১৮৫৭ খ্রীষ্টাব্দের বিদ্রোহের প্রকৃতি:
১৮৫৭ খ্রীষ্টাব্দের বিদ্রোহের প্রকৃতি নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতবিরোধ আছে. এক পক্ষের ঐতিহাসিকরা বলেন, এটি ছিল নিছক সিপাহী বিদ্রোহ। অপরপক্ষ বলেন, এটি ছিল জাতীয় আন্দোলন। তা ছাড়াও কেউ কেউ আবার এই বিদ্রোহকে ভারতের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম, সামন্ততান্ত্রিক প্রতিবাদ, কৃষক বিদ্রোহ, মুসলিম চক্রান্ত প্রভৃতি নানা নাম অভিহিত করেছেন।
১) সিপাহী বিদ্রোহ:
ইংরেজ ঐতিহাসিক চার্লস রেক্স, হোমস, এবং ভারতীয়দের মধ্যে কিশোরীচাঁদ মিত্র, দুর্গাদাস বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহকে নিছক সিপাহী বিদ্রোহ বলেছেন। তাঁদের বক্তব্য -
ক)১৮৫৭ সালের বিদ্রোফের চালিকাশক্তি ছিলেন সিপাহীরাই। তাদের অসন্তোষ থেকেই বিফ্রহের সূচনা হয়েছিল।
খ) এই বিদ্রোহে ভারতীয় জাতীয় চেতনার অগ্রদূত শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণী যোগদান করেনি বা ভারতের সমস্ত অঞ্চলের রাজারা আন্দোলনকে সমর্থন করেনি।
২) জাতীয় আন্দোলন:
ঐতিহাসিক নর্টন, জন কে, কার্ল মার্কস প্রমুখ ১৮৫৭ খ্রীষ্টাব্দের বিদ্রোহকে জাতীয় বিদ্রোহ বলে অভিহিত করেছেন। তাঁদের মতে , ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের জনগণ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে আন্দোলনে যোগদান করেছিল; বিদ্রোহীরা দ্বিতীয় বাহাদুর শাহকে সম্রাট ঘোষণা করে ভারতে এক নতুন শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে সচেষ্ট হয়েছিলেন।
৩) ভারতের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম:
স্বাধীনতা সংগ্রামী বীর সাভারকার ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহকে ভারতের প্ররথম স্বাধীনতা সংগ্রাম বলে অভিহিত করেছেন।
৪) সামন্ততান্ত্রিক বিদ্রোহ:
১৮৫৭ খ্রীষ্টাব্দের বিদ্রোহের কারণ হিসাবে অনেকেই সামন্তদের অসন্তোষকে চিহ্নিত করেছেন। ড. রমেশচন্দ্র মজুমদার একে সামন্তদের মৃত্যুকালীন আর্তনাদ বলে চিহ্নিত করেছেন।
৫) মুসলিম চক্রান্ত:
ঐতিহাসিক এই এইচ কুরেশি ও সৈয়দ মঈদুল হোক ১৮৫৭ খ্রীষ্টাব্দের বিদ্রোহকে মুসলিম চক্রান্ত বলে অভিহিত করেছেন। তারা এই বিদ্রোহে মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় বাহাদুর শাহের পুনঃপ্রতিষ্ঠা লক্ষ্য করে এরূপ মন্তব্য করেছেন।
মূল্যায়ন:
হীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় এবং অধ্যাপক সুশোভন সরকার এই বিদ্রোহকে জাতীয় সংগ্রাম বলেই মনে করেন। তাঁরা বলেন, এই বিদ্রোহের প্রকৃতি নিয়ে বিতর্ক থাকলেও বিদ্রোহীদের দেশের প্রতি ভালোবাসার কোনো অভাব ছিলো না।
তা ছাড়া, এই বিদ্রোহ শুধুমাত্র সিপাহীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিলোনা, এতে ভারতবর্ষের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষও শামিল হয়েছিল।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন