ভূমিকা: উনিশ শতকে বাংলাভাষায় যে সমস্ত পত্রিকা প্রকাশিত হয়, তার মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হল 'বামাবোধনী পত্রিকা'। এটি ছিল বাংলার 'বামা' অর্থাৎ নারী সমাজের উন্নয়নের জন্য বাংলা ভাষায় প্রকাশিত প্রথম মাসিক পত্রিকা।
উদ্যেশ্য :
এই পত্রিকার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল :
১) সামাজিক কুসংস্কার এর বিরোধিতা করা
২) নারীদের মধ্যে শিক্ষার প্রসার ঘটানো
৩) নারীর সচেতনতা বৃদ্ধি করে তাদের অধিকার ও মর্যাদা আদায়ের যোগ্য করে তোলা
৪) নারীদের মনের কথা তুলে ধরা।
অবদান বা গুরুত্ব :
ব্রাহ্মনেতা কেশব চন্দ্র সেন এর অনুপ্রেরণায় উমেশচন্দ্র দত্ত প্রকাশিত এই পত্রিকা নারী সমাজের কল্যাণে গুরুত্বপূর্ণণ অবদান রেখেছে।
১) নারী শিক্ষার দাবি : এই পত্রিকার প্রথম সংখ্যায় নারী শিক্ষার দাবি জানানো হয় এবং শিক্ষাদানের বিষয়ের তালিকা প্রকাশ করা হয়। সেই সঙ্গে এ বিষয়ে পুরুষদের এগিয়ে আসাাার আহ্বান জানানো হয়।
২) সামাজিক কুসংস্কার দূর করা : এই পত্রিকার মাধ্যমে বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ, পণপ্রথা ইত্যাদিির বিরোধিতা করা হয় এবং সমাজে এর কুফল তুলে ধরা হয়।
৩) নারী প্রগতির চিন্তা : এই পত্রিকা নারীকে শিক্ষিত, যুক্তিবাদী ও বিজ্ঞানমনস্ক করে তোলার জন্য রামমোহন রায়, বিদ্যাসাগর, জ্যোতিবা ফুলে প্রমুখের চিন্তা ধারা গুরুত্ব সহকারে তুলে ধরে।
৪) নারী জাতিকে উৎসাহ দান : এই পত্রিকা গুরুত্বসহকারে নারীদের গল্প কবিতা ইত্যাদি প্রকাশ করে তাদের উৎসাহিত করে। এক্ষেত্রে তাদের সাফল্য, কৃতিত্ব, রাজনীতিতে তাদের অংশগ্রহণ ইত্যাদি বিষয়ও গুরুত্বসহকারে আলোচিত হত।
পত্রিকার সীমাবদ্ধতা :
এভাবে পত্রিকাটি ঊনিশ শতকে বাংলার নারী সমাজের উন্নতির চেষ্টা করলেও তার কিছু সীমাবদ্ধতা লক্ষ্য করা গেছে। যেমন -
১) পত্রিকাটি মূলত উচ্চবর্ণের নারীদের মধ্যে প্রচারিত হয়
২) হিন্দু নারী ছাড়া সমাজের অন্য ধর্মের নারীদের কথা এখানে স্থান পায়নি।
৩) কলকাতা ও মফস্বল কেন্দ্রিক এই পত্রিকার প্রভাব গ্রামাঞ্চলে পড়েনি।
৪) এছাড়া পত্রিকাটির পাঠিকা সংখ্যাও ছিল খুবই সীমিত।
মূল্যায়ন :
এই সমস্ত সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও এই পত্রিকাটি নারী মুক্তি ও নারী কল্যাণের ক্ষেত্রে ছিল একটি উজ্জ্বল দীপশিখা। কারণ, এই পত্রিকা ছাড়া সমকালীন আর কোন পত্রিকা এমন উদ্যোগ নেয় নি। তাই শিক্ষা প্রসারে নারী সমাজকে সচেতন করার ক্ষেত্রে এই পত্রিকার অবদান অনস্বীকার্য।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন