মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষা — ২০২৩
ইতিহাস সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর - ২০২৩
বিভাগ ‘গ’
৩। দু'টি অথবা তিনটি বাক্যে নিম্নলিখিত প্রশ্নগুলির উত্তর দাও (যে কোনো এগারোটি) : ২x১১ = ২২
৩.১) ভারতীয় জাতীয়তাবাদের ইতিহাসে ১৯১১ খ্রিস্টাব্দ গুরুত্বপূর্ণ কেন?
King George 12' ই ডিসেম্বর ১৯১১ A.D., ঘোষণা করেন রাজধানী কলকাতা থেকে দিল্লীতে স্থানান্তরের। এজন্য Royal Durbar দিল্লীতে অনুষ্ঠিত হয়। মোহনবাগান হল প্রথম ভারতীয় দল হিসাবে বিদেশী দলের বিরুদ্ধে 1911 সালে ফুটবলে জয় ছিনিয়ে আনে। 1911 সালে বঙ্গভঙ্গ রদ ঘোষণা করা হয়।
৩.২) 'সরকারি নথিপত্র' বলতে কী বোঝায়?
পুলিশ বিভাগের রিপোর্ট ও সরকারী চিঠিপত্র, গোয়েন্দা বিভাগের রিপোর্ট, বিভিন্ন তথ্য, সরকারি আধিকারিকদের প্রতিবেদন ও চিঠিপত্র, এসবকেই সরকারি নথিপত্র বলা চলে।
৩.৩) কাদম্বিনী (বসু) গঙ্গোপাধ্যায় স্মরণীয়া কেন?
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম দুই মহিলা গ্র্যাজুয়েটের নাম হলো চন্দ্রমুখী বসু ও কাদম্বিনী (বসু) গঙ্গোপাধ্যায়। 1883 খ্রিস্টাব্দে এঁনারা বঙ্গদেশের প্রথম মহিলা স্নাতক ছিলেন। পরবর্তী জীবনে কাদম্বিনী দেবী প্রথম মহিলা চিকিৎসক রূপে পরিচিতি হন।
৩.৪) কোম্পানির শিক্ষাক্ষেত্রে 'চুঁইয়ে পড়া নীতি' বলতে কী বোঝায়?
জনশিক্ষা কমিটির সভাপতি লর্ড মেকলে তাঁর এক প্রস্তাবে লর্ড বেন্টিঙ্ক' কে বলেন যে, জল যেভাবে ওপর থেকে নিচের দিকে ছড়িয়ে পড়ে, ভারতে উচ্চ ও মধ্যবিত্তের মধ্যে ইংরেজি শিক্ষার প্রসার ঘটলে তা ক্রমশ সাধারণ দেশবাসীর মধ্যে ছড়িয়ে পড়বে। মেকলের এই নীতিই 'চুঁইয়ে পড়া নীতি' নামে পরিচিত।
৩.৫) দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্ত এজেন্সি কেন গড়ে তোলা হয়েছিল?
কোলবিদ্রোহের ফলে ব্রিটিশ সরকার কোলদের জন্য দঃপঃ সীমান্ত এজেন্সি নামে পৃথক অঞ্চল গঠন করে এবং ঐ অঞ্চলে কোলদের প্রচলিত প্রথা চালু করেন।
৩.৬) ফরাজি আন্দোলনের ব্যর্থতার কারণ কী?
(i) দুদুমিয়াঁর মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র নোয়া মিয়া ফরাজি আন্দোলনের নেতৃত্ব গ্রহণ করে ইসলামের শুদ্ধিকরণ আরম্ভ করায় হিন্দুরা এর থেকে সরে যায়।
(ii) এই আন্দোলন শুধুমাত্র বাংলায় সীমাবন্ধ ছিল। দেশে ছড়িয়ে পড়েনি।
(iii) কোম্পানির সরকার, জমিদার, নীলকর সাহেব, মহাজনদের মিলিত জোটের বিরুদ্ধে বিদ্রোহীরা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে অসফল হন।
৩.৭) মহারাণির ঘোষণাপত্রের (১৮৫৮) প্রকৃত উদ্দেশ্য কী ছিল?
1857 খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহের পরিপ্রেক্ষিতে মহারানির ঘোষণাপত্রের মূল উদ্দেশ্য ছিল কোম্পানির অপশাসনের অবসান ঘটিয়ে ব্রিটিশ রাজশক্তি কর্তৃক ভারতের প্রত্যক্ষ শাসনভার গ্রহণ করা। দ্বিতীয়ত, ব্রিটিশ সরকারের নতুন নীতি ও আদর্শের সঙ্গে ভারতবাসীর যোগসাধন ঘটানো।
৩.৮) জমিদারসভা ও ভারতসভার মধ্যে দুটি পার্থক্য লেখো।
১। জমিদার সভা মূল উদ্দেশ্য ছিল জমিদারের স্বার্থরক্ষা করা
ভারত সভার মূল উদ্দেশ্য ছিল দেশের জনগণকে বৃহত্তর রাজনৈতিক কর্মকান্ডে শামিল করা।
২। জমিদার সভা দ্বারকানাথ ঠাকুরের উদ্যোগে ও রাজা রাধাকান্ত দেবের সভাপতিত্বে ইহা প্রতিষ্ঠিত হয়।
ভারত সভার সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, আনন্দমোহন বসু প্রমুখের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়।
৩.৯) ড. মহেন্দ্রলাল সরকার স্মরণীয় কেন?
ড: মহেন্দ্রলাল সরকার (1833-1904 খ্রিঃ) ছিলেন ভারতের দ্বিতীয় MD এবং খ্যাতনামা প্রথম হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক। তিনি 1876 খ্রিস্টাব্দের 29 জুলাই কলকাতার বৌবাজার স্ট্রিটে IACS প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর দৃঢ় চিত্ততায় ভারতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষা ও চর্চার পথ সুগম হয়।
৩.১০) বাংলার সাংস্কৃতিক জীবনে ছাপাখানার বিকাশের প্রভাব কতটা?
(1) ছাপখানার বিকাশের ফলে বাংলা ভাষায় প্রচুর বই ছাপা হইতে থাকে। বাংলা গদ্য সাহিত্যের বিকাশের পথ মসৃন হয়।
(ii) ছাপাখানার বিকাশের ফলে সংবাদপত্র ও বিভিন্ন পত্রপত্রিকার দ্বারা জনগণ দেশবিদেশের বিভিন্ন সংবাদের ক্ষেত্রে/সাথে পরিচিত লাভ করে। তাদের জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধি পায়।
৩.১১) আদুরি সীতারাম রাজু কে ছিলেন?
৪ জুলাই ১৮৯৭ সালে জন্ম নেন এবং ৭ই মে ১৯২৪ পরলোক গমন করেন। এঁনার অন্য নাম রামচন্দ্র রাজু। তিনি একজন ভারতীয় বিপ্লবী, যিনি ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের সাথে যুক্ত ছিলেন। তিনি 'মান্যম বীরুদ উপাধি পান। যার অর্থ 'অরণ্যের বীর'। ১৯২২-২৪ সালের রুম্পা উপজাতিদের বিদ্রোহে তিনি ইংরেজদের বিরুদ্ধে নেতৃত্ব দেন।
৩.১২) 'মীরাট যড়যন্ত্র মামলাটি কী?
ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে 1929 খ্রিস্টাব্দে 33 জন শ্রমিক, নেতাকে গ্রেফতার করে তাদের বিরুদ্ধে মীরটি ষড়যন্ত্র মামলা করা হয়। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন মুজাফ্ফর আহমেদ, এস.এ. ডাঙ্গে, মিরাজ কর, পি.সি যোশি, গঙ্গাধর অধিকারী প্রমুখ। কমিউনিষ্টদের প্রতিরোধ করতে এই মামলা শুরু করা হয়।
৩.১৩) দীপালি সথে কেন প্রতিষ্ঠিত হয়?
লীলা (নাগ) রায় 1923 খ্রিস্টাব্দে দীপালি সঙ্ঘ, প্রতিষ্ঠা করেন। একদিকে মেয়েদের শিক্ষিত, আত্মসচেতন, স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলতে ও অন্য দিকে স্বদেশ প্রেম ও বৈপ্লবিক চিন্তা-চেতনার উন্মেষ ঘটাতে এই সংঘ তৈরি হয়। প্রথম দিকে এখানে প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার যুক্ত ছিলেন।
৩.১৪) গুরুচাঁদ ঠাকুর স্মরণীয় কেন?
হরিচাঁদ ঠাকুরের পুত্র গুরুচাঁদ ঠাকুর উত্তরাধিকার সূত্রে ধর্মগুরুর পদ লাভ করে। নমঃশূদ্রদের রাজনৈতিকভাবে,
সংগঠিত করেন। এজন্য তিনি নমঃশূদ্র ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন গড়ে তোলেন। এছাড়া নমঃশূদ্রের রাজনৈতিক ও সামজিক উন্নতির জন্য গড়ে ওঠে 'নিখিল বঙ্গা নমঃশূদ্র সমিতি ও বেঙ্গল নমঃশূদ্র অ্যাসোসিয়েশন', 'বেঙ্গাল ডিপ্রেসড ক্লাসেস অ্যাসোসিয়েশন প্রভৃতি। এর আন্দোলনের ফলেই 1919 সালের আদমশুমারিতে নমঃশূদ্র আইনটি স্বীকৃত হয় ও নমঃশূদ্র নাম ও আইনি স্বীকৃতি পায়। তাঁর উদ্যোগে 3952টি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয়। মেয়েদের ধাত্রীবিদ্যা ও নার্সিং ট্রেনিং দেওয়ার বন্দোবস্ত হয়।
৩.১৫) ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল ভারতের দেশীয় রাজ্যগুলির স্বাধীনতার দাবিকে অগ্রাহ্য করেছিলেন কেন?
উঃ বল্লভভাই প্যাটেল অত্যন্ত দূরদর্শিতা ও কূটনৈতিক দক্ষতার সাহায্যে ভারতের দেশীয় রাজ্যগুলির অন্তর্ভুক্তি ও স্বাধীনতার দাবিতে একটি সমাধানসূত্র খুঁজে বের করেন। 1947 সালের ১ই জুলাই প্যাটেলের পক্ষ থেকে দেশীয় রাজ্যের রাজাদের অনুরোধ জানান হয় তাঁরা যেন তাঁদের রাজ্যের বৈদেশিক কার্যকলাপ, পরিবহন সংক্রান্ত দায়দায়িত্ব ও প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত ক্ষমতা ভারত সরকারের হাতে তুলে দেয়। নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে ভারত কোনো আপস করবে না, জানিয়ে দেওয়া হয়।
৩.১৬) রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন (১৯৫৩) কেন গঠিত হয়েছিল?
উঃ ভাষাভিত্তিক রাজ্য পুনর্গঠনের দাবি ভারতের স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই উঠতে শুরু করে। এই দাবির যৌক্তিকতা বিচারের 1953 খ্রিস্টাব্দে স্বরাষ্ট্র দপ্তরের উদ্যোগে সুপ্রীম কোর্টের বিচারপতি সৈয়দ ফজল আলির সভাপতিত্বে কে.এম. পানিকর ও হৃদয়নাথ কুঞ্জুর-কে নিয়ে রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন গঠিত হয়েছিল।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন