নীল বিদ্রোহ : কারণ, বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব :
আঠারো শতকে ইংল্যান্ডের শিল্প বিপ্লব হয়। ফলে সেখানে বস্ত্র শিল্পের প্রয়োজনে নীলের চাহিদা বাড়ে। ১৮৩৩ সালে সনদ আইন এর ফলে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একচেটিয়া বাণিজ্যের অধিকার লুপ্ত হলে কোম্পানির কর্মচারিরা ব্যক্তিগতভাবে নীল চাষে নেমে পড়ে। অধিক মুনাফার আশায় এইসব কর্মচারীরা নীল চাষীদের উপর সীমাহীন শোষণ ও অত্যাচার শুরু করে। এই শোষণ ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে নীল চাষিরা হাজার ১৮৫৯ সালে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। এই বিদ্রোহ নীল বিদ্রোহ নামে খ্যাত।
নীল বিদ্রোহের কারণ (পটভূমি ) :
নীল বিদ্রোহের পিছনে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ লক্ষ্য করা যায়।
১) কৃষকের ক্ষতি: নীল চাষের চাষের যে খরচ হতো মিল বিক্রি করে চাষির সে খরচ উঠতো না। ফলে চাষীরা ক্ষতিগ্রস্ত হতো।
২) খাদ্যশস্যের অভাব: নীল চাষ করতে গিয়ে কৃষকেরা খাদ্যশস্যের উৎপাদন প্রয়োজন মতো করতে পারত না। কারণ নীলকর সাহেবরা চাষীদের নীল চাষে বাধ্য করতেন। ফলে চাষির ঘরে খাদ্যাভাব দেখা দেয়।
৩) নীলকরদের অত্যাচার : চাষিরা নীল চাষ করতে অস্বীকার করলে নীলকর সাহেবরা তাদের উপর নির্মম অত্যাচার। ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া সহ বাড়ি়ির মহিলাদের সম্মানহানি করতেও ইংরেজরা পিছপা হতো না।
৪) দাদন প্রথা: দাদন বা রায়তি প্রথায় চাষীদের নীলকররা দাদন নিতে বাধ্যয করতো। একবার দাদন নিলে নীল চাষিরা নীলকরদের দাসে পরিণত যেত।
৫) পঞ্চম আইন এর কুফল: ১৮৩০ সালে রেগুলেশন ফাইভ বা পঞ্চম আইন পাস হয়। এই আইনের বলে নীলকরা চাষীদের দাদন দিয়ে নীল চাষ করতে বাধ্য করতে পারতো। ফলে চাষিরা দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতো।
৬) দস্তুরি বা ঘুষ প্রথা: নীলকরদের কর্মচারীরাও বিভিন্নভাবে শোষন করতো। অধিকাংশ সময় তারা চাষীদের কাছ থেকে দস্তুরি বা ঘুষ আদায় করত। ফলে চাষীরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতো।
৭) পক্ষপাতমূলক বিচার ব্যবস্থা: ব্রিটিশ বিচার ব্যবস্থা ছিল পক্ষপাত দুষ্ট। নীলকরদেের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়ে চাষীরা কখনোই ন্যায় বিচার পেতেন না।
৮) সরকারের উদাসীনতা: চাষীরা নীলকরদের বিরুদ্ধে অথবা বিচারব্যবস্থার পক্ষপাতিত্বের জন্য সরকারের কাছে অভিযোগ জানালেও সরকার তার প্রতিকার করত না।
এই সমস্ত কারণে নীল চাষিরা নীলকর সাহেবদের এবং ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে এবং ১৮৫৯ সালে বিদ্রোহ ঘোষণা করে।
নীল বিদ্রোহের বৈশিষ্ট্য ( চরিত্র) :
এই বিদ্রোহের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়।
i) ব্যাপকতা: ব্যাপকতার দিক থেকে এই বিদ্রোহ উল্লেখযোগ্য ছিল। নদীয়া বারাসাত মালদহ ফরিদপুর যশোহর খুলনাসহ বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ এলাকায় এই বিদ্রোহ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল।
ii) হিন্দু-মুসলিম ঐক্য: ওয়াহাবি ফারাজি সাঁওতাল মুন্ডা প্রভৃতি বিদ্রোহের অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি ছিল ধর্ম। কিন্তু নীল বিদ্রোহ ছিল সম্পূর্ণ ধর্মনিরপেক্ষ। এই বিদ্রোহে হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনে শামিল হয়।
iii) কৃষক- জমিদার ঐক্য: নীল বিদ্রোহ এমন এক বিদ্রোহ যেখানে কৃষক ও জমিদার শ্রেণি ঐক্যবদ্ধভাবে বিদ্রোহের সামিল হয়, যা সাধারণত দেখাা যায়। নড়াইলের রামরতন রায়, রানাঘাটের শ্রী গোপাল পাল চৌধুরী প্রমূখ জমিদার এই বিদ্রোহ কৃষকদের সঙ্গে যোগদান করেন।
iv) মধ্যবিত্তের সমর্থন: উনিশ শতকে বাংলার বিভিন্ন কৃষক ও উপজাতি বিদ্রোহ গুলির মধ্যে একমাত্র নীল বিদ্রোহীই বাংলার শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণীর সমর্থন ও সহযোগিতা লাভ করেছিল।
v) সংবাদপত্রের সমর্থন: হিন্দু প্যাট্রিয়ট বামাবোধিনী গ্রামবার্তা প্রকাশিকা সমাচার দর্পণ ইত্যাদি পত্রিকাগুলি নীল বিদ্রোহের সমর্থনে প্রচার চালিয়ে ব্রিটিশ সরকারকে এ বিষয়ে ভাবতে বাধ্য করেছিল।
vi) মিশনারিদের সমর্থন: নীল বিদ্রোহে কিছু খ্রিষ্টান মিশনারি সমর্থন করেছিল। ধর্মযাজক জেমস লং নীলদর্পণ নাটকটির ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশ করে এই বিদ্রোহকে পরোক্ষভাবে সমর্থন করেছিলেন।
নীল বিদ্রোহের গুরুত্ব:
এই বিদ্রোহের ফলাফল খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
ক) নীল কমিশন গঠন: বিদ্রোহের পর ব্রিটিশ সরকার ১৮৬০ সালে নীল কমিশন গঠন করতে বাধ্য হন।
খ) অষ্টম আইন প্রচলন: সরকার ১৮৬৮ সালে অষ্টম অস্টম আইনের দ্বারা পঞ্চম আইন বা নীলচুক্তি আইন বাতিল ঘোষণা করতে বাধ্য হয়। এতে বলাা হয় এতে বলা হয় নীল চাষ সম্পূর্ণভাবে চাষিদের ইচ্ছাধীন।
গ) জাতীয়তাবাদপ্রসার: নীল বিদ্রোহের সাফল্য বাঙালি জাতীয়তাবাদ সহায়ক হয়েছিল। শিশির কুমার ঘোষ লিখেছেন, ' নীল বিদ্রোহ ই সর্বপ্রথম ভারতবাসীকে সঙ্ঘবদ্ধ রাজনৈতিক আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তা শিখিয়েছিল।
ঘ) চা শিল্পে বিনিয়োগ: নীল বিদ্রোহ সফল হওয়ায় নীল করা নীল চাষে অর্থ বিনিয়োগ বন্ধধ করে দেয়। এই অর্থ তারা বিহার ও পার্বত্য এলাকায় চা শিল্পে বিনিয়োগ শুরু করে।
ঙ) বাঙালির মনোবল বৃদ্ধি: সর্বোপরি, নীল বিদ্রোহ ছিল বাঙালির সফল ও সঙ্ঘবদ্ধ আন্দোলন। এই আন্দোলনে জয়লাভ করার ফলে বাঙালি জাতির মনোবল বৃদ্ধি পেয়েছিল।
-------------x---------------
📕 বিকল্প প্রশ্ন :
১) নীল বিদ্রোহের পটভূমি ব্যাখ্যা করো। নীল বিদ্রোহের চরিত্র বিশ্লেষণ করো। নীল বিদ্রোহের ফলাফল কী হয়েছিল?
📢 নীল বিদ্রোহ সংক্রান্ত আরও প্রশ্ন ও উত্তর পেতে নিচের লিঙ্কগুলোতে ক্লিক করো।
১) নীল বিদ্রোহ বলতে কী বোঝ? এই বিদ্রোহের মূল কারণ কী ছিল?
২) নিলকররা কীভাবে নীল চাষীদের ওপর অত্যাচার করত?
৩) নীল বিদ্রোহ কী? নীল বিদ্রোহ কেন হয়েছিল?
📗 এই অধ্যায়ের অন্যান্য বিভাগের প্রশ্ন ও উত্তর পেতে নিচের লিঙ্কগুলোতে ক্লিক করো।
Group A - বহু বিকল্প ভিত্তিক প্রশ্ন। 👈এখানে ক্লিক করো। (MCQ)
সঠিক উত্তর নির্বাচন কর - এভাবে প্রশ্নে উল্লেখ থাকবে।
প্রত্যেক প্রশ্নের জন্য ১ নম্বর দেওয়া হবে। উত্তর দিতে হবে ২০ টি।
Group - B - অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন । 👈এখানে ক্লিক করো।(VSA)
সঠিক উত্তর নির্বাচন কর - এভাবে প্রশ্নে উল্লেখ থাকবে।
প্রত্যেক প্রশ্নের জন্য ১ নম্বর দেওয়া হবে। উত্তর দিতে হবে ২০ টি।
Group - B - অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন । 👈এখানে ক্লিক করো।(VSA)
এভাবে প্রশ্নে উল্লেখ থাকবে :
(১) একটি বাক্যে উত্তর দাও। (২) সত্য/মিথ্যা নির্বাচন করো। (৩) স্তম্ভ মেলাও। (৪) রেখামানচিত্রে স্থান চিহ্নিত করো ও নাম লেখো। (৫) শূন্যস্থান পূরণ করো। (৬) সঠিক ব্যাখ্যা নির্বাচন করো -
প্রত্যেক প্রশ্নের জন্য ১ নম্বর দেওয়া হবে। উত্তর দিতে হবে ১৬ টি।
Group - C - সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন । 👈এখানে ক্লিক করো।(SA)
(১) একটি বাক্যে উত্তর দাও। (২) সত্য/মিথ্যা নির্বাচন করো। (৩) স্তম্ভ মেলাও। (৪) রেখামানচিত্রে স্থান চিহ্নিত করো ও নাম লেখো। (৫) শূন্যস্থান পূরণ করো। (৬) সঠিক ব্যাখ্যা নির্বাচন করো -
প্রত্যেক প্রশ্নের জন্য ১ নম্বর দেওয়া হবে। উত্তর দিতে হবে ১৬ টি।
Group - C - সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন । 👈এখানে ক্লিক করো।(SA)
দুটি অথবা তিনটি বাক্যে উত্তর দাও। এভাবে প্রশ্নে উল্লেখ থাকবে।
প্রত্যেক প্রশ্নের জন্য ২ নম্বর দেওয়া হবে। উত্তর দিতে হবে ১১ টি।
Group - D - বিশ্লেষণ ধর্মী প্রশ্ন । 👈এখানে ক্লিক করো।(AA)
প্রত্যেক প্রশ্নের জন্য ২ নম্বর দেওয়া হবে। উত্তর দিতে হবে ১১ টি।
Group - D - বিশ্লেষণ ধর্মী প্রশ্ন । 👈এখানে ক্লিক করো।(AA)
সাত অথবা আটটি বাক্যে উত্তর দাও - এভাবে প্রশ্নে উল্লেখ থাকবে।
প্রত্যেক প্রশ্নের জন্য ৪ নম্বর দেওয়া হবে। উত্তর দিতে হবে ৬ টি।
Group - E -রচনাধর্মী প্রশ্ন । 👈এখানে ক্লিক করো।(EA)
প্রত্যেক প্রশ্নের জন্য ৪ নম্বর দেওয়া হবে। উত্তর দিতে হবে ৬ টি।
Group - E -রচনাধর্মী প্রশ্ন । 👈এখানে ক্লিক করো।(EA)
পনেরো বা ষোলোটি বাক্যে উত্তর দাও - এভাবে প্রশ্নে উল্লেখ থাকবে।
প্রত্যেক প্রশ্নের জন্য ৮ নম্বর দেওয়া হবে। উত্তর দিতে হবে ০১ টি।
প্রত্যেক প্রশ্নের জন্য ৮ নম্বর দেওয়া হবে। উত্তর দিতে হবে ০১ টি।
Ooookkkkk
উত্তরমুছুনThanks
উত্তরমুছুনখুব সুন্দর
মুছুনThank you
উত্তরমুছুন