অথবা,
টীকা লেখা : গ্রামবার্তা প্রকাশিকা পত্রিকা।
উনিশ শতকে বাংলায় প্রকাশিত সংবাদপত্রগুলির মধ্যে গ্রামবার্তা প্রকাশিকা' পত্রিকা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসে এটি প্রথম প্রকাশিত হয়। এর প্রথম সম্পাদক ছিলেন হরিনাথ মজুমদার । এটি প্রথমে মাসিক পত্রিকা হিসেবে প্রকাশিত হলেও পরে পাক্ষিকও সাপ্তাহিক পত্রিকা হিসেবে প্রকাশিত হয়।
প্রকাশক ও সম্পাদনা : অবিভক্ত বাংলার কুষ্ঠিয়া জেলার কুমারখালি গ্রাম থেকে ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে হরিনাথ মজুমদারে সম্পদনায় প্রকাশিত হয়। প্রথমে এটি মাসিক পত্রিকা রূপে প্রকাশিত হলেও ১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দে পাক্ষিক ও ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দে সাপ্তাহিক পত্রিকা রূপে প্রকাশিত হতে থাকে।
গ্রামীণ সাংবাদিকতা : গ্রামীণ সংবাদ পরিবেশন করাই ছিল তার লক্ষ্য। গ্রামের পথে পথে ঘুরে ঘুরে যে সমস্ত সংবাদ তিনি সংগ্রহ করতেন তা এই পত্রিকাতে প্রকাশিত হত।
গ্রামবার্তা প্রকাশিকায় তৎকালীন সমাজিক চিত্র :
গ্রামবার্তা প্রকাশিকা' পত্রিকা থেকে সমসাময়িককালের সমাজ সম্পর্কে জানা যায়।
১) সমাজে নারীদের অবস্থা : ‘গ্রামবার্তা প্রকাশিকা' পত্রিকা থেকে সমাজে নারীদের দুরবস্থা সম্পর্কে জানা যায়। এক শ্রেণির প্রগতিশীল মানুষ নারীশিক্ষার প্রসারে সচেষ্ট ছিলেন। নারীশিক্ষার প্রসারে গ্রামবার্ত্তা প্রকাশিকাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
২) জমিদারদের অত্যাচার : এই পত্রিকা থেকে জমিদার, জোতদার, মহাজনদের চরম অত্যাচার, নির্যাতন ও শোষণের কথা জানা যায়। চড়া হারে রাজস্ব, বাড়তি রাজস্ব, কারণে-অকারণে জমি থেকে উচ্ছেদ, ইত্যাদির কথা তুলে ধরেন।
৩) মহাজনদের শোষণ : গ্রামের অসহায় মানুষ কীভাবে চড়া সুদে ঋণ গ্রহণ করে সর্বস্বান্ত হচ্ছিল তা এই পত্রিকা থেকে জানা যায়।
৪) নীলকরদের অত্যচার : চাষিদের কীভাবে নীলচাষে বাধ্য করা হত, অল্প দামে বিক্রি করতে বাধ্য করা হত, চাষিরা কীভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল সেকথা জানা যায়।
৫) শিক্ষাপ্রসার : সেসময় নিরক্ষর মানুষের সংখ্যা ছিল প্রচুর। এর মধ্যে নারীশিক্ষার হার ছিল অত্যন্ত কম, প্রায় ছিল না বললেই চলে। পত্রিকায় শিক্ষা প্রসার বিশেষত নারীশিক্ষা প্রসারের উপর গুরুত্ব দিয়ে বিভিন্ন লেখা প্রকাশিত হয়।
৬) বুদ্ধিজীবীদের সমর্থন : এই পত্রিকা বুদ্ধিজীবী মহলে খুব দ্রুত স্থান করে নেয়। মীর মুশারফ হোসেন, জলধর সেন প্রমুখ এখানে বিভিন্ন বিষয়ে লেখালেখি করতেন।
৭) 'মানি-অর্ডার' ব্যবস্থা : ডাকঘরের মাধ্যমে 'মানি-অর্ডার' ব্যবস্থা প্রচলনের প্রস্তাব এই পত্রিকাতেই দেওয়া হয়েছিল।
৭) 'মানি-অর্ডার' ব্যবস্থা : ডাকঘরের মাধ্যমে 'মানি-অর্ডার' ব্যবস্থা প্রচলনের প্রস্তাব এই পত্রিকাতেই দেওয়া হয়েছিল।
৮) অন্যান্য বিষয় : শিক্ষার বিস্তার, বিশেষত নারী শিক্ষার বিস্তারে এই পত্রিকা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সাহিত্য, দর্শন, বিজ্ঞান ও বীরগাথা প্রভৃতি বিষয় এখানে আলোচনা হত।
পরিশেষে আমার বলতে পারি এই পত্রিকাটি সুলভ মূল্যের ছিল। প্রকাশক হরিনাথ মজুমদার অতি দারিদ্র্যের মধ্যেও পত্রিকা প্রকাশনার কাজ চালিয়ে যান। দীর্ঘকাল সামাজিক দায়িত্ব পালনের পর অর্থের অভাবে ১২৯২ বঙ্গাব্দে (১৮৮৫ খ্রিঃ) পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে যায়। তবে, সমকালীন গ্রামবাংলার সার্বিক জনজীবনে এই পত্রিকাটি সর্বপ্রথম প্রকাশনা শুরু করে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই জন্য একে 'বাংলার গ্রামীণ সংবাদপত্রের জনক' বলা হয়।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন