সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পোস্টগুলি

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিক্ষাভাবনা

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিক্ষাভাবনার সমালোচনামূলক আলোচনা করো। - ২০২৩ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিক্ষাভাবনা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ঔপনিবেশিক শিক্ষা ব্যবস্থার তীব্র সমালোচক ছিলেন। তিনি বিদেশী ভাষার মাধ্যমে শিক্ষার বিরোধী ছিলেন। তাঁর মতে ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থা ভারতীয়দের মধ্যে ভেদাভেদ ঘটাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে শিক্ষার হেরফের, তোতাকাহিনী, শিক্ষার বিকিরণ প্রভৃতি প্রবন্ধের কথা উল্লেখ করা যায়। তাঁর মতে, শিক্ষা হবে মানবজীবনের পূর্ণতাদানের চাবিকাঠি। রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাভাবনার বৈশিষ্ট্য : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গুরুকুল শিক্ষাব্যবস্থার প্রতি আস্থাশীল ছিলেন।  প্রকৃতি পাঠ কে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেন।  মানব প্রকৃতির সাথে বিশ্বপ্রকৃতির মেলবন্ধন ঘটানো, প্রকৃতির কোলে বসে শিক্ষাগ্রহণের কথা বলেন।  চার দেওয়ালের পরিবর্তে খোলা আকাশের তলায় আলো, বাতাস, গাছপালার মধ্যে শিক্ষা গ্রহণের কথা বলেন।  ১৯০১ খ্রিস্টাব্দের ২২ ডিসেম্বর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 'ব্রহ্ম বিদ্যালয়' সূচনা করেন। 'গোলদীঘির গোলামখানা' ছেড়ে আসার জন্য তিনি সরব হন।  পাশ্চাত্য বিজ্ঞান ও ভারতীয় সাহিত্যের মেলবন্ধন ঘটানোর উল্লেখ করার কথা বলেন। ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দ থেকে

লর্ড মেকলেকে কী এদেশে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রবর্তক বলা যায়?

লর্ড মেকলে-কে কী এদেশে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রবর্তক বলা যায়? লর্ড মেকলেকে কী এদেশে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রবর্তক বলা যায়? পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারে অনিহা : ইংরেজ ইস্ট কোম্পানি এদেশে ক্ষমতা দখলের পর পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রসারে কোনো উদ্যোগ নেয়নি। তাদের ধারনা ছিল এদেশের আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রসারিত হলে ভারতবাসীর মধ্যে রাজনৈতিক চেতনা বৃদ্ধি পাবে ও তারা ক্রমশ ব্রিটিশ বিরোধী হয়ে উঠবে। ফলে তারা প্রাচ্য ভাষা ও সংস্কৃতি চর্চাকেই গুরুত্ব দিয়েছিলেন। পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারে উদ্যোগ : ১) মিশনারীদের চেষ্টা : কোম্পানি উৎসাহী না হলেও খ্রিষ্টান মিশনারীরা এদেশে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারে উদ্যোগ নেয়। তবে তাদের উদ্দেশ্য ছিল খ্রিষ্ট ধর্মের প্রচার ও প্রসার।  ২) শিক্ষাখাতে ব্যয় বরাদ্ধ : সমকালীন শিক্ষার দীনতা উপলব্ধি করে ১৮১৩ খ্রিঃ ব্রিটিশ পার্লামেন্ট চাটার আইনের মাধ্যমে কোম্পানি সরকারকে বাৎসারিক ১ লক্ষ টাকা শিক্ষাখাতে ব্যয় করার নির্দেশ দেয়। তবে প্রাচ্য-পাশ্চাত্য দ্বন্দ্বের ফলে তা বাস্তবায়িত করা সম্ভব হয়নি। ৩) জনশিক্ষা কমিটি তৈরি : জনশিক্ষা প্রসারের উদ্দেশ্যে ১৮২৩ খ্রিঃ জনশিক্ষা কমিটি তৈরি হয়। গভর্নর জেনারেল লর

অরণ্য আইনের উদ্দেশ্যে

ঔপনিবেশিক সরকার কী উদ্দেশ্যে অরণ্য আইন প্রনয়ন করেছিল? অরণ্য আইনের উদ্দেশ্যে বনভূমি সংরক্ষণ, পরিবেশ সুরক্ষা, কৃষির প্রসার ইত্যাদির দোহাই দিয়ে ১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দে ও ১৮৭৮ খ্রিষ্টাব্দে ইংরেজ সরকার ভারতে পরপর দুটি অরণ্য আইন প্রনয়ন করলেও আসল উদ্দেশ্য ছিল বাণিজ্যিক মুনাফালাও ও সামরিক ও রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করা। ১) বনজ সম্পদকে উপনিবেশিক স্বার্থে ব্যবহার : ঔপনিবেশিক অরণ্য আইনের মূল কারণ ছিল কাঠ ও বনজ সম্পদকে উপনিবেশিক স্বার্থে ব্যবহার করে মুনাফা অর্জন ও অন্যদিকে কৃষি জমির সম্প্রসারণ ঘটিয়ে মুনাফা বৃদ্ধি। ২) রেলপথের সম্প্রসারণ : ব্রিটিশ নৌবাহিনীর জাহাজ তৈরির জন্য উৎকৃষ্ট শাল ও সেগুন কাঠের প্রয়োজন ছিল অন্যদিকে রেলপথের সম্প্রসারণ, রেলের কামরা, শহরের বাড়িঘর, আসবাবপত্রের জন্য প্রচুর কাঠের দরকার ছিল। তাছাড়া বনজ সম্পদ হিসেবে মধু, লাক্ষা, ঔষধি গুন্ম, ভেষজ উদ্ভিদের বাণিজ্যিক চাহিদা ক্রমশ বাড়ছিল। ৩) কৃষি সম্প্রসারণ ও সশস্ত্র বিশৃঙ্খলা দমন : অপরিকল্পিত ভ্রাম্যমান ঝুম চাষের পরিবর্তে স্থায়ী ও সুসংগঠিত কৃষি সম্প্রসারণ এবং ভ্রাম্যমান সশস্ত্র বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী আদিবাসীদের শান্ত স্থায়ী কৃষিজীবী ও পশুপালক

নীলবিদ্রোহে সংবাদপত্রের ভূমিকা

নীলবিদ্রোহে সংবাদপত্রের ভূমিকা বিশ্লেষণ কর। নীলবিদ্রোহে সংবাদপত্রের ভূমিকা উঃ বাংলার নীলচাষিদের দূরবস্থা ও নীলকরদের অবর্ণনীয় অত্যাচারের বিরুদ্ধে বাংলার বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ও বুদ্ধিজীবীমহল সরব হয়ে উঠেছিল। বিভিন্ন পত্রপত্রিকা : সমকালীন প্রকশিত বিভিন্ন পত্র পত্রিকার মধ্যে সর্বপ্রথম ১৮২২ খ্রিষ্টাব্দের মে মাসে ' সমাচার চন্দ্রিকা ' ও ' সমাচার দর্পণে ' নীলকরদের অত্যাচারের কথা প্রকাশিত হয়। ১৮৪৯ খ্রিষ্টাব্দে অক্ষয়কুমার দত্ত 'তত্ত্ববোধিনী' পত্রিকায় নীলচাষ ও চাষিদের দুরবস্থা নিয়ে একটি বিশদ প্রতিবেদন বার করেন। ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের 'সংবাদ প্রভাকর' ও নীলবিদ্রোহীদের সমর্থনে খবর প্রকাশ করেন। ১) হিন্দু, প্যাট্রিয়ট ও হরিশচন্দ্র : নীলকরদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি সরব হয়েছিল ' হিন্দু প্যাট্রিয়ট ' পত্রিকা। এই পত্রিকার বিভিন্ন সময়ের সম্পাদক গিরিশচন্দ্র ঘোষ, হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়, মনমোহন ঘোষ প্রমুখরা নীলচাষিদের সম্পর্কে নানাভাবে সাহায্য ও নীলকরদের অত্যাচারের কথা সংবাদ পত্রে প্রকাশ করেন। হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় নিজে এবং সাংবাদিক নিয়োগ করে নীলচাষিদের দুর্দশার খবর

ডারতের সংবিধান প্রস্তাবনা

ডারতের সংবিধান প্রস্তাবনা ডারতের সংবিধান প্রস্তাবনা আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম সমাজতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক সাধারণতপ্ত রূপে গড়িয়া তুলিতে, এবং উহার সকল নাগরিক যাহাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তার, অভিব্যাক্তির, বিশ্বাসের, ধর্মের ও উপাসনার স্বাধীনতা; পদমর্যাদা ও সুযোগসুবিধা লাভ নিশ্চিতকরণ; এবং তাঁহাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-মর্যাদা ও জাতীয় ঐক্য ও সংহতির আশ্বাসক  ভ্রাতৃভাব বর্ধিত হয়; তজ্জন্য সত্যনিষ্ঠার সহিত সংকল্প করিয়া আমাদের সংবিধান সভায় অদ্য ২৯শে নভেম্বর, ১৯৪৯ তারিখে, এতদ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করিতেছি, বিধিবদ্ধ করিতেছি এবং আমাদিগকে অর্পণ করিতেছি। THE CONSTITUTION OF INDIA PREAMBLE WE, THE PEOPLE OF INDIA, having solemnly resolved to constitute India into a SOVEREIGN SOCIALIST SECULAR DEMOCRATIC REPUBLIC and to secure to all its citizens JUSTICE, social, economic and political; LIBERTY of thought, expression, belief, faith and worship, EQUALITY of status and of opportunity, and to promote among them all FRATERNITY assuring the dignity of the

জাতীয়তাবাদ প্রসারে হিন্দুমেলার ভূমিকা

জাতীয়তাবাদ প্রসারে হিন্দুমেলার ভূমিকা বিশ্লেষণ করো। - ২০২২ জাতীয়তাবাদ প্রসারে হিন্দুমেলার ভূমিকা ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে ভারতে সাধারণ মানুষের মধ্যে জাতীয় চেতনার জাগরণে যে সমস্ত রাজনৈতিক সংগঠন গড়ে উঠেছিল তার বেশিরভাগই ছিল ভারতীয় সামাজিক ও ধর্মীয় ঐতিহ্যকে উপেক্ষা করে তৈরি। হিন্দু মেলার প্রতিষ্ঠা : এই প্রেক্ষাপটে রাজনারায়ন বসু উপলব্ধি করেন জাতীয় গৌরবগাথার উন্মেষ ছাড়া জাতির মহত্বলাভ সম্ভব নয়। রাজনারায়ন বসু র প্রেরণা ও ভাবধারায় নবগোপাল মিত্র ১৮৬৭ খ্রীঃ কলকাতায় হিন্দু মেলা প্রতিষ্ঠা করেন। হিন্দু মেলা প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য : হিন্দু মেলার দ্বিতীয় অধিবেশনেই সম্পাদক জ্ঞানেন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেন- আমাদের এই মিলন সাধারণ ধর্ম-কর্মের জন্য নয়, কোনো বিশেষ সুখের জন্য নয়, কোনো আমোদ-প্রমোদের জন্য নয়। এটি স্বদেশের জন্য, ভারতের জন্য। হিন্দু মেলা প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ছিল - সাধারণ মানুষ বিশেষ করে শিক্ষিত যুবকদের মধ্যে হিন্দুধর্মের অতীত গৌরবের কথা ছড়িয়ে দেওয়া।  দেশীয় ভাষা চর্চা করা, জাতীয় প্রতীকগুলিকে মর্যাদা দেওয়া প্রভৃতি।  প্রাচীন হিন্দু ঐতিহ্য তুলে ধরে নবগোপাল মিয় এদেশে পাশ্চাত্য সভ্যতা ও সংস্কৃতির প্রসার প্

'গোরা' উপন্যাসটিতে রবীন্দ্রনাথের জাতীয়তাবাদী ভাবধারার পরিচয়

'গোরা' উপন্যাসটিতে রবীন্দ্রনাথের যে জাতীয়তাবাদী ভাবধারার পরিচয় পাওয়া যায় তা বিশ্লেষণ কর। ' গোরা' উপন্যাসটিতে রবীন্দ্রনাথের জাতীয়তাবাদী ভাবধারার পরিচয় ভূমিকা : স্বদেশী আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ভারতীয় জাতীয়তাবাদের শক্তি ও দুর্বলতা দুটিই প্রত্যক্ষ করেন এবং স্বদেশী আন্দোলনের ব্যর্থতা তাকে আত্মানুসন্ধানী করে তুলেছিল। তার পূর্ণপ্রকাশ ঘটেছিল'গোরা' উপন্যাসে। মানবতার বিরোধ ও সমন্বয় : ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯০৯ খ্রিস্টা পর্যন্ত 'প্রবাসী' পত্রিকায়'গোরা' উপন্যাসকে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করার সময় রবীন্দ্রনাথ ব্যক্তির সঙ্গ্যে সমাজের, সমাজের সঙ্গে ধর্মের এবং ধর্মের সঙ্গে মানবতার বিরোধ ও সমন্বয়কে তুলে ধরেছেন। শুধুই কল্যাণের প্রতিমূর্তি : জীবনের শুরুর দিকে গোরা ছিল আপাদমস্তক হিন্দু। তার ভাবনা ছিল শুধুমাত্র হিন্দু ঐতিহ্যগত আদর্শ ও রীতিনীতির মাধ্যমে দেশ ও দেশের মানুষের উন্নতি ও মঙ্গাল একমাত্র সম্ভব। কিন্তু ঘটনাচক্রে গোরা যখন নিজের আত্মপরিচয় জানতে পারলেন অর্থাৎ তিনি ব্রাহ্মণ নন তার দেহে বইছে খ্রিষ্টান রক্ত (আইরিশ দম্পতির পূত্র), তখন তিনি তার পালিত মা আন

বাংলায় নারীশিক্ষা বিস্তারে রাজা রাধাকান্তদেবের ভূমিকা

উনিশ শতকে বাংলায় নারীশিক্ষা বিস্তারে রাজা রাধাকান্তদেব কীরূপ ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন? - ২০২২ বাংলায় নারীশিক্ষা বিস্তারে রাজা রাধাকান্তদেবের ভূমিকা ভূমিকা : রাজা রাধাকান্তদেব শুধুমাত্র রাজা রামমোহন রায়ের প্রতিপক্ষ বা রক্ষনশীল হিন্দু সমাজের দলপতি ছিলেন না, তিনি ছিলেন উনিশ শতকে পাশ্চাত্য ও নারীশিক্ষার অন্যতম সমর্থক এবং প্রচারক।  নারী শিক্ষায় অবদান : ১) তিনি নিজের পরিবারের মহিলাদের শিক্ষাদানের জন্য ইংরেজি শিক্ষায়িত্রী নিযুক্ত করেছিলেন।  ২) ব্যাপটিস্ট মিশনারীদের উদ্যোগে নারীশিক্ষার জন্য ক্যালকাটা ফিমেল জুভেনাইল সোসাইটি স্থাপিত হলে তা রাধাকান্তদেবের সমর্থন ও সহযোগিতা লাভ করে। ৩) রাজা রাধাকান্তদের সম্ভ্রান্ত মহিলাদের অন্তঃপুর শিক্ষা এবং ছোট ছোট বালিকাদের গৃহস্থ পাঠশালায় শিক্ষা প্রদান করতে চেয়েছিলেন। তাই তিনি শোভাবাজারে নিজ বাড়িতে বালিকাদের পড়ানোর এবং পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন।  ৪) মেয়েদের লেখাপড়ায় উৎসাহ দেওয়ার জন্য পারিতোষিকেরও ব্যবস্থা করেছিলেন। ৫) নারী শিক্ষার মূল বাধা ছিল তৎকালীন রক্ষণশীল গোষ্ঠীর মানসিকতা। তাই তাঁর উৎসাহ এবং সহযোগিতায় ‘স্কুল বুক সোসাইটি’র প্রধান পন্ডিত গৌরমোহন

হ্যালহেডের 'এ গ্রামার অব দ্য বেঙ্গল ল্যাঙ্গুয়েজ' গ্রন্থটি গুরুত্বপূর্ণ কেন? বাংলা ছাপাখানার বিকাশে চার্লস উইলকিনস-এর ভূমিকা

হ্যালহেডের 'এ গ্রামার অব দ্য বেঙ্গল ল্যাঙ্গুয়েজ' গ্রন্থটি গুরুত্বপূর্ণ কেন?  বাংলা ছাপাখানার বিকাশে চার্লস উইলকিনস-এর ভূমিকা বিশ্লেষণ কর। - ২০২২ হ্যালহেডের 'এ গ্রামার অব দ্য বেঙ্গল ল্যাঙ্গুয়েজ' গ্রন্থটি গুরুত্বপূর্ণ কেন? What-is the-importance-of-Halheads-book-A GRAMMAR-OF-THE-BENGALI-LANGUAGE-and-Role-of-Charles-Wilkins-in-the-Development-of-Bengali-Printing ভূমিকা ঃ ভারতে বাংলা অক্ষরে প্রথম মুদ্রিত বই হল ১৭৭৮ খ্রি. হুগলির অ্যানড্রুজের ছাপাখানা থেকে প্রকাশিত ন্যাথানিয়েল ব্রাসি হ্যালহেড এর লেখা ' এ গ্রামার অব দি বেঙ্গল ল্যাঙ্গুয়েজ ' বাংলাভাষায় প্রকাশিত এই গ্রন্থটি ছাপাবইয়ের ইতিহাসে অত্যন্ত তাৎপর্য্য বহন করে। গ্রন্থের গুরুত্ব ঃ 'এ গ্রামার অব দি বেঙ্গল ল্যাঙ্গুয়েজ ' গ্রন্থটি ইংরাজি ভাষায় লেখা হলেও এর পাতায় পাতায় বাক্যাংশ, শ্লোকসহ পদ্যাংশ প্রভৃতি ছাপা হয়েছিল। বাংলা হরফে, স্থান পেয়েছিল কৃত্তিবাসী রামায়ণ , কাশীদাসী মহাভারত আর ভারতচন্দ্রের অন্নদামঙ্গল ও বিদ্যাসুন্দর থেকে উদ্ধৃতি। ফলে এই গ্রন্থে বাংলা হরফের ব্যবহার বাংলা ছাপাবইয়ের ইতিহাসে অভিনব। এছাড়াও হ্যাল

সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহের ঐতিহাসিক তাৎপর্য, ব্যর্থতার কারণ

সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহের ঐতিহাসিক তাৎপর্য কী ছিল? সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহ ব্যর্থ হল কেন? সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহের ঐতিহাসিক তাৎপর্য ভূমিকা ঃ মুঘল আমলের ইতিহাস গ্রন্থ 'দবিস্তান' বা গুলাম হুসেন রচিত 'সিয়ার-উল-মুতাগখিয়িন' থেকে জানা যায়- অষ্টাদশ বা তার আগে উত্তর ভারতের দশনামী সন্ন্যাসী, শৈব সম্প্রদায়ভুক্ত নাগা, মারাঠা সম্প্রদায়ভুক্ত গোঁসাইরা বা বেশরা সুফি সম্প্রদায়ভুক্ত মাদারি ফকিররা দেশেরবি ভিন্ন প্রান্তে ঘুরে বেড়াত এবং ফেরার পথে স্থানীয় জমিদার ও ভূস্বামীদের কাছ থেকে অনুদান সংগ্রহ করত। বিদ্রোহের কারণ ঃ এই সন্ন্যাসী ও ফকিরদের মধ্যে কেউ কেউ বাংলা ও বিহারে স্থায়ীভাবে বসবাস করে এবং কৃষিকাজ ও সিল্ক, মশলা প্রভৃতির ব্যবসাকে তারা পেশা হিসেবে বেছে নেয়। ওয়ারেন হেস্টিংস এর সময়ে নতুন ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থায় এরা ভূমি থেকে উচ্ছেদ সহ সরকারের শাসন ও শোষণের শিকারে পরিণত হয় এবং প্রতিবাদে তারা বিদ্রোহে নামে। কোম্পানি সরকারের বিরুদ্ধে ১৭৬৩ খ্রি. সংঘটিত প্রথম কৃষক বিদ্রোহ ঐতিহাসিকভাবে খুব তাৎপর্যপূর্ণ। সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহের তাৎপর্য ঃ ১) সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহ ছিল ঔপনিবেশিক আমলে সংগঠিত

বাংলায় ধর্মসংস্কার আন্দোলনে রামকৃষ্ণদেবের ভূমিকা

উনিশ শতকে বাংলায় ধর্মসংস্কার আন্দোলনে রামকৃষ্ণদেবের ভূমিকা সংক্ষেপে আলোচনা কর। উনিশ শতকে বাংলায় ধর্মসংস্কার আন্দোলনে রামকৃষ্ণদেবের ভূমিকা আধুনিক ভারতের ধর্মীয় সাংস্কৃতিক ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব হলেন শ্রীরামকৃয় (১৮৩৬-১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দ)। সামাজিক গোঁড়ামি ও ধর্মীয় রক্ষণশীলতার বিরুদ্ধে তাঁর সর্বধর্ম সমন্বয়ের আদর্শ জাতীয় জীবনে এক বড় প্রাপ্তি। ১)  যত মত তত পথ : ধর্ম নিয়ে সনাতনপন্থীদের সঙ্গে নব্যপর্থীদের দ্বন্দ্বে রামকৃয় ছিলেন সমন্বয়ের মূর্ত প্রতীক। তিনি বুঝেছিলেন সর্বধর্মের সমন্বয় হল যুগের আদর্শ। বৈষ্ণব ও শক্তি সাধনার বিচিত্রপথ, ইসলাম থেকে খ্রীস্টীয় সাধনা, দ্বৈত থেকে অদ্বৈত, সাকার থেকে নিরাকার, সগুণ থেকে নির্গুণ - সব সাধনার মধ্যে বিরোধের তিনি মীমাংসা ঘটালেন- ' যত মত তত পথ '- এই মত দিয়ে। তিনি বলেন, মতের ভিত্তিতে পথ আলাদা হলেও লক্ষ্য সবারই এক -ঈশ্বরের সান্নিধ্য। শ্রীরামকৃষ্ণ ঈশ্বরলাভের জন্য বিশেষ কোন আচার-আচরণ, যাগ-যজ্ঞের প্রয়োজন নেই বলে মত প্রকাশ করেন। ২)  ভক্তির ঈশ্বর উপলব্ধি : তিনি বলেন, ঈশ্বরলাভের জন্য পান্ডিত্য, শাস্ত্রজ্ঞান, মন্ত্র-তন্ত্র, জপ-তপ, সংসার ত্যাগ, শুচ

ছাপাখানা বিকাশে গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য্যের ভূমিকা

বাংলায় ছাপাখানা বিকাশে গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য্যের ভূমিকা বিশ্লেষণ করো। - ২০২২ ছাপাখানা বিকাশে গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য্যের ভূমিকা গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য ছিলেন প্রথম বাঙালি প্রকাশক, পুস্তক বিক্রেতা এবং চিত্র মুদ্রাকর। তিনি কর্মজীবন শুরু করেছিলেন শ্রীরামপুর মিশনে র ছাপাখানায় কম্পোজিটর হিসেবে।  প্রথম সচিত্র গ্রন্থ : তারপর কলকাতার ফেরিস কোম্পানির মুদ্রাকর হিসেবে যোগ দিয়ে প্রকাশ করেন ভারতচন্দ্রের ' অন্নদামঙ্গল ' গ্রন্থটি, ১৮১৪ খ্রিস্টাব্দে-যার ছাপার কাজ শুরু হয়েছিল, সম্পূর্ণ হয়েছিল ১৮১৬ খ্রিষ্টাব্দে। এই গ্রন্থ বাংলা ভাষার প্রথম সচিত্র গ্রন্থ। বইটিতে ছ'খানা ছবি আছে যা খোদাই করেছিলেন রামচাঁদ রায়।  অন্যান্য গ্রন্থ প্রকাশ : অন্নদামঙ্গল ছাড়াও গঙ্গাকিশোর 'দায়ভাগ', 'চিকিৎসার্ণব', ' শ্রীভগবদগীতা ', 'চাণক্যশ্লোক' ইত্যাদি অনেক গ্রন্থ প্রকাশ প্রকাশক, পুস্তক বিক্রেতা : গঙ্গাকিশোর পুস্তক বিক্রেতা হিসেবে সফল হওয়ার পর তিনি বন্ধু হরচন্দ্র রায়ের সহযোগিতায় ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার চোরবাগানে 'বাঙলা গেজেটি যন্ত্রালয়' স্থাপন করেন এবং এই প্রকাশনা সংস্থা থেকে প্রকা

ছাপাখানা বাংলায় শিক্ষা বিস্তারে কীরূপ পরিবর্তন এনেছিল?

ছাপাখানা বাংলায় শিক্ষা বিস্তারে কীরূপ পরিবর্তন এনেছিল? চলমান হরফের প্রচলন ও মুদ্রণ বিপ্লব সারাবিশ্বের জ্ঞানচর্চাকে উচ্চশ্রেণির সীমাবদ্ধ ক্ষেত্র থেকে মুক্ত করে সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রসারিত করেছিল। ভারত তথা বাংলার সামাজিক ও সংস্কৃতিক জাগরণ, সর্বোপরি গণশিক্ষার প্রসারে হাপাখানা ও ছাপাবই-এর ভূমিকা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। বইপত্র সহজলভ্য হয় : রেভারেন্ড জেমস লক-এর মতে, মুদ্রণ ও শিক্ষার সম্পর্ক ওতপ্রোতভাবে জড়িত। শিক্ষা বিস্তারের সঙ্গে মুদ্রিত পুস্তকের একটি ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। ছাপাখানা প্রতিষ্ঠার পূর্বে শিক্ষাদান উচ্চবিত্তদের মধ্যে সীমাবন্ধ ছিল কিন্তু ছাপাখানা প্রতিষ্ঠার পর প্রচুর ছাপাবই বাজারে আসে। ছাপা বইপত্রগুলির নাম সস্তা হওয়ায় সেগুলি আপামর মানুষের কাছে সহজলভ্য হয়। শ্রীরামপুর মিশন প্রেস স্থাপন : শ্রীরামপুর মিশনের মিশনারি উইলিয়াম কেরি ১৮০০ সালে শ্রীরামপুর মিশন প্রেস স্থাপন করলে এদেশের শিক্ষাবিস্তারের ক্ষেত্রে যুগান্তকারী ঘটনা ঘটে যায়। এখান থেকে বাংলা, হিন্দি, অসমিয়া, গুড়িয়া, মারাঠি, সংস্কৃত প্রভৃতি ভাষার বাইবেলের অনুবাদ প্রকাশিত এয়।  ধর্ম ও নীতি বিষয়ক শিক্ষার প্রসার : এছাড়া রামায়ণ ও মহাভারও সহ

বিদ্রোহ, অভ্যুত্থান ও বিপ্লব' এর ধারণার ব্যাখ্যা

বিদ্রোহ, অভ্যুত্থান ও বিপ্লব' এর ধারণাটি ব্যাখ্যা করো। বিদ্রোহ , অভ্যুত্থান ও বিপ্লব তিনটি শব্দ আপাতভাবে একইরকম মনে হলেও ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে তিনটি শব্দের মধ্যে মূলগত পার্থক্য আছে।  বিদ্রোহ : যেমন বিদ্রোহের ভিত্তি হল প্রতিবাদ। প্রচলিত ব্যবস্থার প্রতি অনাস্থা প্রকাশ ও বিরোধিতা করা। স্বল্পমেয়াদী বা দীর্ঘমেয়াদী, স্বশস্ত্র বা অস্ত্রছাড়া আন্দোলন। মূলত শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে মতপ্রকাশ। এটি একক বা সমষ্টিগত দুইভাবে সংঘটিত হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ নীল-বিদ্রোহ । তবে এর প্রকৃতি হল ধীরগতিতে পরিবর্তন ঘটে। অভ্যুত্থান : এর মূল চরিত্র হল সামরিক এবং প্রধান লক্ষ্যবস্তু হল কোন সরকার বা রাষ্ট্রব্যবস্থা। এটি আবশ্যিকভাবে সমষ্টিগত হবে। কখনো কখনো নিজ গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে একটি অংশের প্রতিবাদ হিসাবে আকস্মিকভাবে এটি ঘটে থাকে। যেমন- ১৯৪৬ খ্রিঃ ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীতে নৌবিদ্রোহ 'কে অভ্যুত্থান হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। বিপ্লব:  বিপ্লব হল প্রচলিত ব্যবস্থার দ্রুত, ব্যাপক ও আমূল পরিবর্তন। এটি সশস্ত্র বা অস্ত্রহীন অথবা শান্তিপূর্ণও হতে পারে। এটির সামাজিক, রাজনৈতিক ও অন্যান্য প্রভাব অনেক বেশি। বিপ্লবের মাধ্যমে দেশ

বারাসাত বিদ্রোহের প্রকৃতি বিশ্লেষণ

বারাসাত বিদ্রোহের প্রকৃতি বিশ্লেষণ করো। ইসলামের পুনরুজ্জীবন ও ইসলাম ধর্মের কুসংস্কারের বিরুদ্ধে আন্দোলন হিসাবে এই আন্দোলনের সূত্রপাত হয়। ১) সাম্প্রদায়িক আন্দোলন : ডঃ রমেশচন্দ্র মজুমদার , বিহারীলাল সরকার, কুমুদ রঞ্জন মল্লিক প্রমুখ একে ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক আন্দোলন বলেছেন। ডঃ ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত এই বিদ্রোহকে হিন্দুদের বিরুদ্ধে মুসলমানদের সংগঠিত আক্রমণ বলে অভিহিত করেছেন। ২) জমিদার বিরোধী : পুঁড়ার জমিদার কৃষ্ণদেব রায়ের সঙ্গে তিতুমীরের বাহিনীর সংঘর্ষ হয়। হিন্দু-মুসলিম উভয়শ্রেণীর মানুষ জমিদারের অত্যাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে। তাই এটিকে জমিদার বিরোধী , হিন্দু-মুসলিমের ঐক্যের প্রতীক ও অসাম্প্রদায়িক আন্দোলন বলে ঐতিহাসিক হান্টার , থর্নটন মন্তব্য করেন। ৩) কৃষক বিদ্রোহ : ঐতিহাসিক নরহরি কবিরাজ , ও কেয়ামুদ্দিন আহমেদ এই বিদ্রোহ কে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন বলে মনে করেন। নীলকর ও ব্রিটিশ বণিকদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ছিল এটি। ডঃ বিনয়ভূষণ চৌধুরির মতে ওয়াহাবি আন্দোলন বা বারাসাত বিদ্রোহ ছিল কৃষক বিদ্রোহ । বারাসাত-বসিরহাট অঞ্চলে ব্রিটিশের শাসন লোপ পায় ও কৃষক শ্রেণীর মানুষ ক্ষমতা দখল করে স্বল্প সময়ের জন্য। ৪) ন

বহুল পঠিত প্রশ্ন-উত্তর এখানে

সাঁওতাল বিদ্রোহের কারণ ও ফলাফল আলোচনা করো

অথবা           টীকা লেখা:- সাঁওতাল বিদ্রোহ  উনবিংশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে যে সমস্ত উপজাতি বিদ্রোহ হয়েছিল ।তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সাঁওতাল বিদ্রোহ। ব্রিটিশ সরকারের উপনিবেশিক শাসন বজায় রাখার জন্য,  ব্রিটিশ সরকার যে সমস্ত ভূমি সংস্করণ করেছিল তার  প্রভাব ভারতীয় উপজাতিদের মধ্যে ব্যাপক ভাবে প্রতিফলিত হয়েছিল।  তাই শেষ পর্যন্ত 1855 খ্রিস্টাব্দে সাঁওতালরা বিদ্রোহ করতে বাধ্য হয় । যা সাঁওতাল বিদ্রোহ নামে পরিচিত।    সাঁওতাল বিদ্রোহের কারণ বিহারের রাজমহল থেকে পশ্চিমবঙ্গে বিস্তীর্ণ  অঞ্চলের  শান্তিপ্রিয় সাঁওতালরা বিভিন্ন কারণে ব্রিটিশদের উপর রেগে গিয়েছিল। যা হলো নিম্নরুপ:-  ক) জমির উপর ব্রিটিশদের অধিকার :- সাঁওতালরা জঙ্গল পরিষ্কার করে  জমি তৈরি করে  চাষবাস শুরু করলে । ব্রিটিশ সরকার সাঁওতালদের কাছে  এমন বিপুল হারে রাজস্বের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। যা সাঁওতালরা জমি ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।    খ) সাঁওতালদের সর্বস্বান্ত :- ব্রিটিশ সরকার  ভূমিরাজস্ব ছাড়াও অন্যান্য কর ও ঋণের দায়ভার সাঁওতালদের উপর চাপিয়ে দেয় । ফলে সাঁওতালরা সর্বস্বান্ত হয়ে পড়ে।  গ)   সাঁওতালদের ঋণগ্রস্ত :- 50 থেকে 500 হরে

কে, কবে, কেন ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন?

ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ প্রতিষ্ঠার কারণ  লর্ড ওয়েলেসলি ১৮০০ সালে কলকাতায় ‘ ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ’  প্রতিষ্ঠা করেন। কারণ, তারা মনে করতেন, ১) ভারতীয়রা আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষা পেলে ভবিষ্যতে তাদের মধ্যে  স্বাধীনতার স্পৃহা জেগে উঠবে  এবং এদেশে কোম্পানির শাসন সংকটের মধ্যে পড়বে। ২) এছাড়া ভারতীয়দের  ধর্মভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ করলে  তারা ব্রিটিশ সরকারের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে উঠতে পারে। ৩) এই আশঙ্কা থেকেই মূলত তারা  আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষার পরিবর্তে সংস্কৃত ও আরবি-ফারসি শিক্ষার ওপর গুরুত্ব  আরোপ করেন এবং  ধর্মভিত্তিক সনাতন শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে ইংরেজ রাজকর্মচারীদের ভারতীয়দের ধর্ম-সমাজ-সংস্কৃতি বিষয়ে শিক্ষিত করে  এদেশে কোম্পানির শাসনকে সুদৃঢ় করার পরিকল্পনা করেন। মূলত, এই কারণেই লর্ড ওয়েলেসলি ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ গড়ে তোলেন।

খুৎকাঠি প্রথা কী?

খুঁৎকাঠি বা কুন্তকট্টি হল এক ধরনের ভূমি ব্যবস্থা যা মুন্ডা সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রচলিত ছিল। এই ব্যবস্থায় জমিতে ব্যক্তি মালিকানার পরিবর্তে যৌথ মালিকানা স্বীকৃত ছিল। ব্রিটিশ সরকার এই ব্যবস্থা বাতিল করে ব্যক্তি মালিকানা চালু করলে মুন্ডাদের জমি গুলি বহিরাগত জমিদার, ঠিকাদার ও মহাজনদের হাতে চলে যায়। ফলে মুন্ডারা বিদ্রোহ ঘোষণা করে। অবশেষে ১৯০৮ সালে ছোটনাগপুর প্রজাস্বত্ব আইনের মাধ্যমে ব্রিটিশ সরকার মুন্ডাদের এই প্রথা (ভূমি ব্যবস্থা) ফিরিয়ে আনে। অন্যান্য প্রশ্ন : ভারতীয় অরণ্য আইন কী? ব্রিটিশ সরকার কেন অরণ্য আইন পাশ করেছিল? বারাসাত বিদ্রোহ কী? বাঁশেরকেল্লা কী? খুৎকাঠি প্রথা কী? দাদন প্রথা কী? সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহ ব্যর্থ হয় কেন? ওয়াহাবি আন্দোলনের লক্ষ্য আদর্শ কী ছিল? ফরাজি আন্দোলন কি ধর্মীয় পুনর্জাগরণের আন্দোলন? তিতুমীর স্মরণীয় কেন? দুদুমিয়া স্মরণীয় কেন? দামিন-ই-কোহ কী? মুন্ডা বিদ্রোহের লক্ষ্য কী ছিল?  নীল বিদ্রোহে হরিশচন্দ্র মুখার্জীর ভূমিকাকী ছিল? নীল বিদ্রোহে খ্রিস্টান মিশনারীদের ভূমিকা কী ছিল? 'দার-উল-হারব' এবং 'দার-উল- ইসলাম' কথার অর্থ কী? নীলকররা নীল চাষীদের উপর

নতুন সামাজিক ইতিহাস কী?

ইতিহাস হল মানব সভ্যতার ক্রমবিবর্তনের ধারাবাহিক বিবরণ । অতীতে ইতিহাসে শুধুমাত্র রাজা-মহারাজা কিংবা অভিজাতদের কথা লেখা থাকতো। বর্তমানে এই ধারায় পরিবর্তন এসেছে। এখন এখানে সাধারণ মানুষ, নিম্নবর্গীয় সমাজ, এমনকি প্রান্তিক অন্তজদের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয় জীবনের বিবর্তনের কথা ও সমানভাবে গুরুত্ব পাচ্ছে। আধুনিক ইতিহাসচর্চার এই ধারা  নতুন সামাজিক ইতিহাস  নামে পরিচিত।

নীল বিদ্রোহের কারণ কী? এই বিদ্রোহের বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব লেখ।

নীল বিদ্রোহ : কারণ, বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব : আঠারো শতকে ইংল্যান্ডের শিল্প বিপ্লব হয়। ফলে সেখানে বস্ত্র শিল্পের প্রয়োজনে নীলের চাহিদা বাড়ে। ১৮৩৩ সালে সনদ আইন এর ফলে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একচেটিয়া বাণিজ্যের অধিকার লুপ্ত হলে কোম্পানির কর্মচারিরা ব্যক্তিগতভাবে নীল চাষে নেমে পড়ে। অধিক মুনাফার আশায় এইসব কর্মচারীরা নীল চাষীদের উপর সীমাহীন শোষণ ও অত্যাচার শুরু করে। এই শোষণ ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে নীল চাষিরা হাজার ১৮৫৯ সালে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। এই বিদ্রোহ নীল বিদ্রোহ নামে খ্যাত।  নীল বিদ্রোহের কারণ  (পটভূমি ) : নীল বিদ্রোহের পিছনে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ লক্ষ্য করা যায়। ১) কৃষকের ক্ষতি: নীল চাষের চাষের যে খরচ হতো মিল বিক্রি করে চাষির সে খরচ উঠতো না। ফলে চাষীরা ক্ষতিগ্রস্ত হতো। ২) খাদ্যশস্যের অভাব:  নীল চাষ করতে গিয়ে কৃষকেরা খাদ্যশস্যের উৎপাদন প্রয়োজন মতো করতে পারত না। কারণ নীলকর সাহেবরা চাষীদের নীল চাষে বাধ্য করতেন। ফলে চাষির ঘরে খাদ্যাভাব দেখা দেয়। ৩) নীলকরদের অত্যাচার :  চাষিরা নীল চাষ করতে অস্বীকার করলে নীলকর সাহেবরা তাদের উপর নির্মম অত্যাচার। ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে

ইলবার্ট বিল কি?

লর্ড রিপন ভারতে আসার আগে কোন ভারতীয় বিচারকরা কোন অভিযুক্ত ইংরেজের বিচার করতে পারত না। এই বৈষম্য দূর করতে লর্ড রিপনের পরামর্শে তার আইন সচিব ইলবার্ট একটি বিলের খসড়া রচনা করেন। এই  খসড়া বিলে ভারতীয় বিচারকদের ইংরেজ অভিযুক্তের বিচার করার অধিকার দেওয়া হয়। এই খসড়া বিলই ইলবার্ট বিল (১৮৮৩) নামে পরিচিত। এই বিলের পক্ষে এবং বিপক্ষে তীব্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়। ঐতিহাসিক রমেশচন্দ্র মজুমদার বলেন, ইলবার্ট বিল আন্দোলন ছিল ভারতীয় জাতীয়তাবাদের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। বিকল্প প্রশ্ন : কতসালে ইলবার্ট বিল পাস হয়? এর উদ্দেশ্য কী ছিল? অন্যান্য প্রশ্ন : বিশ্লেষণমূলক প্রশ্ন । প্রশ্নের মান - ৪ (সাত-আট বাক্যে উত্তর)   ইলবার্ট বিল কী? এই বিলের পক্ষে বিপক্ষে কী প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছিল? ইলবার্ট বিল আন্দোলনের গুরুত্ব লেখো। ব্যাখ্যামূলক প্রশ্ন । প্রশ্নের মান - ৮ (পনের-ষোলো বাক্যে উত্তর) ইলবার্ট বিল আন্দোলন বলতে কী বোঝ? এই আন্দোলনের তাৎপর্য কী ছিল? 

১৮৫৭ সালের বিদ্রোহের চরিত্র ও প্রকৃতি আলোচনা করো:

১৮৫৭ খ্রীষ্টাব্দের বিদ্রোহের প্রকৃতি: ১৮৫৭ খ্রীষ্টাব্দের বিদ্রোহের প্রকৃতি নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতবিরোধ আছে. এক পক্ষের ঐতিহাসিকরা বলেন, এটি ছিল নিছক সিপাহী বিদ্রোহ। অপরপক্ষ বলেন, এটি ছিল জাতীয় আন্দোলন। তা ছাড়াও কেউ কেউ আবার এই বিদ্রোহকে ভারতের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম, সামন্ততান্ত্রিক প্রতিবাদ, কৃষক বিদ্রোহ, মুসলিম চক্রান্ত প্রভৃতি নানা নাম অভিহিত করেছেন। ১) সিপাহী বিদ্রোহ:   ইংরেজ ঐতিহাসিক চার্লস রেক্স, হোমস, এবং ভারতীয়দের মধ্যে কিশোরীচাঁদ মিত্র, দুর্গাদাস বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহকে নিছক সিপাহী বিদ্রোহ বলেছেন। তাঁদের বক্তব্য - ক)১৮৫৭ সালের বিদ্রোফের চালিকাশক্তি ছিলেন সিপাহীরাই। তাদের অসন্তোষ থেকেই বিফ্রহের সূচনা হয়েছিল। খ) এই বিদ্রোহে ভারতীয় জাতীয় চেতনার অগ্রদূত শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণী যোগদান করেনি বা ভারতের সমস্ত অঞ্চলের রাজারা আন্দোলনকে সমর্থন করেনি। ২) জাতীয় আন্দোলন: ঐতিহাসিক নর্টন, জন কে, কার্ল মার্কস প্রমুখ ১৮৫৭ খ্রীষ্টাব্দের বিদ্রোহকে জাতীয় বিদ্রোহ বলে অভিহিত করেছেন। তাঁদের মতে , ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের জনগণ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে আন্দোলনে যোগদান করেছিল; বিদ্রোহীরা

মানুষ, প্রকৃতি ও শিক্ষার সমন্বয় বিষয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চিন্তাধারা বিশ্লেষণ করো।

রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাদর্শন ও জীবনদর্শনের প্রধান এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো প্রকৃতি। তাঁর মতে, প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থার একটি বড় ত্রুটি হল, প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে শিক্ষার বিচ্ছিন্নতা। আর এজন্য আমাদের দেশের শিক্ষা শুধু অসম্পূর্ণই নয়, যান্ত্রিক এবং হৃদয়হীনও বটে। শিক্ষা ও তার লক্ষ্য : তাঁর মতে, শিক্ষা হলো বাইরের প্রকৃতি ও অন্ত:প্রকৃতির মধ্যে সমন্বয় সাধন। এই সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে জাতির উপযোগী, দক্ষ ও কল্যাণকামী সদস্য হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলাই হলো শিক্ষার লক্ষ্য। লক্ষ্য পূরণের উপায় : তাঁর মতে, এই লক্ষ্য পূরণের জন্য একজন শিশুর প্রকৃতির সান্নিধ্যে এসে তার দেহ মন সুসংগঠিত করতে হয়। এটা করলেই সে পরমসত্তাকে উপলব্ধি করতে পারে। লক্ষ্য পূরণের উদ্যোগ : শান্তিনিকেতনের ভাবনা : ১) শান্তিনিকেতন প্রতিষ্ঠা : এই কারণেই তিনি প্রাচীন তপবনের শিক্ষার আদর্শ অনুপ্রাণিত হয়ে শান্তিনিকেতন স্থাপন করেছিলেন। এখানে শিক্ষক ও শিক্ষার্থী প্রকৃতির স্নিগ্ধ ও সুশীতল পরিবেশে বসবাস করে শিক্ষা দান ও শিক্ষা গ্রহণ সম্পন্ন করতে পারে। ২) হিতৈষী তহবিল তৈরি : পল্লীগ্রামের মানুষের কল্যাণে এবং কৃষির উন্নতির জন্য গড়ে তোলেন হিতৈষী তহবি

শিক্ষার চুঁইয়ে পড়া নীতি' বলতে কী বোঝ?

'শিক্ষার চুঁইয়ে পড়া নীতি' বলতে কী বোঝ? লর্ড বেন্টিং-এর আইন সচিব টমাস ব্যাবিংটন মেকলে  ১৮৩৫  সালে ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারের দাবি জানিয়ে একটি প্রস্তাব দেন যা  'মেকলে মিনিটস'  নামে পরিচিত। এই প্রস্তাবে পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রবর্তনের স্বপক্ষে যুক্তি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, এদেশের উচ্চ ও মধ্যবিত্তদের মধ্যে ইংরেজি শিক্ষার প্রসার ঘটবে এবং তাদের দ্বারা তা চুইয়ে ক্রমশ সাধারণ দেশবাসীর মধ্যে ছড়িয়ে পড়বে। ফলে ভারতীয়রা রুচি, মত, নৈতিকতা ও বুদ্ধিমত্তায় ইংরেজদের মত হয়ে উঠবে। ইংরেজি শিক্ষার প্রসারের উদ্দেশ্যে মেকলের নেওয়া এই নীতি   ' চুঁইয়ে পড়া নীতি'   নামে পরিচিত। 

তিন আইন কী?

 তিন আইন কী ব্রাহ্ম সমাজ আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ফলাফল হল ' তিন আইন'   পাস হওয়া।  ১৮৬৬ সালে কেশবচন্দ্র সেনের নেতৃত্বে ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজ বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ ও অসবর্ণ বিবাহ বিষয়ে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তোলেন। এই আন্দোলনের প্রভাবে ব্রিটিশ সরকার উৎসাহিত হয় এবং  ১৮৭২  সালে একটি আইন প্রণয়ন করে। এই আইনের ফলে  বাল্যবিবাহ  ও  বহুবিবাহ  প্রথা নিষিদ্ধ এবং   অসবর্ণ বিবাহ  বৈধ বলে ঘোষণা করা হয়। বিবাহ সংক্রান্ত এই তিনটি বিষয়কে কেন্দ্র করে তৈরি এই আইন ইতিহাসে ' তিন আইন'  নামে পরিচিত।