সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পোস্টগুলি

প্রশ্নের মান - ৪ লেবেল থাকা পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

আনন্দমঠ উপন্যাসটি কীভাবে জাতীয় চেতনার প্রসার ঘটিয়েছিল?

জাতীয় চেতনার প্রসারে  আনন্দমঠ উপন্যাস : উনিশ শতকের ভারতীয়় জাতীয়তাবোধের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেছেছিলেন বিভিন্ন লেখক ও সাহিত্যিক। এ বিষয়ে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ও তাঁর  'আনন্দমঠ' উপন্যাসের  অবদান অবিস্মরণীয়। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের 'আনন্দমঠ'-এর অবদান : আঠারো শতকের বাংলার ছিয়াত্তরের মন্বন্তর ও সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহের পটভূমিতে রচিত বঙ্কিমচন্দ্রের ' আনন্দমঠ' উপন্যাসটি  প্রগাঢ় প্রভাব ফেলেছিল জাতীয়তাবাদীদের ওপর : ১) আনন্দমঠ-এর সন্তানদলের উচ্চারিত 'বন্দেমাতরাম মন্ত্র' দেশবাসীকে মুক্তি আন্দোলনে যোগ দিতে গভীরভাবে অনুপ্রাণিত করেছিল। যদু ভট্ট সুরারোপিত এই গান ক্রমে বিপ্লবীদের কাছে জাতীয় সংগীতে পরিণত হয়। ২) এই গ্রন্থে দেশমাতৃকার অতীত ( মা যা ছিলেন ), বর্তমান ( মা যা হয়েছেন ) ও ভবিষ্যত ( মা যা হবেন ) মূর্তিগুলি তুলে ধরে বঙ্কিমচন্দ্র স্বৈরাচারী ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে দেশবাসীকে বিদ্রোহের আহ্বান জানান। ৩) এই মূর্তির মাধ্যমে শোষণ মুক্তা, কল্যাণীয়া ও জগদ্ধাত্রী দেশমাতৃকার মূর্তিকে তুলে ধরে তিনি জাতিকে শুনিয়েছেন, 'দেশমাতা হলেন মা, দেশপ্রেম হল

বিজ্ঞান চর্চার ইতিহাসে ডাক্তার মহেন্দ্রলাল সরকার স্মরণীয় কেন

  বাংলা তথা ভারতে পাশ্চাত্য বিজ্ঞান শিক্ষার প্রসারে মহেন্দ্রলাল সরকার বাংলা একাজে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন। একজন ডাক্তার ও বিদ্যার্থী হিসেবে তিনি বাঙালি জাতিকে অন্ধ বিশ্বাস এর পরিবর্তে যুক্তিবাদের পথে চালিত করতে উদ্যোগী হন। এ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসা : ১৮৬১ সালে আই এম এস এবং ১৮৬৩ সালে তিনি এমডি ডিগ্রী লাভ করেন। অসাধারণ রোগ নির্ণয় ও নিরাময়ের ক্ষমতা অচিরেই তাকে জনপ্রিয় করে তোলে। হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা : প্রথম দিকে তিনি অ্যালোপ্যাথি চর্চা করলেও পরবর্তীকালে রাজেন্দ্রলাল দত্ত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর প্রেরণায় তিনি হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় মনোনিবেশ করেন এবং অচিরেই চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাসে বিশ্বের অন্যতম সেরা হোমিওপ্যাথি বিশেষজ্ঞ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেন। বৈজ্ঞানিক সংগঠক: বৈজ্ঞানিক সংগঠক হিসেবে তিনি খ্যাতি লাভ করেছেন ‘ ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কালটিভেশন অফ সায়েন্স’  (IACS) বা ‘ ভারতবর্ষীয় বিজ্ঞান সভা’  প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। ১৮৭৬ সালে তৈরি এই প্রতিষ্ঠানের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল পদার্থ ও রসায়ন বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় মৌলিক গবেষণা করা। গবেষণাপত্র প্রকাশ: এই বিজ্ঞান সংস্থার গবেষণাপত্র প্রকাশ

ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থার ত্রুটিগুলি সংক্ষেপে লেখ

ভারতের ঔপনিবেশিক শিক্ষা বিস্তারের ফলে নব যুগের সূচনা ঘটলেও এই শিক্ষা ব্যবস্থা ত্রুটিমুক্ত ছিল না। ফলে ভারতীয়দের সার্বিক বিকাশ ব্যর্থ হয়।  কেরানি তৈরীর শিক্ষা : এই শিক্ষা ব্যবস্থায় ইংরেজদের প্রশাসনিক কাজ করার উপযুক্ত কর্মচারী তৈরি করার আগ্রহ যতটা ছিল, সাহিত্য বা ভাষা শিক্ষার সাহায্যে শিক্ষার্থীদের একটি নান্দনিক মন গড়ে তোলার আগ্রহ সেখানে মোটেই ছিল না। মাতৃভাষায় অবহেলা : এই শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষার মাধ্যম ইংরেজি হওয়ায় সাধারণ মানুষের কাছে শিক্ষার দারুন মুক্ত হয়নি। সেইসঙ্গে ভারতীয় ভাষাগুলির বিকাশের পথ রুদ্ধ হয়ে যায়। ভারতীয় আধ্যাত্মিকতা ও দর্শনের অনুপস্থিতি : এই শিক্ষা প্রণালীর মাধ্যমে পাশ্চাত্যের জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা হলেও তার সঙ্গে ভারতীয় আধ্যাত্মিকতা ও দর্শনের কোন যোগাযোগ ছিল না। ফলে তা প্রাণহীন হয়ে পড়ে। খ্রিস্ট ধর্মের প্রচার প্রাধান্য পায় : খ্রিস্টান মিশনারীদের উদ্যোগে ভারতীয়দের মধ্যে শিক্ষার বিস্তার ঘটলেও সেখানে খ্রিস্ট ধর্মের প্রচার বেশি প্রাধান্য পেত। প্রাথমিক শিক্ষায় অবহেলা : ঔপনিবেশিক শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রাথমিক শিক্ষার প্রসারে প্রয়োজনীয় নজর দেয়া হয়নি। ফলে দেশে ন

উনিশ শতকে আধুনিক বিজ্ঞান চর্চার প্রসারে বসুবিজ্ঞান মন্দিরের অবদান ব্যাখ্যা করো।

উনিশ শতকে আধুনিক বিজ্ঞান চর্চার প্রসারে বসুবিজ্ঞান মন্দির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছিল। আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু ১৯১৭ সালে কলকাতায় এই সংস্থাটি গড়ে তোলেন। বসু বিজ্ঞান মন্দির প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য : ইংল্যান্ডের রয়েল সোসাইটির অনুকরণে জগদীশচন্দ্র বসু ভারতে এই বিজ্ঞান গবেষণাগার টি গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেন। উদ্দেশ্য হল বিজ্ঞানের অগ্রগতি ও জ্ঞানের প্রসার ঘটানো। বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা স্থাপন : উদ্ভিদবিদ্যার সাথে সাথে পদার্থবিদ্যা রসায়ন মাইক্রোবায়োলজি বায়োকেমিস্ট্রি বায়োফিজিক্স পরিবেশ বিজ্ঞান ইত্যাদি বিষয়েও এখানে গবেষণা শুরু হয়। উদ্ভিদের প্রাণের অস্তিত্ব প্রমাণ : জগদীশচন্দ্র বসুর উদ্ভিদের উদ্দীপনা সংক্রান্ত কাজ, যা আজ সিস্টেম জীববিদ্যা নামে পরিচিত, এই বিজ্ঞানকেন্দ্রকে খ্যাতির শিখরে নিয়ে গিয়েছিল। এখানেই তিনি প্রমাণ করেছিলেন যে গাছের চেতনা আছে, সে কষ্ট বা যন্ত্রণা পায়। বৈজ্ঞানিক যন্ত্র আবিষ্কার : উদ্ভিদের উত্তেজনা উত্তেজনার বেগ মাপার যন্ত্র রিজোনাষ্ট রেকর্ডার বৃদ্ধি মাপার যন্ত্র ক্রেস্কোগ্রাফ এবং অন্যান্য যন্ত্র যেমন ফটো মিটার,স্ফিগমোগ্রাফ ইত্যাদি যন্ত্র আবিষ্কার করে তিনি খ্যাতি লাভ ক

ছাপাখানার ইতিহাসে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী স্মরণীয় কেন?

উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী ছিলেন একাধারে একজন সাহিত্যিক চিত্রকর সঙ্গীতজ্ঞ বাদ্যযন্ত্র বাদক এবং প্রখ্যাত মুদ্রণ শিল্পী। সেই সঙ্গে একজন সফল উদ্যোগপতি। ব্লক তৈরীর জ্ঞানার্জন ও ব্যবসা শুরু: তিনি সর্বপ্রথম ব্লক তৈরী বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করেন এবং ১৮৯৫ সালে ব্লক তৈরির ব্যবসা শুরু করেন। ব্লক তৈরির বিষয়ে প্রবন্ধ প্রকাশ : এসময় তিনি ব্লক তৈরির বিভিন্ন কলাকৌশল নিয়ে প্রবন্ধ লেখা শুরু করেন যা ইংল্যান্ডের বিখ্যাত মুদ্রণ বিষয়ক পত্রিকা ‛পেনরোজ অ্যানুয়াল ভল্যুম'-এ প্রকাশিত হয়। ছাপাখানা তৈরিতে উদ্যোগ : ১৯১৩ সালে উপেন্দ্রকিশোর মুদ্রণ ব্যবসায় অর্থ বিনিয়োগ করেন এবং গড়ে তোলেন ‛ইউ এন রায় এন্ড সন্স‘ নামে একটি ছাপাখানা। এই ছাপাখানাটি দক্ষিণ এশিয়ার সর্বাধিক নিখুঁত মুদ্রণযন্ত্র হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছিল।  হাফটোন ব্লক উদ্ভাবন : উপেন্দ্রকিশোর ভারতে প্রথম হাফটোন ব্লক নির্মাণ পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন এবং  'রঙিন ব্লক' তৈরি ও তার ব্যবহারের সূচনা করেন। ইউরোপের এনগ্রেভিং মুদ্রণ পদ্ধতির সংস্কার করে তাকে আরও উন্নত করে তোলেন এবং পুত্র সুকুমার রায়কে ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাপার আধুনিক কলাকৌশল শেখার জন্য ভর্

উনিশ শতকে বাংলায় পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে ডেভিড হেয়ারের ভূমিকা কী ছিল?

  উনিশ শতকে বাংলায় পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে ডেভিড হেয়ার গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। মূলত তারই উদ্যোগে ১৮১৭ সালে 'ক্যালকাটা স্কুল বুক সোসাইটি' গড়ে ওঠে। পাশ্চাত্য শিক্ষার বিস্তারে সহায়তা করার জন্য বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় পাঠ্যপুস্তক রচনা, প্রকাশ ও বিতরণের উদ্দেশ্যে তিনি এই প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। শিক্ষার প্রসারের জন্য কম খরচে অথবা বিনামূল্যে ছাত্র-ছাত্রীদের বিতরনের জন্য এই প্রতিষ্ঠান প্রচুর পাঠ্যপুস্তক প্রকাশ করে। তাঁরই সক্রিয় উদ্যোগে ১৮১৭ সালে গড়ে ওঠে হিন্দু কলেজ। ১৮১৮ সালে প্রতিষ্ঠা করেন 'পটলডাঙ্গা একাডেমি' যা বর্তমানে 'হেয়ার স্কুল' নামে পরিচিত। তাঁর উদ্যোগেই প্রতিষ্ঠিত হয় সিমলা স্কুল ও আরপুলি স্কুল নামে আরও দুটি স্কুল।  নারীশিক্ষার প্রসারেও তিনি বিভিন্ন উদ্যোগ নেন। কলকাতা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়ার জন্য তিনি এদেশীয় ছাত্রদের বিভিন্নভাবে উৎসাহিত করেন। এইভাবে নতুন নতুন বিদ্যালয় স্থাপন ও শিক্ষার প্রসারের জন্য নিজের যাবতীয় অর্থ ব্যয় করে তিনি শেষ জীবনে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন। বাংলা তথা ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার বিস্তারে তার সর্বস্ব ত্যাগ করে তিনি ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন। বিকল

ভারতমাতা চিত্রের বৈশিষ্ট্য কী? এই চিত্রটি ভারতের জাতীয়তাবাদী চেতনা সৃষ্টিতে কীভাবে কতটা সাহায্য করেছে?

'ভারতমাতা' চিত্রের বৈশিষ্ট্য কী? ভারতমাতা চিত্রটি শিল্পী অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এক অসামান্য সৃষ্টি। বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনের সময় তিনি 'বঙ্গমাতা' নামে এই চিত্রটি অংকন করেছিলেন। হিন্দুদের ধনসম্পদের অধিকারিণী দেবী লক্ষীর অনুকরণে চতুর্ভুজা এই চিত্রটি ভগিনী নিবেদিতা  ভারত-মাতা নামে অভিহিত করেন। এই চিত্রটির বৈশিষ্ট্য (তাৎপর্য) হল, ভারতমাতার পরনে গৈরিক বস্ত্র, যা ভারতীয় হিন্দু সংস্কৃতির ধারণাকে প্রকাশ করে।  তাঁর এক হাতে শস্য অর্থাৎ ধানের শিষ, যা তাঁর সন্তানের জন্য অন্ন সংস্থানের বার্তা প্রকাশ করে।  তাঁর দ্বিতীয় হাতে শ্বেতবস্ত্র। এটা সন্তানের জন্য মাযের পরিধান যোগানোর ইঙ্গিত করে।  তাঁর তৃতীয় হাতে পুথি বা পুস্তক অর্থাৎ বেদ। শিক্ষা দানের নিশ্চয়তা বিধান করছেন ।  চতুর্থ হাতে জপের মালা। দীক্ষা দানের নিশ্চয়তা বিধান করছেন। এভাবে এই চিত্রটি হয়ে উঠেছে সর্বার্থে ভারত মায়ের প্রতীক যে তাঁর সন্তানদের চার হাত দিয়ে আগলে রেখেছেন। এই চিত্র ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় ভারতীয়দের মধ্যে জাতীয়তাবাদী চেতনা সৃষ্টি করে।  বিকল্প প্রশ্ন : ভারতমাতা চিত্রটি ভারতের জাতীয়তাবাদী চেতনা সৃষ্টিতে কীভাবে কতটা স

সতীদাহ প্রথা বিরোধী আন্দোলনে রামমোহন রায়ের ভূমিকা কি ছিল?

সতীদাহ প্রথা বিরোধী আন্দোলনে রামমোহন রায়ের ভূমিকা  উনবিংশ শতকেও বাংলা তথা ভারতের হিন্দুসমাজে সতীদাহ প্রথা নামে একটি অমানবিক প্রথা প্রচলিত ছিল। এই প্রথা অনুসারে স্বামীর মৃত্যুর পর তার বিধবা স্ত্রীকে স্বামীর জ্বলন্ত চিতায় পুড়িয়ে মারা হত। এই নিষ্ঠুর প্রথার অবসান ঘটানোর ক্ষেত্রে রামমোহন রায় গুরত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।   জনমত গঠন: 1. লোকশিক্ষার মাধ্যমে সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধে মানুষকে সচেতন করার উদ্দেশ্যে তিনি ১৮১৮ খ্রি. এই প্রথার বিরুদ্ধে একটি বাংলা পুস্তিকা প্রকাশ করেন। 2. মনুসংহিতা-সহ বিভিন্ন হিন্দুশাস্ত্র ও ধর্মগ্রন্থ থেকে উদ্ধৃতি নিয়ে প্রমান করার চেষ্টা করেন যে সতীদাহ প্রথা হিন্দুধর্ম ও শাস্ত্র বিরোধী। 3. তিনি নিজ-পরিচালিত 'সম্বাদ কৌমুদি'-সহ বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় নিয়মিত সতীদাহ বিরোধী প্রবন্ধ প্রকাশ করতেন। সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ : রামমোহন নতুন গভর্নর জেনারেল লর্ড বেন্টিঙ্ক-এর কাছে সতীদাহপ্রথা রদের অনুরোধ জানিয়ে বাংলার বিশিষ্ট নাগরিকদের স্বাক্ষর সম্বলিত একটি আবেদনপত্র জমা দেন।  সতীদাহ প্রথার অবসান: তাঁর আবেদনে সাড়া দিয়ে উদারমনষ্ক বেন্টিঙ্ক ১৮২৯ সালের ৪ঠা ডিসেম্বর ১৭ নং রেগুলেশন এক্ট প

জাতীয়তাবোধের বিকাশে দীনবন্ধু মিত্রের নীলদর্পণ নাটকটির গুরুত্ব লেখ।

অথবা, নীলদর্পণ নাটকে সমকালীন বাংলার সমাজ ব্যবস্থার যে চিত্র ফুটে উঠেছে তা সংক্ষেপে লেখ। ভূমিকা: বাংলা তথা ভারতের জাতীয়তাবোধের বিকাশে যে সমস্ত সাহিত্য কীর্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল তার মধ্যে দীনবন্ধু মিত্র রচিত নীলদর্পণ নাটকটি অন্যতম। এর বিষয়বস্তু ছিল নীল চাষীদের উপর নীলকর সাহেবদের নির্মম শোষণ, পীড়ন ও অত্যাচার। পটভূমি ও প্রকাশকাল: উনিশ শতকে বাংলার চাষীদের নীলচাষে বাধ্য করা হলে খাদ্যশস্য উৎপাদন ব্যাহত হয় এবং চাষিরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। ফলে ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে অত্যাচারিত নীল চাষীরা নীলকরদের বিরুদ্ধে 'নীল বিদ্রোহ' শুরু করেন। এই আন্দোলনের পটভূমিকায় ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে দীনবন্ধু মিত্র ' কস্যচিৎ পথিকস্য ' ছদ্মনামে 'নীলদর্পণ' নাটকটি রচনা করেন। সামাজিক প্রতিফলন (গুরুত্ব) : এই নাটকে  নদীয়ার গুয়াতলী মিত্র পরিবারের বিপর্যয়ের কাহিনীকে কেন্দ্র করে রচিত নাটকটিতে নীলকর উড সাহেব, প্রতিবাদী চরিত্র তোরাপ, কাজের মেয়ে আদুরি, সাদাসিধে ননীমাধব চরিত্রগুলির মাধ্যমে সমসাময়িক পরিস্থিতির জীবন্ত চিত্র উপস্থাপিত হয়েছে। i] নীলকরদের শোষণ: এই নাটকে বাংলার নীলচাষীদের বলপূর

হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকা থেকে সমকালীন বাংলার কোন চিত্র ফুটে ওঠে?

হিন্দু পেট্রিয়ট পত্রিকা ঊনিশ শতকে বাংলা থেকে প্রকাশিত যেসব পত্রপত্রিকায় সমকালীন অর্থ-সামাজিক অবস্থার প্রতিফলন ঘটেছে সেগুলির মধ্যে সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য হলো 'হিন্দু পেট্রিয়ট'।  ঊনিশ শতকের  হিন্দু পেট্রিয়ট পত্রিকায় বাংলার আর্থ-সামাজিক  চিত্র  :   সমকালীন বাংলার আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনের বিভিন্ন চিত্র  ' হিন্দু পেট্রিয়ট '  পত্রিকায় ফুটে উঠেছে। সামাজিক প্রতিফলন :   🔺মেয়েদের বাল্যবিবাহ, পুরুষদের বহুবিবাহ, মদ্যপান প্রভৃতি সামাজিক কু-প্রথার বিরুদ্ধে নানা সংবাদ এই পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। 🔺এছাড়া বিধবা বিবাহের সমর্থন এবং নারী শিক্ষার প্রসারে এই পত্রিকার প্রচার চালায়। অর্থনৈতিক প্রতিফলন : ১) বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ ছিল কৃষিজীবী। এই পত্রিকা চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের কুফল, জমিদারি শোষণ ও অত্যাচার, কৃষিজীবীদের অভাব অভিযোগ জনসমক্ষে তুলে ধরে। ২) নীলকর সাহেবদের অত্যাচার, জোরপূর্বক নীল চাষ করানো, দাদন নিতে বাধ্য করা এবং নিরক্ষর সহজ-সরল চাষীদের কীভাবে ঠকানো হতো তার কথাও তুলে ধরা হয়। ৩) এছাড়া সরকারি শিক্ষা নীতি বিষয়ে পাশ্চাত্য শিক্ষিত মধ্যবিত্ত সম্প্রদায়ের বেকারত্বের কথা ত

'হুতোম প্যাঁচার নকশা' গ্রন্থে সমকালীন সমাজ ও সংস্কৃতির যে চিত্র ফুটে উঠেছে তা সংক্ষেপে লেখ।

ভূমিকা :   হুতোম প্যাঁচার নকশা। লেখক কালীপ্রসন্ন সিংহ। 'হুতুম পেঁচা' ছদ্মনামে এই গ্রন্থে তিনি তীব্র ব্যঙ্গ-বিদ্রুপের কষাঘাতে কলকাতার বাবু সমাজের জীবন্ত প্রতিচ্ছবি, উৎসব অনুষ্ঠান, সামাজিক কুপ্রথা প্রচলিত ভাষায় ও হাস্যরসাত্মক ভঙ্গিতে তুলে ধরেছেন। সমকালীন সমাজ- সংস্কৃতির চিত্র : তাই এই গ্রন্থের মাধ্যমে উনিশ শতকে বাংলার সমাজ ব্যবস্থা ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে একটি সুস্পষ্ট ছবি আমরা পেতে পারি। ১) সামাজিক উৎসব : গ্রন্থটি প্রথম ভাগে আলোচিত হয়েছে কলকাতার চড়ক পার্বন, বারোয়ারি পুজো, ছেলে ধরা, সাতপেয়ে ঘোড়া, লখনৌ এর বাদশা ইত্যাদি সামাজিক উৎসবের কথা। গ্রন্থটির দ্বিতীয় ভাগে রথ দুর্গোৎসব রামলীলা প্রভৃতি উৎসবগুলির সুন্দরভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। ২) সামাজিক শ্রেণীবিন্যাস :   গ্রন্থটিতে কালীপ্রসন্ন সিংহ তৎকালীন সমাজের উচ্চ শ্রেণীভূক্ত ব্যক্তিদের তিনটি ভাগে ভাগ করেছেন। ক) প্রথম ভাগে রয়েছেন ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত মানুষ যারা সাহেবি চালচলনের অন্ধ অনুকরণকারী।  খ) দ্বিতীয় ভাগে রয়েছেন ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত কিন্তু সাহেবি চালচলনের অন্ধ অনুকরণ নয় এমন ব্যক্তিরা। গ) আর তৃতীয় ভাগে রয়েছেন ইংরেজি না

নারী সমাজের কল্যাণে 'বামাবোধনী' পত্রিকার গুরুত্ব লেখো।

ভূমিকা:   উনিশ শতকে বাংলাভাষায় যে সমস্ত পত্রিকা প্রকাশিত হয়, তার মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হল  'বামাবোধনী পত্রিকা' । এটি ছিল বাংলার 'বামা' অর্থাৎ নারী সমাজের উন্নয়নের জন্য বাংলা ভাষায় প্রকাশিত প্রথম মাসিক পত্রিকা । উদ্যেশ্য : এই পত্রিকার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল :  ১) সামাজিক কুসংস্কার এর বিরোধিতা করা ২) নারীদের মধ্যে শিক্ষার প্রসার ঘটানো ৩) নারীর সচেতনতা বৃদ্ধি করে তাদের অধিকার ও মর্যাদা আদায়ের যোগ্য করে তোলা ৪) নারীদের মনের কথা তুলে ধরা। অবদান বা গুরুত্ব : ব্রাহ্মনেতা কেশব চন্দ্র সেন এর অনুপ্রেরণায় উমেশচন্দ্র দত্ত প্রকাশিত এই পত্রিকা নারী সমাজের কল্যাণে  গুরুত্বপূর্ণণ অবদান রেখেছে। ১) নারী শিক্ষার দাবি : এই পত্রিকার প্রথম সংখ্যায় নারী শিক্ষার দাবি জানানো হয় এবং শিক্ষাদানের বিষয়ের তালিকা প্রকাশ করা হয়। সেই সঙ্গে এ বিষয়ে পুরুষদের এগিয়ে আসাাার আহ্বান জানানো হয়। ২) সামাজিক কুসংস্কার দূর করা : এই পত্রিকার মাধ্যমে বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ, পণপ্রথা ইত্যাদিির বিরোধিতা করা হয় এবং সমাজে এর কুফল তুলে ধরা হয়। ৩) নারী প্রগতির চিন্তা : এই পত্রিকা নারীকে শিক্ষিত, যুক্তিবাদী ও

আধুনিক ইতিহাসচর্চায় শিল্পচর্চার ইতিহাস গুরুত্বপূর্ণ কেন?

আধুনিক ইতিহাসচর্চায় শিল্পচর্চার ইতিহাস শিল্পচর্চার ইতিহাস বলতে বোঝায় সঙ্গীত নৃত্য নাটক ও চলচ্চিত্রের ইতিহাকে। শিল্পচর্চার ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে উপনিবেশবাদ জাতীয়তাবাদ আন্তর্জাতিকতাবাদ ইত্যাদি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়। সঙ্গীতচর্চার ইতিহাস ও গুরুত্ব : ১) ভারতে প্রাচীনকাল থেকেই সংগীতের চর্চা চলে আসছে। সুলতানি ও মুঘল যুগেও নতুন ঘরানার সংগীতচর্চা শুরু হয়, যা ঐ যুগের সাংস্কৃতিক আবহকে তুলে ধরে। ২) জাতীয়তাবাদ বিকাশে সঙ্গীত চর্চা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ১৯০৫ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ' বাংলার মাটি বাংলার জল' এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। ৩) কাজী নজরুল ইসলামের ' কারার ঐ লৌহ কপাট' গানটি বিপ্লবী চেতনা জাগাতে বিশেষ ভূমিকা রেখেছিল। নৃত্যচর্চার ইতিহাস ও গুরুত্ব : শিল্পচর্চার একটি অন্যতম ধারা হলো নৃত্যকলা। প্রাচীনকাল থেকেই এর চর্চা চলে আসছে।  ১) প্রাচীন যুগে মন্দিরের বিগ্রহের সামনে নৃত্যরত নারীমুক্তির চিত্র দেখে তৎকালীন সমাজের ধর্ম ও সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল সম্পর্কে অবহিত হওয়া যায়। ২) প্রাচীন যুগ থেকে বর্তমান পর্যন্ত বিভিন্ন নৃত্যধারার পর্যালোচনা করলে ভারতীয় সমা

আধুনিক ইতিহাসচর্চার বৈচিত্র আলোচনা করো৷

  ইতিহাস হল মানব সভ্যতার ক্রমবিবর্তনের ধারাবাহিক বিবরণ। কিন্তু অতীতে ইতিহাসে শুধুমাত্র রাজা-মহারাজা কিংবা অভিজাতদের কথা লেখা থাকতো। বর্তমানে এই ধারায় পরিবর্তন এসেছে। এখন এখানে সাধারণ মানুষ, নিম্নবর্গীয় সমাজ, এমনকি প্রান্তিক অন্তজদের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয় জীবনের বিবর্তনের কথাও সমানভাবে গুরুত্ব পাচ্ছে। বিশ শতক থেকে ইতিহাসচর্চার এই ধারা 'আধুনিক ইতিহাসচর্চা' নামে পরিচিত।  এইভাবে সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে একদিকে যেমন বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে মানবজাতির অতীতকে ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ করার রেওয়াজ শুরু হয়েছে, সেই সঙ্গে নতুন নতুন বিষয় ইতিহাসের পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। আর এই কারণে ইতিহাসচর্চা হয়ে উঠেছে বৈচিত্রপূর্ণ। আধুনিক ইতিহাসচর্চার বৈচিত্ৰসমূহ : আধুনিক ইতিহাসচর্চার বৈচিত্ৰসমূহকে নিম্নলিখিতভাবে ব্যাখ্যা করা  যায়।  ১) নতুন সামাজিক ইতিহাস : বিশশতকে সমাজের উঁচুতলার মানুষের সাথে সাথে নিচুতলার মানুষের  জীবনযাপনের  কথা ইতিহাসের বিষয়বস্তু হয়ে ওঠে। এই ধরণের ইতিহাসচর্চা 'নতুন সামাজিক ইতিহাস' নামে পরিচিত। কার্ল মার্কস, মার্ক ব্লখ,  রনজিৎ গুহ প্রমুখ এই ধ

নতুন সামাজিক ইতিহাসচর্চার বৈশিষ্ট্য কী?

ইতিহাস হল মানব সভ্যতার ক্রমবিবর্তনের ধারাবাহিক বিবরণ । অতীতে ইতিহাসে শুধুমাত্র রাজা-মহারাজা কিংবা অভিজাতদের কথা লেখা থাকতো। বর্তমানে এই ধারায় পরিবর্তন এসেছে। এখন এখানে সাধারণ মানুষ, নিম্নবর্গীয় সমাজ, এমনকি প্রান্তিক অন্তজদের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয় জীবনের বিবর্তনের কথাও সমানভাবে গুরুত্ব পাচ্ছে। আধুনিক ইতিহাসচর্চার এই ধারা নতুন সামাজিক ইতিহাস নামে পরিচিত। নতুন সামাজিক ইতিহাসচর্চার বৈশিষ্ট্য : নতুন সামাজিক ইতিহাসের প্রধানত তিনটি ধারা লক্ষ্য করা যায়। এই ধারা তিনটি বিশ্লেষণ করলে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ১) মার্কসবাদী ধারা : উনিশ শতকে জার্মান দার্শনিক কার্ল মার্কস বলেন, সামান্য সংখ্যক ধনী মানুষ সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতি - সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করছে। এই ধনীদের বিরুদ্ধে যুগে যুগে সংখ্যাগরিষ্ঠ দরিদ্র শ্রেণির মানুষ সংগ্রাম করে আসছে। এই সংগ্রাম আসলে শ্রেণি সংগ্রাম । অতীতে শোষিত দরিদ্র শ্রেণির এই জীবন সংগ্রামের কথা ইতিহাসে জায়গা পেতো না। নতুন সামাজিক ইতিহাস চর্চায় এদের কথা গুরুত্ব পায়। এই ধারার ইতিহাসচর্চায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন কার্ল মার্কস,

নতুন সামাজিক ইতিহাসচর্চার কয়টি ধারা ও কী কী ? এই ধারাগুলির তুলনামূলক আলোচনা করো।

উত্তরটি টেক্সট আকারে পেতে এখানে ক্লিক করো । ডেক্সটপ মোডে দেখার জন্য এখানে ক্লিক করো ।

ইতিহাসের উপাদান হিসেবে কন্যা ইন্দিরা গান্ধীকে লেখা পিতা জহরলাল নেহরু চিঠিগুলির গুরুত্ব কী?

অথবা ইন্দিরা গান্ধীকে লেখা পিতা জহরলাল নেহরু চিঠিগুলির গুরুত্ব লেখ। আধুনিক ভারতের ইতিহাসের অন্যতম উপাদান হিসেবে নিঃসন্দেহে ব্যক্তিগত চিঠিপত্র যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। এরূপ একটি ব্যক্তিগত চিঠি পত্রের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল "লেটার্স ফ্রম আ ফাদার টু হিজ ডটার"। নিম্নে এই চিঠির গুরুত্ব আলোচনা করা হল : ১) চিঠিপত্র সেন্সর : গ্রন্থটির ভূমিকা থেকে জহরলাল নেহেরুর স্বাধীনতা সংগ্রাম ও কারাবরণের কথা যেমন জানা যায়, ঠিক সেরকমই সে সময় কারাগারে জেল বন্দির ঘন ঘন যে চিঠি লেখা যেত না সে সম্পর্কে অনেক তথ্য পাওয়া যায়। ২) পিতার উপদেশ: 1928 খ্রিস্টাব্দে জহরলাল নেহেরু এলাহাবাদের জেল থেকে তার দশ বছর বয়সী কন্যা ইন্দিরা গান্ধীকে যে 30 টি চিঠি লিখেছিলেন, সেই চিঠিতে কন্যার প্রতি একজন স্নেহময় পিতার অমূল্য তত্ত্বাবধান ও উপদেশ রয়েছে। ৩) অর্থনৈতিক দুর্দশা : এই চিঠিতে তিনি ভারতের অর্থনৈতিক বৈষম্য, খাদ্য সংকট, গরিবি প্রভৃতি ভারতবর্ষের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন এবং তার কারণও তুলে ধরেন। ৪) সভ্যতার প্রতিষ্ঠা : বুদ্ধি কিভাবে মানুষকে অন্যান্য প্রাণীদের চেয়ে চতুর ও শক্তিশালী করে তুলল, কিভাবে ধর্ম বিশ্বাস এর প্রচলন হল,

বিদ্রোহ অভ্যুত্থান ও বিপ্লবের মধ্যে তুলনামূলক আলোচনা কর?

বিদ্রোহ, অভ্যুত্থান ও বিপ্লবের মধ্যে তুলনামূলক আলোচনা কর? বিদ্রোহ অভ্যুত্থান ও বিপ্লব অনেকটা এক মনে হলেও বাস্তবে এদের মধ্যে কিছু প্রভেদ রয়েছে নিম্নে তা বিস্তারিত আলোচনা করা হল:- বিদ্রোহ বলতে  কী  বোঝ? প্রথমত,  বিদ্রোহ বলতে বোঝায় সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে মানুষের অসন্তোষ ।  দ্বিতীয়ত,  সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনের স্বৈরাচারী শাসনের অত্যাচার ও শোষণের বিরুদ্ধে মানুষের দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হলো বিদ্রোহ। তৃতীয়ত,  বিদ্রোহের ফলে সরকারের পরিবর্তন হয়না, নামমাত্র প্রশাসনিক সংস্কার হয় চতুর্থত,  বিদ্রোহে গণতন্ত্র ও প্রজাতন্ত্র প্রভৃতি আদর্শের কথা ওঠে না; মানুষের সাময়িক কোন সমস্যার প্রশ্নগুলি বড় হয়ে ওঠে। অভ্যুত্থান বলতে কী  বোঝ? প্রথমত , অভ্যুত্থানে মানুষের যোগাযোগ কম থাকে।মুষ্টিমেয় গোষ্ঠী বিশেষ বা ব্যক্তির প্রচেষ্টার মাধ্যমে এক্ষেত্রে ক্ষমতা লাভ ঘটে। দ্বিতীয়ত, অভ্যুত্থান হঠাৎ করে ঘটে তাই সরকারের নীতি বা শাসন এখানে গুরুত্ব পায় না। ক্ষমতা লাভই এখানে সর্বাধিক প্রাধান্য পায়।   তৃতীয়ত, অভ্যুত্থানের মাধ্যমে যে সরকার প্রতিষ্ঠিত হয় তাতে গণতন্ত্র ও প্রজাতন্ত্র প্রভ

ইতিহাসের উপাদান হিসেবে আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথা কেন গুরুত্বপূর্ণ?

ইতিহাসের উপাদান হিসেবে আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথা কেন গুরুত্বপূর্ণ? বর্তমান সময়ে ইতিহাস লেখার জন্য বিভিন্ন উপাদান ব্যবহার করতে হয় তার মধ্যে লিখিত অবদান হল   গুরত্বপূর্ন ।   লিখিত উপাদানের মধ্যে রয়েছে-  1.আত্মজীবনী    2. স্মৃতিকথা   এই দুটি থেকে বহু তথ্য পাওয়া যায় । তাই তৎকালীন ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে এগুলির গুরুত্ব অপরিসীম। আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথাগুলিও হল এক ধরনের সাহিত্য। লেখক তার চোখে দেখা বিভিন্ন ঘটনা ও নিজের অভিজ্ঞতার কথা এই জীবনীগ্রন্থে প্রকাশ করেন। আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথা গুরুত্বঃ- প্রথমত , সাধারণ মানুষের কথা, লেখক এর পারিপার্শিক পরিবেশ, কোন কোন ঘটনার বিবরণী প্রভৃতি ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে তথ্যের জোগান দেয়। দ্বিতীয়ত , রাজনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির বিভিন্ন ধর্মী ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। তৃতীয়ত, স্থানীয় ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে এই উপাদান সহায়ক ভূমিকা পালন করে। চতুর্থত, বৃহত্তম বা জাতীয় ইতিহাসের বহু উপেক্ষিত বিষয়ের উপর আলোকপাত করে। সীমাবদ্ধতাঃ-  যদিও এ প্রসঙ্গে বলতে হয় যেহেতু স্মৃতিকথা লেখক স্মৃতিপট থেকে সংগ্রহ করে আনেন তাই অনেক ক্ষেত্রে প্রকৃত ঘটনা এবং স্মৃতিকথায় বর্ণিত ঘটনায় অস

বারদৌলি সত্যাগ্রহ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও

অথবা টীকা লেখো বারদৌলি সত্যাগ্রহ। গুজরাটের সুরাট জেলার বারদৌলি তালুকের কৃষকরা ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ এক শক্তিশালী সত্যাগ্রহ আন্দোলন শুরু করে, যা বারদৌলি সত্যাগ্রহ নামে পরিচিত। কারণ ও প্রেক্ষাপট : হালি প্রথা - বারদৌলিতে সম্পন্ন কৃষকেরা কুনবি পাতিদার নামে পরিচিত ছিল। এদের অধীনে জমি চাষ করত ঋণদাস নামে এক ধরনের দাস শ্রমিক। এখানকার ৬০ শতাংশ মানুষ ছিল নিম্নবর্ণের কালিপারাজ বা কালো মানুষ। আর উচ্চবর্ণের মানুষেরা উজালিপারাজ বা সাদা মানুষ নামে পরিচিত ছিল। ‘হালি’ প্রথা অনুসারে এখানকার ভাগচাষিরা উচ্চবর্ণের মালিকদের অধীনে শ্রমিক হিসেবে কাজ করত। খাজনা বৃদ্ধি - সরকার বারদৌলির কৃষকদের ওপরে ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে খাজনার হার ২২ শতাংশ বৃদ্ধি করে। ফলে কৃষকদের মধ্যে ক্ষোভ সঞ্চারিত হয়। দুর্ভিক্ষ - ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে বারদৌলিতে ভয়ানক বন্যা হয়। ফলে কৃষকদের ফসল নষ্ট হওয়ায় সেখানে দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতি তৈরি হয়। ফলে কৃষকদের অবস্থা শোচনীয় হয়ে ওঠে। নেতৃত্ব : বারদৌলি সত্যাগ্রহে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য কৃষকরা গান্ধিবাদী কংগ্রেস নেতা বল্লভভাই প্যাটেলের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি এখানে কৃষকদের

বহুল পঠিত প্রশ্ন-উত্তর এখানে

সাঁওতাল বিদ্রোহের কারণ ও ফলাফল আলোচনা করো

অথবা           টীকা লেখা:- সাঁওতাল বিদ্রোহ  উনবিংশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে যে সমস্ত উপজাতি বিদ্রোহ হয়েছিল ।তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সাঁওতাল বিদ্রোহ। ব্রিটিশ সরকারের উপনিবেশিক শাসন বজায় রাখার জন্য,  ব্রিটিশ সরকার যে সমস্ত ভূমি সংস্করণ করেছিল তার  প্রভাব ভারতীয় উপজাতিদের মধ্যে ব্যাপক ভাবে প্রতিফলিত হয়েছিল।  তাই শেষ পর্যন্ত 1855 খ্রিস্টাব্দে সাঁওতালরা বিদ্রোহ করতে বাধ্য হয় । যা সাঁওতাল বিদ্রোহ নামে পরিচিত।    সাঁওতাল বিদ্রোহের কারণ বিহারের রাজমহল থেকে পশ্চিমবঙ্গে বিস্তীর্ণ  অঞ্চলের  শান্তিপ্রিয় সাঁওতালরা বিভিন্ন কারণে ব্রিটিশদের উপর রেগে গিয়েছিল। যা হলো নিম্নরুপ:-  ক) জমির উপর ব্রিটিশদের অধিকার :- সাঁওতালরা জঙ্গল পরিষ্কার করে  জমি তৈরি করে  চাষবাস শুরু করলে । ব্রিটিশ সরকার সাঁওতালদের কাছে  এমন বিপুল হারে রাজস্বের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। যা সাঁওতালরা জমি ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।    খ) সাঁওতালদের সর্বস্বান্ত :- ব্রিটিশ সরকার  ভূমিরাজস্ব ছাড়াও অন্যান্য কর ও ঋণের দায়ভার সাঁওতালদের উপর চাপিয়ে দেয় । ফলে সাঁওতালরা সর্বস্বান্ত হয়ে পড়ে।  গ)   সাঁওতালদের ঋণগ্রস্ত :- 50 থেকে 500 হরে

কে, কবে, কেন ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন?

ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ প্রতিষ্ঠার কারণ  লর্ড ওয়েলেসলি ১৮০০ সালে কলকাতায় ‘ ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ’  প্রতিষ্ঠা করেন। কারণ, তারা মনে করতেন, ১) ভারতীয়রা আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষা পেলে ভবিষ্যতে তাদের মধ্যে  স্বাধীনতার স্পৃহা জেগে উঠবে  এবং এদেশে কোম্পানির শাসন সংকটের মধ্যে পড়বে। ২) এছাড়া ভারতীয়দের  ধর্মভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ করলে  তারা ব্রিটিশ সরকারের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে উঠতে পারে। ৩) এই আশঙ্কা থেকেই মূলত তারা  আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষার পরিবর্তে সংস্কৃত ও আরবি-ফারসি শিক্ষার ওপর গুরুত্ব  আরোপ করেন এবং  ধর্মভিত্তিক সনাতন শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে ইংরেজ রাজকর্মচারীদের ভারতীয়দের ধর্ম-সমাজ-সংস্কৃতি বিষয়ে শিক্ষিত করে  এদেশে কোম্পানির শাসনকে সুদৃঢ় করার পরিকল্পনা করেন। মূলত, এই কারণেই লর্ড ওয়েলেসলি ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ গড়ে তোলেন।

খুৎকাঠি প্রথা কী?

খুঁৎকাঠি বা কুন্তকট্টি হল এক ধরনের ভূমি ব্যবস্থা যা মুন্ডা সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রচলিত ছিল। এই ব্যবস্থায় জমিতে ব্যক্তি মালিকানার পরিবর্তে যৌথ মালিকানা স্বীকৃত ছিল। ব্রিটিশ সরকার এই ব্যবস্থা বাতিল করে ব্যক্তি মালিকানা চালু করলে মুন্ডাদের জমি গুলি বহিরাগত জমিদার, ঠিকাদার ও মহাজনদের হাতে চলে যায়। ফলে মুন্ডারা বিদ্রোহ ঘোষণা করে। অবশেষে ১৯০৮ সালে ছোটনাগপুর প্রজাস্বত্ব আইনের মাধ্যমে ব্রিটিশ সরকার মুন্ডাদের এই প্রথা (ভূমি ব্যবস্থা) ফিরিয়ে আনে। অন্যান্য প্রশ্ন : ভারতীয় অরণ্য আইন কী? ব্রিটিশ সরকার কেন অরণ্য আইন পাশ করেছিল? বারাসাত বিদ্রোহ কী? বাঁশেরকেল্লা কী? খুৎকাঠি প্রথা কী? দাদন প্রথা কী? সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহ ব্যর্থ হয় কেন? ওয়াহাবি আন্দোলনের লক্ষ্য আদর্শ কী ছিল? ফরাজি আন্দোলন কি ধর্মীয় পুনর্জাগরণের আন্দোলন? তিতুমীর স্মরণীয় কেন? দুদুমিয়া স্মরণীয় কেন? দামিন-ই-কোহ কী? মুন্ডা বিদ্রোহের লক্ষ্য কী ছিল?  নীল বিদ্রোহে হরিশচন্দ্র মুখার্জীর ভূমিকাকী ছিল? নীল বিদ্রোহে খ্রিস্টান মিশনারীদের ভূমিকা কী ছিল? 'দার-উল-হারব' এবং 'দার-উল- ইসলাম' কথার অর্থ কী? নীলকররা নীল চাষীদের উপর

নতুন সামাজিক ইতিহাস কী?

ইতিহাস হল মানব সভ্যতার ক্রমবিবর্তনের ধারাবাহিক বিবরণ । অতীতে ইতিহাসে শুধুমাত্র রাজা-মহারাজা কিংবা অভিজাতদের কথা লেখা থাকতো। বর্তমানে এই ধারায় পরিবর্তন এসেছে। এখন এখানে সাধারণ মানুষ, নিম্নবর্গীয় সমাজ, এমনকি প্রান্তিক অন্তজদের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয় জীবনের বিবর্তনের কথা ও সমানভাবে গুরুত্ব পাচ্ছে। আধুনিক ইতিহাসচর্চার এই ধারা  নতুন সামাজিক ইতিহাস  নামে পরিচিত।

নীল বিদ্রোহের কারণ কী? এই বিদ্রোহের বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব লেখ।

নীল বিদ্রোহ : কারণ, বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব : আঠারো শতকে ইংল্যান্ডের শিল্প বিপ্লব হয়। ফলে সেখানে বস্ত্র শিল্পের প্রয়োজনে নীলের চাহিদা বাড়ে। ১৮৩৩ সালে সনদ আইন এর ফলে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একচেটিয়া বাণিজ্যের অধিকার লুপ্ত হলে কোম্পানির কর্মচারিরা ব্যক্তিগতভাবে নীল চাষে নেমে পড়ে। অধিক মুনাফার আশায় এইসব কর্মচারীরা নীল চাষীদের উপর সীমাহীন শোষণ ও অত্যাচার শুরু করে। এই শোষণ ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে নীল চাষিরা হাজার ১৮৫৯ সালে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। এই বিদ্রোহ নীল বিদ্রোহ নামে খ্যাত।  নীল বিদ্রোহের কারণ  (পটভূমি ) : নীল বিদ্রোহের পিছনে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ লক্ষ্য করা যায়। ১) কৃষকের ক্ষতি: নীল চাষের চাষের যে খরচ হতো মিল বিক্রি করে চাষির সে খরচ উঠতো না। ফলে চাষীরা ক্ষতিগ্রস্ত হতো। ২) খাদ্যশস্যের অভাব:  নীল চাষ করতে গিয়ে কৃষকেরা খাদ্যশস্যের উৎপাদন প্রয়োজন মতো করতে পারত না। কারণ নীলকর সাহেবরা চাষীদের নীল চাষে বাধ্য করতেন। ফলে চাষির ঘরে খাদ্যাভাব দেখা দেয়। ৩) নীলকরদের অত্যাচার :  চাষিরা নীল চাষ করতে অস্বীকার করলে নীলকর সাহেবরা তাদের উপর নির্মম অত্যাচার। ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে

ইলবার্ট বিল কি?

লর্ড রিপন ভারতে আসার আগে কোন ভারতীয় বিচারকরা কোন অভিযুক্ত ইংরেজের বিচার করতে পারত না। এই বৈষম্য দূর করতে লর্ড রিপনের পরামর্শে তার আইন সচিব ইলবার্ট একটি বিলের খসড়া রচনা করেন। এই  খসড়া বিলে ভারতীয় বিচারকদের ইংরেজ অভিযুক্তের বিচার করার অধিকার দেওয়া হয়। এই খসড়া বিলই ইলবার্ট বিল (১৮৮৩) নামে পরিচিত। এই বিলের পক্ষে এবং বিপক্ষে তীব্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়। ঐতিহাসিক রমেশচন্দ্র মজুমদার বলেন, ইলবার্ট বিল আন্দোলন ছিল ভারতীয় জাতীয়তাবাদের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। বিকল্প প্রশ্ন : কতসালে ইলবার্ট বিল পাস হয়? এর উদ্দেশ্য কী ছিল? অন্যান্য প্রশ্ন : বিশ্লেষণমূলক প্রশ্ন । প্রশ্নের মান - ৪ (সাত-আট বাক্যে উত্তর)   ইলবার্ট বিল কী? এই বিলের পক্ষে বিপক্ষে কী প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছিল? ইলবার্ট বিল আন্দোলনের গুরুত্ব লেখো। ব্যাখ্যামূলক প্রশ্ন । প্রশ্নের মান - ৮ (পনের-ষোলো বাক্যে উত্তর) ইলবার্ট বিল আন্দোলন বলতে কী বোঝ? এই আন্দোলনের তাৎপর্য কী ছিল? 

১৮৫৭ সালের বিদ্রোহের চরিত্র ও প্রকৃতি আলোচনা করো:

১৮৫৭ খ্রীষ্টাব্দের বিদ্রোহের প্রকৃতি: ১৮৫৭ খ্রীষ্টাব্দের বিদ্রোহের প্রকৃতি নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতবিরোধ আছে. এক পক্ষের ঐতিহাসিকরা বলেন, এটি ছিল নিছক সিপাহী বিদ্রোহ। অপরপক্ষ বলেন, এটি ছিল জাতীয় আন্দোলন। তা ছাড়াও কেউ কেউ আবার এই বিদ্রোহকে ভারতের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম, সামন্ততান্ত্রিক প্রতিবাদ, কৃষক বিদ্রোহ, মুসলিম চক্রান্ত প্রভৃতি নানা নাম অভিহিত করেছেন। ১) সিপাহী বিদ্রোহ:   ইংরেজ ঐতিহাসিক চার্লস রেক্স, হোমস, এবং ভারতীয়দের মধ্যে কিশোরীচাঁদ মিত্র, দুর্গাদাস বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহকে নিছক সিপাহী বিদ্রোহ বলেছেন। তাঁদের বক্তব্য - ক)১৮৫৭ সালের বিদ্রোফের চালিকাশক্তি ছিলেন সিপাহীরাই। তাদের অসন্তোষ থেকেই বিফ্রহের সূচনা হয়েছিল। খ) এই বিদ্রোহে ভারতীয় জাতীয় চেতনার অগ্রদূত শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণী যোগদান করেনি বা ভারতের সমস্ত অঞ্চলের রাজারা আন্দোলনকে সমর্থন করেনি। ২) জাতীয় আন্দোলন: ঐতিহাসিক নর্টন, জন কে, কার্ল মার্কস প্রমুখ ১৮৫৭ খ্রীষ্টাব্দের বিদ্রোহকে জাতীয় বিদ্রোহ বলে অভিহিত করেছেন। তাঁদের মতে , ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের জনগণ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে আন্দোলনে যোগদান করেছিল; বিদ্রোহীরা

মানুষ, প্রকৃতি ও শিক্ষার সমন্বয় বিষয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চিন্তাধারা বিশ্লেষণ করো।

রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাদর্শন ও জীবনদর্শনের প্রধান এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো প্রকৃতি। তাঁর মতে, প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থার একটি বড় ত্রুটি হল, প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে শিক্ষার বিচ্ছিন্নতা। আর এজন্য আমাদের দেশের শিক্ষা শুধু অসম্পূর্ণই নয়, যান্ত্রিক এবং হৃদয়হীনও বটে। শিক্ষা ও তার লক্ষ্য : তাঁর মতে, শিক্ষা হলো বাইরের প্রকৃতি ও অন্ত:প্রকৃতির মধ্যে সমন্বয় সাধন। এই সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে জাতির উপযোগী, দক্ষ ও কল্যাণকামী সদস্য হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলাই হলো শিক্ষার লক্ষ্য। লক্ষ্য পূরণের উপায় : তাঁর মতে, এই লক্ষ্য পূরণের জন্য একজন শিশুর প্রকৃতির সান্নিধ্যে এসে তার দেহ মন সুসংগঠিত করতে হয়। এটা করলেই সে পরমসত্তাকে উপলব্ধি করতে পারে। লক্ষ্য পূরণের উদ্যোগ : শান্তিনিকেতনের ভাবনা : ১) শান্তিনিকেতন প্রতিষ্ঠা : এই কারণেই তিনি প্রাচীন তপবনের শিক্ষার আদর্শ অনুপ্রাণিত হয়ে শান্তিনিকেতন স্থাপন করেছিলেন। এখানে শিক্ষক ও শিক্ষার্থী প্রকৃতির স্নিগ্ধ ও সুশীতল পরিবেশে বসবাস করে শিক্ষা দান ও শিক্ষা গ্রহণ সম্পন্ন করতে পারে। ২) হিতৈষী তহবিল তৈরি : পল্লীগ্রামের মানুষের কল্যাণে এবং কৃষির উন্নতির জন্য গড়ে তোলেন হিতৈষী তহবি

শিক্ষার চুঁইয়ে পড়া নীতি' বলতে কী বোঝ?

'শিক্ষার চুঁইয়ে পড়া নীতি' বলতে কী বোঝ? লর্ড বেন্টিং-এর আইন সচিব টমাস ব্যাবিংটন মেকলে  ১৮৩৫  সালে ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারের দাবি জানিয়ে একটি প্রস্তাব দেন যা  'মেকলে মিনিটস'  নামে পরিচিত। এই প্রস্তাবে পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রবর্তনের স্বপক্ষে যুক্তি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, এদেশের উচ্চ ও মধ্যবিত্তদের মধ্যে ইংরেজি শিক্ষার প্রসার ঘটবে এবং তাদের দ্বারা তা চুইয়ে ক্রমশ সাধারণ দেশবাসীর মধ্যে ছড়িয়ে পড়বে। ফলে ভারতীয়রা রুচি, মত, নৈতিকতা ও বুদ্ধিমত্তায় ইংরেজদের মত হয়ে উঠবে। ইংরেজি শিক্ষার প্রসারের উদ্দেশ্যে মেকলের নেওয়া এই নীতি   ' চুঁইয়ে পড়া নীতি'   নামে পরিচিত। 

তিন আইন কী?

 তিন আইন কী ব্রাহ্ম সমাজ আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ফলাফল হল ' তিন আইন'   পাস হওয়া।  ১৮৬৬ সালে কেশবচন্দ্র সেনের নেতৃত্বে ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজ বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ ও অসবর্ণ বিবাহ বিষয়ে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তোলেন। এই আন্দোলনের প্রভাবে ব্রিটিশ সরকার উৎসাহিত হয় এবং  ১৮৭২  সালে একটি আইন প্রণয়ন করে। এই আইনের ফলে  বাল্যবিবাহ  ও  বহুবিবাহ  প্রথা নিষিদ্ধ এবং   অসবর্ণ বিবাহ  বৈধ বলে ঘোষণা করা হয়। বিবাহ সংক্রান্ত এই তিনটি বিষয়কে কেন্দ্র করে তৈরি এই আইন ইতিহাসে ' তিন আইন'  নামে পরিচিত।