ১৮১৮ সালে প্রতিষ্ঠা করেন 'পটলডাঙ্গা একাডেমি' যা বর্তমানে 'হেয়ার স্কুল' নামে পরিচিত। তাঁর উদ্যোগেই প্রতিষ্ঠিত হয় সিমলা স্কুল ও আরপুলি স্কুল নামে আরও দুটি স্কুল।  নারীশিক্ষার প্রসারেও তিনি বিভিন্ন উদ্যোগ নেন। কলকাতা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়ার জন্য তিনি এদেশীয় ছাত্রদের বিভিন্নভাবে উৎসাহিত করেন। এইভাবে বাংলা তথা ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার বিস্তারে তার সর্বস্ব ত্যাগ করে তিনি ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন। বিকল্প প্রশ্ন : ১) বাংলায় শিক্ষা সংস্কারের ইতিহাসে ডেভিড হেয়ার কী কারণে খ্যাতি লাভ করে আছেন? (পূর্ণমান - ৪ ) ২) উনিশ শতকে বাংলায় পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে ডেভিড হেয়ারের ভূমিকা কী ছিল? (পূর্ণমান - ৪ ) 📗 পূর্ণমান ৪-এর (৪ নং প্রশ্নের) উত্

সতীদাহ প্রথা বিরোধী আন্দোলনে রামমোহন রায়ের ভূমিকা কি ছিল?

সতীদাহ প্রথা বিরোধী আন্দোলনে রামমোহন রায়ের ভূমিকা  উনবিংশ শতকেও বাংলা তথা ভারতের হিন্দুসমাজে সতীদাহ প্রথা নামে একটি অমানবিক প্রথা প্রচলিত ছিল। এই প্রথা অনুসারে স্বামীর মৃত্যুর পর তার বিধবা স্ত্রীকে স্বামীর জ্বলন্ত চিতায় পুড়িয়ে মারা হত। এই নিষ্ঠুর প্রথার অবসান ঘটানোর ক্ষেত্রে রামমোহন রায় গুরত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।   জনমত গঠন: 1. লোকশিক্ষার মাধ্যমে সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধে মানুষকে সচেতন করার উদ্দেশ্যে তিনি ১৮১৮ খ্রি. এই প্রথার বিরুদ্ধে একটি বাংলা পুস্তিকা প্রকাশ করেন। 2. মনুসংহিতা-সহ বিভিন্ন হিন্দুশাস্ত্র ও ধর্মগ্রন্থ থেকে উদ্ধৃতি নিয়ে প্রমান করার চেষ্টা করেন যে সতীদাহ প্রথা হিন্দুধর্ম ও শাস্ত্র বিরোধী। 3. তিনি নিজ-পরিচালিত 'সম্বাদ কৌমুদি'-সহ বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় নিয়মিত সতীদাহ বিরোধী প্রবন্ধ প্রকাশ করতেন। সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ : রামমোহন নতুন গভর্নর জেনারেল লর্ড বেন্টিঙ্ক-এর কাছে সতীদাহপ্রথা রদের অনুরোধ জানিয়ে বাংলার বিশিষ্ট নাগরিকদের স্বাক্ষর সম্বলিত একটি আবেদনপত্র জমা দেন।  সতীদাহ প্রথার অবসান: তাঁর আবেদনে সাড়া দিয়ে উদারমনষ্ক বেন্টিঙ্ক ১৮২৯ সালের ৪ঠা ডিসেম্বর ১৭ নং রেগুলেশন এক্ট প

গ্রামবার্তা প্রকাশিকা' পত্রিকা থেকে উনিশ শতকের বাংলার কী ধরনের সমাজচিত্র পাওয়া যায়?

  অথবা, টীকা লেখা : গ্রামবার্তা প্রকাশিকা পত্রিকা। উনিশ শতকে বাংলায় প্রকাশিত সংবাদপত্রগুলির মধ্যে গ্রামবার্তা প্রকাশিকা' পত্রিকা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসে এটি প্রথম প্রকাশিত হয়। এর প্রথম সম্পাদক ছিলেন হরিনাথ মজুমদার । এটি প্রথমে মাসিক পত্রিকা হিসেবে প্রকাশিত হলেও পরে পাক্ষিকও সাপ্তাহিক পত্রিকা হিসেবে প্রকাশিত হয়। প্রকাশক ও সম্পাদনা :  অবিভক্ত বাংলার কুষ্ঠিয়া জেলার কুমারখালি গ্রাম থেকে ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে হরিনাথ মজুমদারে সম্পদনায় প্রকাশিত হয়। প্রথমে এটি মাসিক পত্রিকা রূপে প্রকাশিত হলেও ১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দে পাক্ষিক ও ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দে সাপ্তাহিক পত্রিকা রূপে প্রকাশিত হতে থাকে। গ্রামীণ সাংবাদিকতা :  গ্রামীণ সংবাদ পরিবেশন করাই ছিল তার লক্ষ্য। গ্রামের পথে পথে ঘুরে ঘুরে যে সমস্ত সংবাদ তিনি সংগ্রহ করতেন তা এই পত্রিকাতে প্রকাশিত হত। গ্রামবার্তা প্রকাশিকায় তৎকালীন সমাজিক চিত্র : গ্রামবার্তা প্রকাশিকা' পত্রিকা থেকে সমসাময়িককালের সমাজ সম্পর্কে জানা যায়। ১) সমাজে নারীদের অবস্থা :  ‘গ্রামবার্তা প্রকাশিকা' পত্রিকা থেকে সমাজে নারীদের দুরবস্থা সম

জাতীয়তাবোধের বিকাশে দীনবন্ধু মিত্রের নীলদর্পণ নাটকটির গুরুত্ব লেখ।

অথবা, নীলদর্পণ নাটকে সমকালীন বাংলার সমাজ ব্যবস্থার যে চিত্র ফুটে উঠেছে তা সংক্ষেপে লেখ। ভূমিকা: বাংলা তথা ভারতের জাতীয়তাবোধের বিকাশে যে সমস্ত সাহিত্য কীর্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল তার মধ্যে দীনবন্ধু মিত্র রচিত নীলদর্পণ নাটকটি অন্যতম। এর বিষয়বস্তু ছিল নীল চাষীদের উপর নীলকর সাহেবদের নির্মম শোষণ, পীড়ন ও অত্যাচার। পটভূমি ও প্রকাশকাল: উনিশ শতকে বাংলার চাষীদের নীলচাষে বাধ্য করা হলে খাদ্যশস্য উৎপাদন ব্যাহত হয় এবং চাষিরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। ফলে ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে অত্যাচারিত নীল চাষীরা নীলকরদের বিরুদ্ধে 'নীল বিদ্রোহ' শুরু করেন। এই আন্দোলনের পটভূমিকায় ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে দীনবন্ধু মিত্র ' কস্যচিৎ পথিকস্য ' ছদ্মনামে 'নীলদর্পণ' নাটকটি রচনা করেন। সামাজিক প্রতিফলন (গুরুত্ব) : এই নাটকে  নদীয়ার গুয়াতলী মিত্র পরিবারের বিপর্যয়ের কাহিনীকে কেন্দ্র করে রচিত নাটকটিতে নীলকর উড সাহেব, প্রতিবাদী চরিত্র তোরাপ, কাজের মেয়ে আদুরি, সাদাসিধে ননীমাধব চরিত্রগুলির মাধ্যমে সমসাময়িক পরিস্থিতির জীবন্ত চিত্র উপস্থাপিত হয়েছে। i] নীলকরদের শোষণ: এই নাটকে বাংলার নীলচাষীদের বলপূর

উনিশ শতকে বাংলায় শিক্ষা সংস্কার - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা কী ছিলো ?

উনিশ শতকে বাংলায় শিক্ষা সংস্কার - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা  নারী শিক্ষার প্রসারে বিদ্যাসার উদ্দ্যেশ্য ও উপলব্ধি : ঊনিশ শতকের প্রথমভাগেও বাংলাদেশে নারী-শিক্ষাকে সুনজরে দেখা হত না । মনে করা হত, মেয়েরা লেখাপড়া শিখলে তার স্বামীর অমঙ্গল হবে । বিদ্যাসাগর বুঝেছিলেন এই ধারণা না ভাঙতে পারলে এবং নারী-শিক্ষার প্রসার ঘটাতে না পারলে সমাজের অর্ধাংশ শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত থেকে যাবে । এবং তা সমাজের অগ্রগতির প্রতি প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে ।  কর্মসূচী ও পরিকল্পনা গ্রহণ : নারী-শিক্ষার সপক্ষে প্রচার  সরকারকে নারী-শিক্ষার প্রসারে আগ্রহী করে তোলা  নারী-শিক্ষার প্রসারে মেয়েদের জন্য বিদ্যালয় স্থাপনের জন্য ব্যক্তিগত উদ্যোগ গ্রহণ করা  ব্রিটিশ সরকারকেও এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে উৎসাহিত করা  শিক্ষার প্রসারের জন্য উপযুক্ত পুস্তক রচনায় হাত দেওয়া   কর্মসূচীর বাস্তবায়ন : প্রথমেই তিনি নারী-শিক্ষার প্রসারের প্রয়োজনীয়তা প্রচারের উদ্দ্যেশ্যে বাংলার বিভিন্ন জেলায় ‘স্ত্রীশিক্ষা বিধায়নী সম্মিলনী’ প্রতিষ্ঠা করেন ।  ১৮৪৯ সালে ড্রিংকওয়াটার বিটন (বেথুন) এর সহযোগিতায় ‘হিন্দু বালিকা বিদ্যালয়’ (নেটিভ ফিমেল স্কুল) প্রতিষ্ঠা করেন ।

টীকা লেখ : প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যবাদী দ্বন্দ্ব

১৮১৩ সালের ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ভারতবর্ষের শিক্ষার উন্নতিকল্পে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে বার্ষিক এক লক্ষ টাকা খরচের নির্দেশ দেয়। এই নির্দেশ কে কেন্দ্র করে শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিবর্গ প্রাচ্যবাদী ও পাশ্চাত্যবাদী এই দু'ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। প্রাচ্যবাদী ও পাশ্চাত্যবাদী দ্বন্দ্ব : যে সমস্ত শিক্ষা অনুরাগী এই সময় পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারের জন্য এই অর্থ ব্যয় করার পক্ষে ছিলেন তাদেরকে বলা হতো পাশ্চাত্যবাদী বা অ্যাংলিসিস্ট । অন্যদিকে যারা প্রাচ্য শিক্ষায় কথা সনাতন শিক্ষার প্রসারের জন্য মতামত প্রকাশ করেন তাদেরকে বলা হয় প্রাচ্যবাদী বা ওরিয়েন্টালিস্ট । আর এই দুই গোষ্ঠীর মতদ্বৈততা বা দ্বন্দ্বকে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য বাদী দ্বন্দ্ব নামে অভিহিত করা হয়। জনশিক্ষা কমিটি গঠন : এই দ্বন্দ্ব মেটানোর জন্য ১৮২৩ সালে গঠন করা হয় জনশিক্ষা কমিটি বা কমিটি অফ পাবলিক ইনস্ট্রাকশন। কিন্তু এই কমিটির ঐক্যমতে উপনীত হতে ব্যর্থ হন। প্রাচ্যবাদীদের মতামত : প্রাচ্যবাদীরা মনে করতেন প্রাচ্য শিক্ষায় প্রকৃত শিক্ষা এর মধ্যেই দেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি জড়িয়ে রয়েছে ।তাই এই শিক্ষা প্রসারের জন্য সরকারি বরাদ্দ অর্থ খরচ করা উচ

হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকা থেকে সমকালীন বাংলার কোন চিত্র ফুটে ওঠে?

হিন্দু পেট্রিয়ট পত্রিকা ঊনিশ শতকে বাংলা থেকে প্রকাশিত যেসব পত্রপত্রিকায় সমকালীন অর্থ-সামাজিক অবস্থার প্রতিফলন ঘটেছে সেগুলির মধ্যে সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য হলো 'হিন্দু পেট্রিয়ট'।  ঊনিশ শতকের  হিন্দু পেট্রিয়ট পত্রিকায় বাংলার আর্থ-সামাজিক  চিত্র  :   সমকালীন বাংলার আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনের বিভিন্ন চিত্র  ' হিন্দু পেট্রিয়ট '  পত্রিকায় ফুটে উঠেছে। সামাজিক প্রতিফলন :   🔺মেয়েদের বাল্যবিবাহ, পুরুষদের বহুবিবাহ, মদ্যপান প্রভৃতি সামাজিক কু-প্রথার বিরুদ্ধে নানা সংবাদ এই পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। 🔺এছাড়া বিধবা বিবাহের সমর্থন এবং নারী শিক্ষার প্রসারে এই পত্রিকার প্রচার চালায়। অর্থনৈতিক প্রতিফলন : ১) বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ ছিল কৃষিজীবী। এই পত্রিকা চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের কুফল, জমিদারি শোষণ ও অত্যাচার, কৃষিজীবীদের অভাব অভিযোগ জনসমক্ষে তুলে ধরে। ২) নীলকর সাহেবদের অত্যাচার, জোরপূর্বক নীল চাষ করানো, দাদন নিতে বাধ্য করা এবং নিরক্ষর সহজ-সরল চাষীদের কীভাবে ঠকানো হতো তার কথাও তুলে ধরা হয়। ৩) এছাড়া সরকারি শিক্ষা নীতি বিষয়ে পাশ্চাত্য শিক্ষিত মধ্যবিত্ত সম্প্রদায়ের বেকারত্বের কথা ত

'হুতোম প্যাঁচার নকশা' গ্রন্থে সমকালীন সমাজ ও সংস্কৃতির যে চিত্র ফুটে উঠেছে তা সংক্ষেপে লেখ।

ভূমিকা :   হুতোম প্যাঁচার নকশা। লেখক কালীপ্রসন্ন সিংহ। 'হুতুম পেঁচা' ছদ্মনামে এই গ্রন্থে তিনি তীব্র ব্যঙ্গ-বিদ্রুপের কষাঘাতে কলকাতার বাবু সমাজের জীবন্ত প্রতিচ্ছবি, উৎসব অনুষ্ঠান, সামাজিক কুপ্রথা প্রচলিত ভাষায় ও হাস্যরসাত্মক ভঙ্গিতে তুলে ধরেছেন। সমকালীন সমাজ- সংস্কৃতির চিত্র : তাই এই গ্রন্থের মাধ্যমে উনিশ শতকে বাংলার সমাজ ব্যবস্থা ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে একটি সুস্পষ্ট ছবি আমরা পেতে পারি। ১) সামাজিক উৎসব : গ্রন্থটি প্রথম ভাগে আলোচিত হয়েছে কলকাতার চড়ক পার্বন, বারোয়ারি পুজো, ছেলে ধরা, সাতপেয়ে ঘোড়া, লখনৌ এর বাদশা ইত্যাদি সামাজিক উৎসবের কথা। গ্রন্থটির দ্বিতীয় ভাগে রথ দুর্গোৎসব রামলীলা প্রভৃতি উৎসবগুলির সুন্দরভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। ২) সামাজিক শ্রেণীবিন্যাস :   গ্রন্থটিতে কালীপ্রসন্ন সিংহ তৎকালীন সমাজের উচ্চ শ্রেণীভূক্ত ব্যক্তিদের তিনটি ভাগে ভাগ করেছেন। ক) প্রথম ভাগে রয়েছেন ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত মানুষ যারা সাহেবি চালচলনের অন্ধ অনুকরণকারী।  খ) দ্বিতীয় ভাগে রয়েছেন ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত কিন্তু সাহেবি চালচলনের অন্ধ অনুকরণ নয় এমন ব্যক্তিরা। গ) আর তৃতীয় ভাগে রয়েছেন ইংরেজি না

নারী সমাজের কল্যাণে 'বামাবোধনী' পত্রিকার গুরুত্ব লেখো।

ভূমিকা:   উনিশ শতকে বাংলাভাষায় যে সমস্ত পত্রিকা প্রকাশিত হয়, তার মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হল  'বামাবোধনী পত্রিকা' । এটি ছিল বাংলার 'বামা' অর্থাৎ নারী সমাজের উন্নয়নের জন্য বাংলা ভাষায় প্রকাশিত প্রথম মাসিক পত্রিকা । উদ্যেশ্য : এই পত্রিকার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল :  ১) সামাজিক কুসংস্কার এর বিরোধিতা করা ২) নারীদের মধ্যে শিক্ষার প্রসার ঘটানো ৩) নারীর সচেতনতা বৃদ্ধি করে তাদের অধিকার ও মর্যাদা আদায়ের যোগ্য করে তোলা ৪) নারীদের মনের কথা তুলে ধরা। অবদান বা গুরুত্ব : ব্রাহ্মনেতা কেশব চন্দ্র সেন এর অনুপ্রেরণায় উমেশচন্দ্র দত্ত প্রকাশিত এই পত্রিকা নারী সমাজের কল্যাণে  গুরুত্বপূর্ণণ অবদান রেখেছে। ১) নারী শিক্ষার দাবি : এই পত্রিকার প্রথম সংখ্যায় নারী শিক্ষার দাবি জানানো হয় এবং শিক্ষাদানের বিষয়ের তালিকা প্রকাশ করা হয়। সেই সঙ্গে এ বিষয়ে পুরুষদের এগিয়ে আসাাার আহ্বান জানানো হয়। ২) সামাজিক কুসংস্কার দূর করা : এই পত্রিকার মাধ্যমে বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ, পণপ্রথা ইত্যাদিির বিরোধিতা করা হয় এবং সমাজে এর কুফল তুলে ধরা হয়। ৩) নারী প্রগতির চিন্তা : এই পত্রিকা নারীকে শিক্ষিত, যুক্তিবাদী ও

গ্রামবার্তা প্রকাশিকা' পত্রিকা থেকে উনিশ শতকের বাংলার কী ধরনের সমাজচিত্র পাওয়া যায়?

অথবা, টীকা লেখা : গ্রামবার্তা প্রকাশিকা পত্রিকা। উনিশ শতকে বাংলায় প্রকাশিত সংবাদপত্রগুলির মধ্যে গ্রামবার্তা প্রকাশিকা' পত্রিকা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসে এটি প্রথম প্রকাশিত হয়। এর প্রথম সম্পাদক ছিলেন হরিনাথ মজুমদার । এটি প্রথমে মাসিক পত্রিকা হিসেবে প্রকাশিত হলেও পরে পাক্ষিকও সাপ্তাহিক পত্রিকা হিসেবে প্রকাশিত হয়। প্রকাশক ও সম্পাদনা : অবিভক্ত বাংলার কুষ্ঠিয়া জেলার কুমারখালি গ্রাম থেকে ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে হরিনাথ মজুমদারে সম্পদনায় প্রকাশিত হয়। প্রথমে এটি মাসিক পত্রিকা রূপে প্রকাশিত হলেও ১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দে পাক্ষিক ও ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দে সাপ্তাহিক পত্রিকা রূপে প্রকাশিত হতে থাকে। গ্রামীণ সাংবাদিকতা : গ্রামীণ সংবাদ পরিবেশন করাই ছিল তার লক্ষ্য। গ্রামের পথে পথে ঘুরে ঘুরে যে সমস্ত সংবাদ তিনি সংগ্রহ করতেন তা এই পত্রিকাতে প্রকাশিত হত। গ্রামবার্তা প্রকাশিকায় তৎকালীন সমাজিক চিত্র : গ্রামবার্তা প্রকাশিকা' পত্রিকা থেকে সমসাময়িককালের সমাজ সম্পর্কে জানা যায়। ১) সমাজে নারীদের অবস্থা : ‘গ্রামবার্তা প্রকাশিকা' পত্রিকা থেকে সম

হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকা থেকে কী ধরনের সমাজচিত্র পাওয়া যায় ?

যেসব সংবাদপত্র থেকে উনিশ শতকের বাংলাদেশের সমাজ জীবনের প্রতিফলন পাওয়া যায় তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকা। এই পত্রিকা থেকে বাংলাদেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক শোষণ, কুসংস্কার, কৃষক বিদ্রোহ, নীলকর সাহেবদের অত্যাচার ইত্যাদি বিষয়ে জানা যায়। ১) সেসময় সমাজে প্রচলিত কৌলীন্য প্রথা, বহুবিবাহ প্রথার বিরুদ্ধে এই পত্রিকায় বিভিন্ন প্রবন্ধ লেখা হয়। এ ছাড়া নারীশিক্ষা ও বিধবাবিবাহের পক্ষেও প্রচার চালানো হয়। ২) দরিদ্র ভারতীয় কৃষকদের উপর করভার,শশাষণ, কৃষকদের প্রতিবাদ, বিক্ষোভ-বিদ্রোহ, তাদের দারিদ্র্য প্রভৃতির কাহিনি এই পত্রিকা তুলে ধরে।

কাকে কেন পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারের 'ম্যাগনাকার্টা' বলা হয়?

উত্তর : ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার বিস্তারের জন্য  লর্ড হার্ডিঞ্জ  ১৮৪৪ সালে ঘোষণা করেন যে, সরকারি চাকরিতে ইংরেজি ভাষা জানা ব্যক্তিদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। এই কাজকে আরও উৎসাহিত করার জন্য ১৮৫৪ সালে কোম্পানির বোর্ড অফ কন্ট্রোলের সভাপতি  চার্লস উড  একটি নির্দেশনামা প্রকাশ করেন। (এই নির্দেশনামা  'উডের ডেসপ্যাস'  নামে পরিচিত।) এই নির্দেশনামায় প্রকাশিত হওয়ার ফলে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে বহু স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এই পর্বেই ১) কোলকাতা, বোম্বাই ও মাদ্রাজে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়। ২) একটি পৃথক শিক্ষাদপ্তর প্রতিষ্ঠা হয়। ৩) শিক্ষক-শিক্ষন বিদ্যালয় স্থাপন করা। ৪) প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। আর এই কারণেই এই নির্দেশনামাকে 'ম্যাগনাকার্টা বা মহাসনদ বলা হয়। 

উডের ডেসপ্যাচ কী?

উত্তর : ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার বিস্তারের জন্য লর্ড হার্ডিঞ্জ ১৮৪৪ সালে ঘোষণা করেন যে, সরকারি চাকরিতে ইংরেজি ভাষা জানা ব্যক্তিদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। এই কাজকে আরও উৎসাহিত করার জন্য ১৮৫৪ সালে কোম্পানির বোর্ড অফ কন্ট্রোলের সভাপতি চার্লস উড একটি নির্দেশনামা প্রকাশ করেন। এই নির্দেশনামা 'উডের ডেসপ্যাস' নামে পরিচিত। এই নির্দেশনামায় সুপারিশগুলি হল - ১) কোলকাতা, বোম্বাই ও মাদ্রাজে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করতে হবে। ২) একটি পৃথক শিক্ষাদপ্তর প্রতিষ্ঠা করা। ৩) শিক্ষক-শিক্ষন বিদ্যালয় স্থাপন করা। ৪) প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা। ৫) বিদ্যালয়গুলিতে সরকারি অনুদান দেওয়া। ৬) মাতৃভাষায় বৃত্তিশিক্ষার ব্যবস্থা করা। ৭) স্ত্রীশিক্ষার ব্যবস্থা করা।

বহুল পঠিত প্রশ্ন-উত্তর এখানে

সাঁওতাল বিদ্রোহের কারণ ও ফলাফল আলোচনা করো

অথবা           টীকা লেখা:- সাঁওতাল বিদ্রোহ  উনবিংশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে যে সমস্ত উপজাতি বিদ্রোহ হয়েছিল ।তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সাঁওতাল বিদ্রোহ। ব্রিটিশ সরকারের উপনিবেশিক শাসন বজায় রাখার জন্য,  ব্রিটিশ সরকার যে সমস্ত ভূমি সংস্করণ করেছিল তার  প্রভাব ভারতীয় উপজাতিদের মধ্যে ব্যাপক ভাবে প্রতিফলিত হয়েছিল।  তাই শেষ পর্যন্ত 1855 খ্রিস্টাব্দে সাঁওতালরা বিদ্রোহ করতে বাধ্য হয় । যা সাঁওতাল বিদ্রোহ নামে পরিচিত।    সাঁওতাল বিদ্রোহের কারণ বিহারের রাজমহল থেকে পশ্চিমবঙ্গে বিস্তীর্ণ  অঞ্চলের  শান্তিপ্রিয় সাঁওতালরা বিভিন্ন কারণে ব্রিটিশদের উপর রেগে গিয়েছিল। যা হলো নিম্নরুপ:-  ক) জমির উপর ব্রিটিশদের অধিকার :- সাঁওতালরা জঙ্গল পরিষ্কার করে  জমি তৈরি করে  চাষবাস শুরু করলে । ব্রিটিশ সরকার সাঁওতালদের কাছে  এমন বিপুল হারে রাজস্বের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। যা সাঁওতালরা জমি ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।    খ) সাঁওতালদের সর্বস্বান্ত :- ব্রিটিশ সরকার  ভূমিরাজস্ব ছাড়াও অন্যান্য কর ও ঋণের দায়ভার সাঁওতালদের উপর চাপিয়ে দেয় । ফলে সাঁওতালরা সর্বস্বান্ত হয়ে পড়ে।  গ)   সাঁওতালদের ঋণগ্রস্ত :- 50 থেকে 500 হরে

কে, কবে, কেন ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন?

ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ প্রতিষ্ঠার কারণ  লর্ড ওয়েলেসলি ১৮০০ সালে কলকাতায় ‘ ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ’  প্রতিষ্ঠা করেন। কারণ, তারা মনে করতেন, ১) ভারতীয়রা আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষা পেলে ভবিষ্যতে তাদের মধ্যে  স্বাধীনতার স্পৃহা জেগে উঠবে  এবং এদেশে কোম্পানির শাসন সংকটের মধ্যে পড়বে। ২) এছাড়া ভারতীয়দের  ধর্মভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ করলে  তারা ব্রিটিশ সরকারের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে উঠতে পারে। ৩) এই আশঙ্কা থেকেই মূলত তারা  আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষার পরিবর্তে সংস্কৃত ও আরবি-ফারসি শিক্ষার ওপর গুরুত্ব  আরোপ করেন এবং  ধর্মভিত্তিক সনাতন শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে ইংরেজ রাজকর্মচারীদের ভারতীয়দের ধর্ম-সমাজ-সংস্কৃতি বিষয়ে শিক্ষিত করে  এদেশে কোম্পানির শাসনকে সুদৃঢ় করার পরিকল্পনা করেন। মূলত, এই কারণেই লর্ড ওয়েলেসলি ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ গড়ে তোলেন।

খুৎকাঠি প্রথা কী?

খুঁৎকাঠি বা কুন্তকট্টি হল এক ধরনের ভূমি ব্যবস্থা যা মুন্ডা সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রচলিত ছিল। এই ব্যবস্থায় জমিতে ব্যক্তি মালিকানার পরিবর্তে যৌথ মালিকানা স্বীকৃত ছিল। ব্রিটিশ সরকার এই ব্যবস্থা বাতিল করে ব্যক্তি মালিকানা চালু করলে মুন্ডাদের জমি গুলি বহিরাগত জমিদার, ঠিকাদার ও মহাজনদের হাতে চলে যায়। ফলে মুন্ডারা বিদ্রোহ ঘোষণা করে। অবশেষে ১৯০৮ সালে ছোটনাগপুর প্রজাস্বত্ব আইনের মাধ্যমে ব্রিটিশ সরকার মুন্ডাদের এই প্রথা (ভূমি ব্যবস্থা) ফিরিয়ে আনে। অন্যান্য প্রশ্ন : ভারতীয় অরণ্য আইন কী? ব্রিটিশ সরকার কেন অরণ্য আইন পাশ করেছিল? বারাসাত বিদ্রোহ কী? বাঁশেরকেল্লা কী? খুৎকাঠি প্রথা কী? দাদন প্রথা কী? সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহ ব্যর্থ হয় কেন? ওয়াহাবি আন্দোলনের লক্ষ্য আদর্শ কী ছিল? ফরাজি আন্দোলন কি ধর্মীয় পুনর্জাগরণের আন্দোলন? তিতুমীর স্মরণীয় কেন? দুদুমিয়া স্মরণীয় কেন? দামিন-ই-কোহ কী? মুন্ডা বিদ্রোহের লক্ষ্য কী ছিল?  নীল বিদ্রোহে হরিশচন্দ্র মুখার্জীর ভূমিকাকী ছিল? নীল বিদ্রোহে খ্রিস্টান মিশনারীদের ভূমিকা কী ছিল? 'দার-উল-হারব' এবং 'দার-উল- ইসলাম' কথার অর্থ কী? নীলকররা নীল চাষীদের উপর

নতুন সামাজিক ইতিহাস কী?

ইতিহাস হল মানব সভ্যতার ক্রমবিবর্তনের ধারাবাহিক বিবরণ । অতীতে ইতিহাসে শুধুমাত্র রাজা-মহারাজা কিংবা অভিজাতদের কথা লেখা থাকতো। বর্তমানে এই ধারায় পরিবর্তন এসেছে। এখন এখানে সাধারণ মানুষ, নিম্নবর্গীয় সমাজ, এমনকি প্রান্তিক অন্তজদের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয় জীবনের বিবর্তনের কথা ও সমানভাবে গুরুত্ব পাচ্ছে। আধুনিক ইতিহাসচর্চার এই ধারা  নতুন সামাজিক ইতিহাস  নামে পরিচিত।

নীল বিদ্রোহের কারণ কী? এই বিদ্রোহের বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব লেখ।

নীল বিদ্রোহ : কারণ, বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব : আঠারো শতকে ইংল্যান্ডের শিল্প বিপ্লব হয়। ফলে সেখানে বস্ত্র শিল্পের প্রয়োজনে নীলের চাহিদা বাড়ে। ১৮৩৩ সালে সনদ আইন এর ফলে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একচেটিয়া বাণিজ্যের অধিকার লুপ্ত হলে কোম্পানির কর্মচারিরা ব্যক্তিগতভাবে নীল চাষে নেমে পড়ে। অধিক মুনাফার আশায় এইসব কর্মচারীরা নীল চাষীদের উপর সীমাহীন শোষণ ও অত্যাচার শুরু করে। এই শোষণ ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে নীল চাষিরা হাজার ১৮৫৯ সালে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। এই বিদ্রোহ নীল বিদ্রোহ নামে খ্যাত।  নীল বিদ্রোহের কারণ  (পটভূমি ) : নীল বিদ্রোহের পিছনে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ লক্ষ্য করা যায়। ১) কৃষকের ক্ষতি: নীল চাষের চাষের যে খরচ হতো মিল বিক্রি করে চাষির সে খরচ উঠতো না। ফলে চাষীরা ক্ষতিগ্রস্ত হতো। ২) খাদ্যশস্যের অভাব:  নীল চাষ করতে গিয়ে কৃষকেরা খাদ্যশস্যের উৎপাদন প্রয়োজন মতো করতে পারত না। কারণ নীলকর সাহেবরা চাষীদের নীল চাষে বাধ্য করতেন। ফলে চাষির ঘরে খাদ্যাভাব দেখা দেয়। ৩) নীলকরদের অত্যাচার :  চাষিরা নীল চাষ করতে অস্বীকার করলে নীলকর সাহেবরা তাদের উপর নির্মম অত্যাচার। ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে

ইলবার্ট বিল কি?

লর্ড রিপন ভারতে আসার আগে কোন ভারতীয় বিচারকরা কোন অভিযুক্ত ইংরেজের বিচার করতে পারত না। এই বৈষম্য দূর করতে লর্ড রিপনের পরামর্শে তার আইন সচিব ইলবার্ট একটি বিলের খসড়া রচনা করেন। এই  খসড়া বিলে ভারতীয় বিচারকদের ইংরেজ অভিযুক্তের বিচার করার অধিকার দেওয়া হয়। এই খসড়া বিলই ইলবার্ট বিল (১৮৮৩) নামে পরিচিত। এই বিলের পক্ষে এবং বিপক্ষে তীব্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়। ঐতিহাসিক রমেশচন্দ্র মজুমদার বলেন, ইলবার্ট বিল আন্দোলন ছিল ভারতীয় জাতীয়তাবাদের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। বিকল্প প্রশ্ন : কতসালে ইলবার্ট বিল পাস হয়? এর উদ্দেশ্য কী ছিল? অন্যান্য প্রশ্ন : বিশ্লেষণমূলক প্রশ্ন । প্রশ্নের মান - ৪ (সাত-আট বাক্যে উত্তর)   ইলবার্ট বিল কী? এই বিলের পক্ষে বিপক্ষে কী প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছিল? ইলবার্ট বিল আন্দোলনের গুরুত্ব লেখো। ব্যাখ্যামূলক প্রশ্ন । প্রশ্নের মান - ৮ (পনের-ষোলো বাক্যে উত্তর) ইলবার্ট বিল আন্দোলন বলতে কী বোঝ? এই আন্দোলনের তাৎপর্য কী ছিল? 

১৮৫৭ সালের বিদ্রোহের চরিত্র ও প্রকৃতি আলোচনা করো:

১৮৫৭ খ্রীষ্টাব্দের বিদ্রোহের প্রকৃতি: ১৮৫৭ খ্রীষ্টাব্দের বিদ্রোহের প্রকৃতি নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতবিরোধ আছে. এক পক্ষের ঐতিহাসিকরা বলেন, এটি ছিল নিছক সিপাহী বিদ্রোহ। অপরপক্ষ বলেন, এটি ছিল জাতীয় আন্দোলন। তা ছাড়াও কেউ কেউ আবার এই বিদ্রোহকে ভারতের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম, সামন্ততান্ত্রিক প্রতিবাদ, কৃষক বিদ্রোহ, মুসলিম চক্রান্ত প্রভৃতি নানা নাম অভিহিত করেছেন। ১) সিপাহী বিদ্রোহ:   ইংরেজ ঐতিহাসিক চার্লস রেক্স, হোমস, এবং ভারতীয়দের মধ্যে কিশোরীচাঁদ মিত্র, দুর্গাদাস বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহকে নিছক সিপাহী বিদ্রোহ বলেছেন। তাঁদের বক্তব্য - ক)১৮৫৭ সালের বিদ্রোফের চালিকাশক্তি ছিলেন সিপাহীরাই। তাদের অসন্তোষ থেকেই বিফ্রহের সূচনা হয়েছিল। খ) এই বিদ্রোহে ভারতীয় জাতীয় চেতনার অগ্রদূত শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণী যোগদান করেনি বা ভারতের সমস্ত অঞ্চলের রাজারা আন্দোলনকে সমর্থন করেনি। ২) জাতীয় আন্দোলন: ঐতিহাসিক নর্টন, জন কে, কার্ল মার্কস প্রমুখ ১৮৫৭ খ্রীষ্টাব্দের বিদ্রোহকে জাতীয় বিদ্রোহ বলে অভিহিত করেছেন। তাঁদের মতে , ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের জনগণ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে আন্দোলনে যোগদান করেছিল; বিদ্রোহীরা

মানুষ, প্রকৃতি ও শিক্ষার সমন্বয় বিষয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চিন্তাধারা বিশ্লেষণ করো।

রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাদর্শন ও জীবনদর্শনের প্রধান এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো প্রকৃতি। তাঁর মতে, প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থার একটি বড় ত্রুটি হল, প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে শিক্ষার বিচ্ছিন্নতা। আর এজন্য আমাদের দেশের শিক্ষা শুধু অসম্পূর্ণই নয়, যান্ত্রিক এবং হৃদয়হীনও বটে। শিক্ষা ও তার লক্ষ্য : তাঁর মতে, শিক্ষা হলো বাইরের প্রকৃতি ও অন্ত:প্রকৃতির মধ্যে সমন্বয় সাধন। এই সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে জাতির উপযোগী, দক্ষ ও কল্যাণকামী সদস্য হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলাই হলো শিক্ষার লক্ষ্য। লক্ষ্য পূরণের উপায় : তাঁর মতে, এই লক্ষ্য পূরণের জন্য একজন শিশুর প্রকৃতির সান্নিধ্যে এসে তার দেহ মন সুসংগঠিত করতে হয়। এটা করলেই সে পরমসত্তাকে উপলব্ধি করতে পারে। লক্ষ্য পূরণের উদ্যোগ : শান্তিনিকেতনের ভাবনা : ১) শান্তিনিকেতন প্রতিষ্ঠা : এই কারণেই তিনি প্রাচীন তপবনের শিক্ষার আদর্শ অনুপ্রাণিত হয়ে শান্তিনিকেতন স্থাপন করেছিলেন। এখানে শিক্ষক ও শিক্ষার্থী প্রকৃতির স্নিগ্ধ ও সুশীতল পরিবেশে বসবাস করে শিক্ষা দান ও শিক্ষা গ্রহণ সম্পন্ন করতে পারে। ২) হিতৈষী তহবিল তৈরি : পল্লীগ্রামের মানুষের কল্যাণে এবং কৃষির উন্নতির জন্য গড়ে তোলেন হিতৈষী তহবি

শিক্ষার চুঁইয়ে পড়া নীতি' বলতে কী বোঝ?

'শিক্ষার চুঁইয়ে পড়া নীতি' বলতে কী বোঝ? লর্ড বেন্টিং-এর আইন সচিব টমাস ব্যাবিংটন মেকলে  ১৮৩৫  সালে ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারের দাবি জানিয়ে একটি প্রস্তাব দেন যা  'মেকলে মিনিটস'  নামে পরিচিত। এই প্রস্তাবে পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রবর্তনের স্বপক্ষে যুক্তি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, এদেশের উচ্চ ও মধ্যবিত্তদের মধ্যে ইংরেজি শিক্ষার প্রসার ঘটবে এবং তাদের দ্বারা তা চুইয়ে ক্রমশ সাধারণ দেশবাসীর মধ্যে ছড়িয়ে পড়বে। ফলে ভারতীয়রা রুচি, মত, নৈতিকতা ও বুদ্ধিমত্তায় ইংরেজদের মত হয়ে উঠবে। ইংরেজি শিক্ষার প্রসারের উদ্দেশ্যে মেকলের নেওয়া এই নীতি   ' চুঁইয়ে পড়া নীতি'   নামে পরিচিত। 

তিন আইন কী?

 তিন আইন কী ব্রাহ্ম সমাজ আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ফলাফল হল ' তিন আইন'   পাস হওয়া।  ১৮৬৬ সালে কেশবচন্দ্র সেনের নেতৃত্বে ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজ বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ ও অসবর্ণ বিবাহ বিষয়ে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তোলেন। এই আন্দোলনের প্রভাবে ব্রিটিশ সরকার উৎসাহিত হয় এবং  ১৮৭২  সালে একটি আইন প্রণয়ন করে। এই আইনের ফলে  বাল্যবিবাহ  ও  বহুবিবাহ  প্রথা নিষিদ্ধ এবং   অসবর্ণ বিবাহ  বৈধ বলে ঘোষণা করা হয়। বিবাহ সংক্রান্ত এই তিনটি বিষয়কে কেন্দ্র করে তৈরি এই আইন ইতিহাসে ' তিন আইন'  নামে পরিচিত।