জাতীয়তাবাদ প্রসারে হিন্দুমেলার ভূমিকা বিশ্লেষণ করো। - ২০২২
জাতীয়তাবাদ প্রসারে হিন্দুমেলার ভূমিকা |
ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে ভারতে সাধারণ মানুষের মধ্যে জাতীয় চেতনার জাগরণে যে সমস্ত রাজনৈতিক সংগঠন গড়ে উঠেছিল তার বেশিরভাগই ছিল ভারতীয় সামাজিক ও ধর্মীয় ঐতিহ্যকে উপেক্ষা করে তৈরি।
হিন্দু মেলার প্রতিষ্ঠা :
এই প্রেক্ষাপটে রাজনারায়ন বসু উপলব্ধি করেন জাতীয় গৌরবগাথার উন্মেষ ছাড়া জাতির মহত্বলাভ সম্ভব নয়। রাজনারায়ন বসুর প্রেরণা ও ভাবধারায় নবগোপাল মিত্র ১৮৬৭ খ্রীঃ কলকাতায় হিন্দু মেলা প্রতিষ্ঠা করেন।হিন্দু মেলা প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য :
হিন্দু মেলার দ্বিতীয় অধিবেশনেই সম্পাদক জ্ঞানেন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেন- আমাদের এই মিলন সাধারণ ধর্ম-কর্মের জন্য নয়, কোনো বিশেষ সুখের জন্য নয়, কোনো আমোদ-প্রমোদের জন্য নয়। এটি স্বদেশের জন্য, ভারতের জন্য। হিন্দু মেলা প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ছিল -
- সাধারণ মানুষ বিশেষ করে শিক্ষিত যুবকদের মধ্যে হিন্দুধর্মের অতীত গৌরবের কথা ছড়িয়ে দেওয়া।
- দেশীয় ভাষা চর্চা করা, জাতীয় প্রতীকগুলিকে মর্যাদা দেওয়া প্রভৃতি।
- প্রাচীন হিন্দু ঐতিহ্য তুলে ধরে নবগোপাল মিয় এদেশে পাশ্চাত্য সভ্যতা ও সংস্কৃতির প্রসার প্রতিরোধের উদ্যোগ নেন।
- এই উদ্দেশ্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তৈরি করে যুবকদের দৈহিক শক্তি বৃদ্ধি ও শৃংখলাবন্ধ হওয়ার শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। যাতে তারা বৃটিশ স্যগ্রাজ্যবাদী ও উপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে সংগ্রামে লিপ্ত হতে পারে।
- সাধারণ মানুষকে তাদের অতীত ঐতিহ্য সম্বন্ধে অবহিত করা হয়।
- কবি, সাহিত্যক, চিন্তাবিদ, শিল্পীদের অবদান সম্পর্কে সচেতন করা। শিল্পী, লেখকদের পুরস্কার দেওয়ার ব্যবস্থা করা।
হিন্দু মেলার গুরুত্ব :
- কবি, সাহিত্যক, চিন্তাবিদ, শিল্পীদের অবদান সম্পর্কে সচেতন করে তোলা সম্ভব হয়েছিল।
- শিল্পী, লেখকদের পুরস্কার দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
- এই মেলায় সদস্যদের ইংরেজিতে কথাবর্তা বলা বারণ ছিল।
- এই মেলা উপলক্ষ্যে সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর, দ্বিজেন্দ্রনাথ এবং মনোমোহন বসু দেশাত্ববোধক গান রচনা করেছিলেন।
- এই মেলা 'ন্যাশনাল পেপার' নামক পত্রিকা প্রকাশ করে, যার লক্ষ্য ছিল দেশবাসীর মধ্যে জাতীয়তাবোধ জাগ্রত করা।
- এ ছাড়াও মেলার উদ্দ্যোগে জাতীয় বিদ্যালয়, জিমনাসিয়াম এবং গ্রন্থাগার স্থাপিত হয়েছিল।
-----------xx----------
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন