সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

মাধ্যমিক ইতিহাস সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর - ২০২৩

 মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষা — ২০২৩ 

ইতিহাস সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর - ২০২৩

বিভাগ ‘গ’

৩। দু'টি অথবা তিনটি বাক্যে নিম্নলিখিত প্রশ্নগুলির উত্তর দাও (যে কোনো এগারোটি) :                                         ২x১১ = ২২

৩.১) ভারতীয় জাতীয়তাবাদের ইতিহাসে ১৯১১ খ্রিস্টাব্দ গুরুত্বপূর্ণ কেন?

King George 12' ই ডিসেম্বর ১৯১১ A.D., ঘোষণা করেন রাজধানী কলকাতা থেকে দিল্লীতে স্থানান্তরের। এজন্য Royal Durbar দিল্লীতে অনুষ্ঠিত হয়। মোহনবাগান হল প্রথম ভারতীয় দল হিসাবে বিদেশী দলের বিরুদ্ধে 1911 সালে ফুটবলে জয় ছিনিয়ে আনে। 1911 সালে বঙ্গভঙ্গ রদ ঘোষণা করা হয়।

৩.২) 'সরকারি নথিপত্র' বলতে কী বোঝায়?

পুলিশ বিভাগের রিপোর্ট ও সরকারী চিঠিপত্র, গোয়েন্দা বিভাগের রিপোর্ট, বিভিন্ন তথ্য, সরকারি আধিকারিকদের প্রতিবেদন ও চিঠিপত্র, এসবকেই সরকারি নথিপত্র বলা চলে।

৩.৩) কাদম্বিনী (বসু) গঙ্গোপাধ্যায় স্মরণীয়া কেন?

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম দুই মহিলা গ্র্যাজুয়েটের নাম হলো চন্দ্রমুখী বসু ও কাদম্বিনী (বসু) গঙ্গোপাধ্যায়। 1883 খ্রিস্টাব্দে এঁনারা বঙ্গদেশের প্রথম মহিলা স্নাতক ছিলেন। পরবর্তী জীবনে কাদম্বিনী দেবী প্রথম মহিলা চিকিৎসক রূপে পরিচিতি হন।

৩.৪) কোম্পানির শিক্ষাক্ষেত্রে 'চুঁইয়ে পড়া নীতি' বলতে কী বোঝায়?

জনশিক্ষা কমিটির সভাপতি লর্ড মেকলে তাঁর এক প্রস্তাবে লর্ড বেন্টিঙ্ক' কে বলেন যে, জল যেভাবে ওপর থেকে নিচের দিকে ছড়িয়ে পড়ে, ভারতে উচ্চ ও মধ্যবিত্তের মধ্যে ইংরেজি শিক্ষার প্রসার ঘটলে তা ক্রমশ সাধারণ দেশবাসীর মধ্যে ছড়িয়ে পড়বে। মেকলের এই নীতিই 'চুঁইয়ে পড়া নীতি' নামে পরিচিত। 

৩.৫) দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্ত এজেন্সি কেন গড়ে তোলা হয়েছিল?

কোলবিদ্রোহের ফলে ব্রিটিশ সরকার কোলদের জন্য দঃপঃ সীমান্ত এজেন্সি নামে পৃথক অঞ্চল গঠন করে এবং ঐ অঞ্চলে কোলদের প্রচলিত প্রথা চালু করেন।

৩.৬) ফরাজি আন্দোলনের ব্যর্থতার কারণ কী?

(i) দুদুমিয়াঁর মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র নোয়া মিয়া ফরাজি আন্দোলনের নেতৃত্ব গ্রহণ করে ইসলামের শুদ্ধিকরণ আরম্ভ করায় হিন্দুরা এর থেকে সরে যায়।

(ii) এই আন্দোলন শুধুমাত্র বাংলায় সীমাবন্ধ ছিল। দেশে ছড়িয়ে পড়েনি।

(iii) কোম্পানির সরকার, জমিদার, নীলকর সাহেব, মহাজনদের মিলিত জোটের বিরুদ্ধে বিদ্রোহীরা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে অসফল হন।

৩.৭) মহারাণির ঘোষণাপত্রের (১৮৫৮) প্রকৃত উদ্দেশ্য কী ছিল?

1857 খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহের পরিপ্রেক্ষিতে মহারানির ঘোষণাপত্রের মূল উদ্দেশ্য ছিল কোম্পানির অপশাসনের অবসান ঘটিয়ে ব্রিটিশ রাজশক্তি কর্তৃক ভারতের প্রত্যক্ষ শাসনভার গ্রহণ করা। দ্বিতীয়ত, ব্রিটিশ সরকারের নতুন নীতি ও আদর্শের সঙ্গে ভারতবাসীর যোগসাধন ঘটানো।

৩.৮) জমিদারসভা ও ভারতসভার মধ্যে দুটি পার্থক্য লেখো।

১। জমিদার সভা মূল উদ্দেশ্য ছিল জমিদারের স্বার্থরক্ষা করা

ভারত সভার মূল উদ্দেশ্য ছিল দেশের জনগণকে বৃহত্তর রাজনৈতিক কর্মকান্ডে শামিল করা।

২। জমিদার সভা দ্বারকানাথ ঠাকুরের উদ্যোগে ও রাজা রাধাকান্ত দেবের সভাপতিত্বে ইহা প্রতিষ্ঠিত হয়।

ভারত সভার সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, আনন্দমোহন বসু প্রমুখের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়।

৩.৯) ড. মহেন্দ্রলাল সরকার স্মরণীয় কেন?

ড: মহেন্দ্রলাল সরকার (1833-1904 খ্রিঃ) ছিলেন ভারতের দ্বিতীয় MD এবং খ্যাতনামা প্রথম হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক। তিনি 1876 খ্রিস্টাব্দের 29 জুলাই কলকাতার বৌবাজার স্ট্রিটে IACS প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর দৃঢ় চিত্ততায় ভারতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষা ও চর্চার পথ সুগম হয়।


৩.১০) বাংলার সাংস্কৃতিক জীবনে ছাপাখানার বিকাশের প্রভাব কতটা?

(1) ছাপখানার বিকাশের ফলে বাংলা ভাষায় প্রচুর বই ছাপা হইতে থাকে। বাংলা গদ্য সাহিত্যের বিকাশের পথ মসৃন হয়।

(ii) ছাপাখানার বিকাশের ফলে সংবাদপত্র ও বিভিন্ন পত্রপত্রিকার দ্বারা জনগণ দেশবিদেশের বিভিন্ন সংবাদের ক্ষেত্রে/সাথে পরিচিত লাভ করে। তাদের জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধি পায়।

৩.১১) আদুরি সীতারাম রাজু কে ছিলেন?

৪ জুলাই ১৮৯৭ সালে জন্ম নেন এবং ৭ই মে ১৯২৪ পরলোক গমন করেন। এঁনার অন্য নাম রামচন্দ্র রাজু। তিনি একজন ভারতীয় বিপ্লবী, যিনি ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের সাথে যুক্ত ছিলেন। তিনি 'মান্যম বীরুদ উপাধি পান। যার অর্থ 'অরণ্যের বীর'। ১৯২২-২৪ সালের রুম্পা উপজাতিদের বিদ্রোহে তিনি ইংরেজদের বিরুদ্ধে নেতৃত্ব দেন।

৩.১২) 'মীরাট যড়যন্ত্র মামলাটি কী?

ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে 1929 খ্রিস্টাব্দে 33 জন শ্রমিক, নেতাকে গ্রেফতার করে তাদের বিরুদ্ধে মীরটি ষড়যন্ত্র মামলা করা হয়। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন মুজাফ্ফর আহমেদ, এস.এ. ডাঙ্গে, মিরাজ কর, পি.সি যোশি, গঙ্গাধর অধিকারী প্রমুখ। কমিউনিষ্টদের প্রতিরোধ করতে এই মামলা শুরু করা হয়।

৩.১৩) দীপালি সথে কেন প্রতিষ্ঠিত হয়?

লীলা (নাগ) রায় 1923 খ্রিস্টাব্দে দীপালি সঙ্ঘ, প্রতিষ্ঠা করেন। একদিকে মেয়েদের শিক্ষিত, আত্মসচেতন, স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলতে ও অন্য দিকে স্বদেশ প্রেম ও বৈপ্লবিক চিন্তা-চেতনার উন্মেষ ঘটাতে এই সংঘ তৈরি হয়। প্রথম দিকে এখানে প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার যুক্ত ছিলেন।

৩.১৪) গুরুচাঁদ ঠাকুর স্মরণীয় কেন?

হরিচাঁদ ঠাকুরের পুত্র গুরুচাঁদ ঠাকুর উত্তরাধিকার সূত্রে ধর্মগুরুর পদ লাভ করে। নমঃশূদ্রদের রাজনৈতিকভাবে,

সংগঠিত করেন। এজন্য তিনি নমঃশূদ্র ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন গড়ে তোলেন। এছাড়া নমঃশূদ্রের রাজনৈতিক ও সামজিক উন্নতির জন্য গড়ে ওঠে 'নিখিল বঙ্গা নমঃশূদ্র সমিতি ও বেঙ্গল নমঃশূদ্র অ্যাসোসিয়েশন', 'বেঙ্গাল ডিপ্রেসড ক্লাসেস অ্যাসোসিয়েশন প্রভৃতি। এর আন্দোলনের ফলেই 1919 সালের আদমশুমারিতে নমঃশূদ্র আইনটি স্বীকৃত হয় ও নমঃশূদ্র নাম ও আইনি স্বীকৃতি পায়। তাঁর উদ্যোগে 3952টি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয়। মেয়েদের ধাত্রীবিদ্যা ও নার্সিং ট্রেনিং দেওয়ার বন্দোবস্ত হয়।

৩.১৫) ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল ভারতের দেশীয় রাজ্যগুলির স্বাধীনতার দাবিকে অগ্রাহ্য করেছিলেন কেন?

উঃ বল্লভভাই প্যাটেল অত্যন্ত দূরদর্শিতা ও কূটনৈতিক দক্ষতার সাহায্যে ভারতের দেশীয় রাজ্যগুলির অন্তর্ভুক্তি ও স্বাধীনতার দাবিতে একটি সমাধানসূত্র খুঁজে বের করেন। 1947 সালের ১ই জুলাই প্যাটেলের পক্ষ থেকে দেশীয় রাজ্যের রাজাদের অনুরোধ জানান হয় তাঁরা যেন তাঁদের রাজ্যের বৈদেশিক কার্যকলাপ, পরিবহন সংক্রান্ত দায়দায়িত্ব ও প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত ক্ষমতা ভারত সরকারের হাতে তুলে দেয়। নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে ভারত কোনো আপস করবে না, জানিয়ে দেওয়া হয়।

৩.১৬) রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন (১৯৫৩) কেন গঠিত হয়েছিল?

উঃ ভাষাভিত্তিক রাজ্য পুনর্গঠনের দাবি ভারতের স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই উঠতে শুরু করে। এই দাবির যৌক্তিকতা বিচারের 1953 খ্রিস্টাব্দে স্বরাষ্ট্র দপ্তরের উদ্যোগে সুপ্রীম কোর্টের বিচারপতি সৈয়দ ফজল আলির সভাপতিত্বে কে.এম. পানিকর ও হৃদয়নাথ কুঞ্জুর-কে নিয়ে রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন গঠিত হয়েছিল।

মন্তব্যসমূহ

বহুল পঠিত প্রশ্ন-উত্তর এখানে

সাঁওতাল বিদ্রোহের কারণ ও ফলাফল আলোচনা করো

অথবা           টীকা লেখা:- সাঁওতাল বিদ্রোহ  উনবিংশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে যে সমস্ত উপজাতি বিদ্রোহ হয়েছিল ।তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সাঁওতাল বিদ্রোহ। ব্রিটিশ সরকারের উপনিবেশিক শাসন বজায় রাখার জন্য,  ব্রিটিশ সরকার যে সমস্ত ভূমি সংস্করণ করেছিল তার  প্রভাব ভারতীয় উপজাতিদের মধ্যে ব্যাপক ভাবে প্রতিফলিত হয়েছিল।  তাই শেষ পর্যন্ত 1855 খ্রিস্টাব্দে সাঁওতালরা বিদ্রোহ করতে বাধ্য হয় । যা সাঁওতাল বিদ্রোহ নামে পরিচিত।    সাঁওতাল বিদ্রোহের কারণ বিহারের রাজমহল থেকে পশ্চিমবঙ্গে বিস্তীর্ণ  অঞ্চলের  শান্তিপ্রিয় সাঁওতালরা বিভিন্ন কারণে ব্রিটিশদের উপর রেগে গিয়েছিল। যা হলো নিম্নরুপ:-  ক) জমির উপর ব্রিটিশদের অধিকার :- সাঁওতালরা জঙ্গল পরিষ্কার করে  জমি তৈরি করে  চাষবাস শুরু করলে । ব্রিটিশ সরকার সাঁওতালদের কাছে  এমন বিপুল হারে রাজস্বের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। যা সাঁওতালরা জমি ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।    খ) সাঁওতালদের সর্বস্বান্ত :- ব্রিটিশ সরকার  ভূমিরাজস্ব ছাড়াও অন্যান্য কর ও ঋণের দায়ভার সাঁওতালদের উপর চাপিয়ে দেয় । ফলে সাঁওতালরা সর্বস্বান্ত হয়ে পড়ে।  গ)   সাঁওতালদের ঋণগ্রস্ত :- 50 থেকে 500 হরে

কে, কবে, কেন ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন?

ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ প্রতিষ্ঠার কারণ  লর্ড ওয়েলেসলি ১৮০০ সালে কলকাতায় ‘ ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ’  প্রতিষ্ঠা করেন। কারণ, তারা মনে করতেন, ১) ভারতীয়রা আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষা পেলে ভবিষ্যতে তাদের মধ্যে  স্বাধীনতার স্পৃহা জেগে উঠবে  এবং এদেশে কোম্পানির শাসন সংকটের মধ্যে পড়বে। ২) এছাড়া ভারতীয়দের  ধর্মভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ করলে  তারা ব্রিটিশ সরকারের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে উঠতে পারে। ৩) এই আশঙ্কা থেকেই মূলত তারা  আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষার পরিবর্তে সংস্কৃত ও আরবি-ফারসি শিক্ষার ওপর গুরুত্ব  আরোপ করেন এবং  ধর্মভিত্তিক সনাতন শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে ইংরেজ রাজকর্মচারীদের ভারতীয়দের ধর্ম-সমাজ-সংস্কৃতি বিষয়ে শিক্ষিত করে  এদেশে কোম্পানির শাসনকে সুদৃঢ় করার পরিকল্পনা করেন। মূলত, এই কারণেই লর্ড ওয়েলেসলি ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ গড়ে তোলেন।

খুৎকাঠি প্রথা কী?

খুঁৎকাঠি বা কুন্তকট্টি হল এক ধরনের ভূমি ব্যবস্থা যা মুন্ডা সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রচলিত ছিল। এই ব্যবস্থায় জমিতে ব্যক্তি মালিকানার পরিবর্তে যৌথ মালিকানা স্বীকৃত ছিল। ব্রিটিশ সরকার এই ব্যবস্থা বাতিল করে ব্যক্তি মালিকানা চালু করলে মুন্ডাদের জমি গুলি বহিরাগত জমিদার, ঠিকাদার ও মহাজনদের হাতে চলে যায়। ফলে মুন্ডারা বিদ্রোহ ঘোষণা করে। অবশেষে ১৯০৮ সালে ছোটনাগপুর প্রজাস্বত্ব আইনের মাধ্যমে ব্রিটিশ সরকার মুন্ডাদের এই প্রথা (ভূমি ব্যবস্থা) ফিরিয়ে আনে। অন্যান্য প্রশ্ন : ভারতীয় অরণ্য আইন কী? ব্রিটিশ সরকার কেন অরণ্য আইন পাশ করেছিল? বারাসাত বিদ্রোহ কী? বাঁশেরকেল্লা কী? খুৎকাঠি প্রথা কী? দাদন প্রথা কী? সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহ ব্যর্থ হয় কেন? ওয়াহাবি আন্দোলনের লক্ষ্য আদর্শ কী ছিল? ফরাজি আন্দোলন কি ধর্মীয় পুনর্জাগরণের আন্দোলন? তিতুমীর স্মরণীয় কেন? দুদুমিয়া স্মরণীয় কেন? দামিন-ই-কোহ কী? মুন্ডা বিদ্রোহের লক্ষ্য কী ছিল?  নীল বিদ্রোহে হরিশচন্দ্র মুখার্জীর ভূমিকাকী ছিল? নীল বিদ্রোহে খ্রিস্টান মিশনারীদের ভূমিকা কী ছিল? 'দার-উল-হারব' এবং 'দার-উল- ইসলাম' কথার অর্থ কী? নীলকররা নীল চাষীদের উপর

নতুন সামাজিক ইতিহাস কী?

ইতিহাস হল মানব সভ্যতার ক্রমবিবর্তনের ধারাবাহিক বিবরণ । অতীতে ইতিহাসে শুধুমাত্র রাজা-মহারাজা কিংবা অভিজাতদের কথা লেখা থাকতো। বর্তমানে এই ধারায় পরিবর্তন এসেছে। এখন এখানে সাধারণ মানুষ, নিম্নবর্গীয় সমাজ, এমনকি প্রান্তিক অন্তজদের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয় জীবনের বিবর্তনের কথা ও সমানভাবে গুরুত্ব পাচ্ছে। আধুনিক ইতিহাসচর্চার এই ধারা  নতুন সামাজিক ইতিহাস  নামে পরিচিত।

নীল বিদ্রোহের কারণ কী? এই বিদ্রোহের বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব লেখ।

নীল বিদ্রোহ : কারণ, বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব : আঠারো শতকে ইংল্যান্ডের শিল্প বিপ্লব হয়। ফলে সেখানে বস্ত্র শিল্পের প্রয়োজনে নীলের চাহিদা বাড়ে। ১৮৩৩ সালে সনদ আইন এর ফলে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একচেটিয়া বাণিজ্যের অধিকার লুপ্ত হলে কোম্পানির কর্মচারিরা ব্যক্তিগতভাবে নীল চাষে নেমে পড়ে। অধিক মুনাফার আশায় এইসব কর্মচারীরা নীল চাষীদের উপর সীমাহীন শোষণ ও অত্যাচার শুরু করে। এই শোষণ ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে নীল চাষিরা হাজার ১৮৫৯ সালে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। এই বিদ্রোহ নীল বিদ্রোহ নামে খ্যাত।  নীল বিদ্রোহের কারণ  (পটভূমি ) : নীল বিদ্রোহের পিছনে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ লক্ষ্য করা যায়। ১) কৃষকের ক্ষতি: নীল চাষের চাষের যে খরচ হতো মিল বিক্রি করে চাষির সে খরচ উঠতো না। ফলে চাষীরা ক্ষতিগ্রস্ত হতো। ২) খাদ্যশস্যের অভাব:  নীল চাষ করতে গিয়ে কৃষকেরা খাদ্যশস্যের উৎপাদন প্রয়োজন মতো করতে পারত না। কারণ নীলকর সাহেবরা চাষীদের নীল চাষে বাধ্য করতেন। ফলে চাষির ঘরে খাদ্যাভাব দেখা দেয়। ৩) নীলকরদের অত্যাচার :  চাষিরা নীল চাষ করতে অস্বীকার করলে নীলকর সাহেবরা তাদের উপর নির্মম অত্যাচার। ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে

ইলবার্ট বিল কি?

লর্ড রিপন ভারতে আসার আগে কোন ভারতীয় বিচারকরা কোন অভিযুক্ত ইংরেজের বিচার করতে পারত না। এই বৈষম্য দূর করতে লর্ড রিপনের পরামর্শে তার আইন সচিব ইলবার্ট একটি বিলের খসড়া রচনা করেন। এই  খসড়া বিলে ভারতীয় বিচারকদের ইংরেজ অভিযুক্তের বিচার করার অধিকার দেওয়া হয়। এই খসড়া বিলই ইলবার্ট বিল (১৮৮৩) নামে পরিচিত। এই বিলের পক্ষে এবং বিপক্ষে তীব্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়। ঐতিহাসিক রমেশচন্দ্র মজুমদার বলেন, ইলবার্ট বিল আন্দোলন ছিল ভারতীয় জাতীয়তাবাদের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। বিকল্প প্রশ্ন : কতসালে ইলবার্ট বিল পাস হয়? এর উদ্দেশ্য কী ছিল? অন্যান্য প্রশ্ন : বিশ্লেষণমূলক প্রশ্ন । প্রশ্নের মান - ৪ (সাত-আট বাক্যে উত্তর)   ইলবার্ট বিল কী? এই বিলের পক্ষে বিপক্ষে কী প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছিল? ইলবার্ট বিল আন্দোলনের গুরুত্ব লেখো। ব্যাখ্যামূলক প্রশ্ন । প্রশ্নের মান - ৮ (পনের-ষোলো বাক্যে উত্তর) ইলবার্ট বিল আন্দোলন বলতে কী বোঝ? এই আন্দোলনের তাৎপর্য কী ছিল? 

১৮৫৭ সালের বিদ্রোহের চরিত্র ও প্রকৃতি আলোচনা করো:

১৮৫৭ খ্রীষ্টাব্দের বিদ্রোহের প্রকৃতি: ১৮৫৭ খ্রীষ্টাব্দের বিদ্রোহের প্রকৃতি নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতবিরোধ আছে. এক পক্ষের ঐতিহাসিকরা বলেন, এটি ছিল নিছক সিপাহী বিদ্রোহ। অপরপক্ষ বলেন, এটি ছিল জাতীয় আন্দোলন। তা ছাড়াও কেউ কেউ আবার এই বিদ্রোহকে ভারতের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম, সামন্ততান্ত্রিক প্রতিবাদ, কৃষক বিদ্রোহ, মুসলিম চক্রান্ত প্রভৃতি নানা নাম অভিহিত করেছেন। ১) সিপাহী বিদ্রোহ:   ইংরেজ ঐতিহাসিক চার্লস রেক্স, হোমস, এবং ভারতীয়দের মধ্যে কিশোরীচাঁদ মিত্র, দুর্গাদাস বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহকে নিছক সিপাহী বিদ্রোহ বলেছেন। তাঁদের বক্তব্য - ক)১৮৫৭ সালের বিদ্রোফের চালিকাশক্তি ছিলেন সিপাহীরাই। তাদের অসন্তোষ থেকেই বিফ্রহের সূচনা হয়েছিল। খ) এই বিদ্রোহে ভারতীয় জাতীয় চেতনার অগ্রদূত শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণী যোগদান করেনি বা ভারতের সমস্ত অঞ্চলের রাজারা আন্দোলনকে সমর্থন করেনি। ২) জাতীয় আন্দোলন: ঐতিহাসিক নর্টন, জন কে, কার্ল মার্কস প্রমুখ ১৮৫৭ খ্রীষ্টাব্দের বিদ্রোহকে জাতীয় বিদ্রোহ বলে অভিহিত করেছেন। তাঁদের মতে , ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের জনগণ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে আন্দোলনে যোগদান করেছিল; বিদ্রোহীরা

মানুষ, প্রকৃতি ও শিক্ষার সমন্বয় বিষয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চিন্তাধারা বিশ্লেষণ করো।

রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাদর্শন ও জীবনদর্শনের প্রধান এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো প্রকৃতি। তাঁর মতে, প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থার একটি বড় ত্রুটি হল, প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে শিক্ষার বিচ্ছিন্নতা। আর এজন্য আমাদের দেশের শিক্ষা শুধু অসম্পূর্ণই নয়, যান্ত্রিক এবং হৃদয়হীনও বটে। শিক্ষা ও তার লক্ষ্য : তাঁর মতে, শিক্ষা হলো বাইরের প্রকৃতি ও অন্ত:প্রকৃতির মধ্যে সমন্বয় সাধন। এই সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে জাতির উপযোগী, দক্ষ ও কল্যাণকামী সদস্য হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলাই হলো শিক্ষার লক্ষ্য। লক্ষ্য পূরণের উপায় : তাঁর মতে, এই লক্ষ্য পূরণের জন্য একজন শিশুর প্রকৃতির সান্নিধ্যে এসে তার দেহ মন সুসংগঠিত করতে হয়। এটা করলেই সে পরমসত্তাকে উপলব্ধি করতে পারে। লক্ষ্য পূরণের উদ্যোগ : শান্তিনিকেতনের ভাবনা : ১) শান্তিনিকেতন প্রতিষ্ঠা : এই কারণেই তিনি প্রাচীন তপবনের শিক্ষার আদর্শ অনুপ্রাণিত হয়ে শান্তিনিকেতন স্থাপন করেছিলেন। এখানে শিক্ষক ও শিক্ষার্থী প্রকৃতির স্নিগ্ধ ও সুশীতল পরিবেশে বসবাস করে শিক্ষা দান ও শিক্ষা গ্রহণ সম্পন্ন করতে পারে। ২) হিতৈষী তহবিল তৈরি : পল্লীগ্রামের মানুষের কল্যাণে এবং কৃষির উন্নতির জন্য গড়ে তোলেন হিতৈষী তহবি

তিন আইন কী?

 তিন আইন কী ব্রাহ্ম সমাজ আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ফলাফল হল ' তিন আইন'   পাস হওয়া।  ১৮৬৬ সালে কেশবচন্দ্র সেনের নেতৃত্বে ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজ বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ ও অসবর্ণ বিবাহ বিষয়ে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তোলেন। এই আন্দোলনের প্রভাবে ব্রিটিশ সরকার উৎসাহিত হয় এবং  ১৮৭২  সালে একটি আইন প্রণয়ন করে। এই আইনের ফলে  বাল্যবিবাহ  ও  বহুবিবাহ  প্রথা নিষিদ্ধ এবং   অসবর্ণ বিবাহ  বৈধ বলে ঘোষণা করা হয়। বিবাহ সংক্রান্ত এই তিনটি বিষয়কে কেন্দ্র করে তৈরি এই আইন ইতিহাসে ' তিন আইন'  নামে পরিচিত। 

শিক্ষার চুঁইয়ে পড়া নীতি' বলতে কী বোঝ?

'শিক্ষার চুঁইয়ে পড়া নীতি' বলতে কী বোঝ? লর্ড বেন্টিং-এর আইন সচিব টমাস ব্যাবিংটন মেকলে  ১৮৩৫  সালে ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারের দাবি জানিয়ে একটি প্রস্তাব দেন যা  'মেকলে মিনিটস'  নামে পরিচিত। এই প্রস্তাবে পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রবর্তনের স্বপক্ষে যুক্তি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, এদেশের উচ্চ ও মধ্যবিত্তদের মধ্যে ইংরেজি শিক্ষার প্রসার ঘটবে এবং তাদের দ্বারা তা চুইয়ে ক্রমশ সাধারণ দেশবাসীর মধ্যে ছড়িয়ে পড়বে। ফলে ভারতীয়রা রুচি, মত, নৈতিকতা ও বুদ্ধিমত্তায় ইংরেজদের মত হয়ে উঠবে। ইংরেজি শিক্ষার প্রসারের উদ্দেশ্যে মেকলের নেওয়া এই নীতি   ' চুঁইয়ে পড়া নীতি'   নামে পরিচিত।