আনন্দমঠ উপন্যাস ও জাতীয়তাবাদী চেতনার বিস্তার বা বিকাশ :
জাতীয়তাবোধ :
জাতীয়তাবোধ হল একটি গভীর ঐক্যবোধের অনুভূতি। কোনো নির্দিষ্ট ভৌগোলিক এলাকায় বসবাসকারী জনগনের মধ্যে জাতি, ধর্ম,বর্ণ ভাষা প্রভৃতির কারণে যখন এই ধরণের গভীর ঐক্যবোধের সৃষ্টি হয় এবং তাদের মধ্যে দেশপ্রেমের সৃষ্টি হয় তখন তাকে জাতীয়তাবোধ বলে।
পৃথিবীর যেকোন দেশে স্বদেশপ্রেম ও জাতীয়তাবাদী ভাবধারা বিকাশের সঙ্গে সেই দেশের দেশাত্মবোধক ও জাতীয়তাবাদী সাহিত্যের সম্পর্ক অতি ঘনিষ্ঠ। যে সমস্ত মনীষীরা তাদের লেখার মাধ্যমে ভারতীয়দের মধ্যে জাতীয়তাবোধের উন্মেষ ও প্রসার ঘটিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায এবং তার লেখা দেশাত্মবোধক উপন্যাস ‘আনন্দমঠ'।
আনন্দমঠ উপন্যাসের ভূমিকা :
আনন্দমঠ উপন্যাসের পটভূমি হল অষ্টাদশ শতকের সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহ ও ছিয়াত্তরের মন্বন্তর।
১) এই উপন্যাসের সন্ন্যাসী ও ফকির সম্প্রদায়ের ত্যাগ, বৈরাগ্য এবং দেশকে স্বাধীন করার জন্য সবকিছু উৎসর্গ করার আদর্শ প্রচার করেন। এই আদর্শের প্রচার পরবর্তীকালে বিপ্লবীদের মধ্যে সংগ্রামী মনোভাবের জন্ম দেয়।
২) অন্যদিকে ছিয়াত্তরের মন্বন্তরের মর্মস্পর্শী বর্ণনা আছে এই উপন্যাসে। এই বর্ননা এবং পরাধীন মাতৃভূমিকে মুক্ত করার জন্য সন্তানদের প্রবল প্রচেষ্টা যুব সমাজকে উদ্বেলিত করে তোলে।
৩) দেশকে মাতা রূপে কল্পনা করা হয় এই উপন্যাসে। ইংরেজ শাসনের অবসান ঘটিয়ে এই দেশমাতার মুক্তির জন্য সন্তানদলের আবির্ভাব ঘটতে দেখা যায় এখানে। পরবর্তীকালে সন্তানদলের দেশমাতার মুক্তির এই প্রচেষ্টা স্বদেশপ্রেমের জোয়ার সৃষ্টি করে।
৪) বন্দেমাতরম গান ও স্লোগানটি আনন্দমঠ উপন্যাসের অন্তর্ভুক্ত। ভারতীয়দের মধ্যে জাতীয়তাবাদের প্রসারে বন্দেমাতরম-এর অবদান অপরিসীম। ১৮৯৬ খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের কলকাতা অধিবেশনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বন্দেমাতরম গানটি গেয়ে শ্রোতাদের মুগ্ধ করেছিলেন। এই সঙ্গীত ভারতীয় জাতীয় আন্দোলনের প্রাণস্পন্দন হিসাবে কাজ করেছিল। বস্তুতপক্ষে, এই সঙ্গীত ছিল ভারতীয় মুক্তি সংগ্রামের মূলমন্ত্র।
৫) আনন্দমঠের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে ভারতের চরমপন্থী ও বিপ্লবীরা দেশকে মাতৃরূপে কল্পনা করে তাকে পরাধীনতার শৃঙ্খলমুক্ত করার কাজে ব্রতী হন।
৬) এই উপন্যাসে সত্যানন্দের আহ্বানের মধ্যে দিয়ে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে ভারতীয়দের জাতীয়তাবোধ জাগানোর চেষ্টা করা হয়েছে।
৭) এই উপন্যাসের অন্যতম নারী চরিত্র কল্যাণী ও শান্তি। এঁদের আদর্শ ও আত্মোৎসর্গের কথা তুলে ধরে দেশের যুবসমাজকে বঙ্কিমচন্দ্র দেশের দেশপ্রেম ও সংগ্রামী জাতীয়তাবাদের আদর্শে উদ্বুদ্ধ করেন।
মূল্যায়ন:
ভারতীয়দের মধ্যে জাতীয়তাবোধের বিকাশে বঙ্কিমচন্দ্রের আনন্দমঠ ও তাঁর বন্দেমাতরম গানটির অবদান অপরিসীম। অধ্যাপক হীরেন্দ্রনাথ দত্ত আনন্দমঠের স্রষ্টা বঙ্কিমচন্দ্রকে ভারতীয় জাতীয়তাবাদের ‘প্রকৃত জনক’ বলে অভিহিত করেছেন (The real father of Indian Nationalism)।
১) সংগ্রামী জাতীয়তাবোধ বিকাশে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ভূমিকা ব্যাখ্যা করো।
অন্যান্য প্রশ্ন :
১) অনন্দমঠ উপন্যাসটি কীভাবে জাতীয় চেতনার প্রসার ঘটিয়েছিল লেখো। - প্রশ্নের মান - ৪ ( সাত-আট বাক্যে উত্তর )
২) টিকা লেখ : অনন্দমঠ ও জাতীয়তাবোধ। - প্রশ্নের মান - ২ ( দুই-তিন বাক্যে উত্তর )
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন