ভূমিকা: উনিশ শতকে সমাজ সংস্কারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব ছিলেন হিন্দু কলেজের তরুণ অধ্যাপক হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও। তাঁর নেতৃত্বে তাঁর অনুগামী একদল যুবক ছাত্রদল সমাজের কুসংস্কার, অন্ধবিশ্বাসের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলেন। ডিরোজিও ও তাঁর অনুগামীদের বলা হত নব্যবঙ্গ বা ইয়ং বেঙ্গল এবং তাঁদের গড়ে তোলা আন্দোলনকে বলা হয় নব্যবঙ্গ আন্দোলন।
মতাদর্শ: ডিরোজিও ছিলেন ফরাসি বিপ্লবের আদর্শে অনুপ্রাণিত। তিনি তাঁর ছাত্রদের লক, হিউম, টম পেইন, রুশো, ভলতেয়ার প্রমুখ দার্শনিকের মতবাদের সাথে পরিচয় ঘটান এবং তাঁদের মধ্যে যুক্তিবাদ, জাতীয়তাবোধ এবং দেশপ্রেমের বীজ বপন করেন। তাঁর লেখা 'ফকির অব জঙ্গীরা' কাব্যগ্রন্থের 'আমার স্বদেশভূমি, ভারতের প্রতি' কোবতে তাঁর স্বদেশপ্রেমের পরিচয় পাওয়া যায়।
একাডেমিক এসোসিয়েশন: ডিরোজিও তাঁর অনুগামীদের মধ্যে স্বাধীন চিন্তা ও যুক্তিবাদের বিকাশ ঘটানোর জন্য ১৮২৭ খ্রি. একাডেমিক এসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠা করেন। এখানে তাঁরা অস্পৃশ্যতা, জাতভেদপ্রথা, সতিদাহপ্রথা, মূর্তিপূজা প্রভৃতি কুসংস্কারের বিরুদ্ধে নিজেদের মতামত ব্যক্ত করতেন। তাঁদের মুখপত্র ছিল 'এথেনিয়াম'।
অন্যান্য: নব্যবঙ্গ গোষ্ঠীর উদ্যোগে প্রকাশিত পার্থেনন (১৮২৯ খ্রি.) পত্রিকায় নিয়মিতভাবে নারীশিক্ষা, নারীস্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা প্রভৃতির স্বপক্ষে এবং 'ক্যালাইডোস্কোপ' পত্রিকায় ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধের প্রচার চালানো হতো।
অনুগামী: ডিরোজিও-র মৃত্যুর পর তাঁর অনুগামীরা এই সংস্কার এনফলন এগিয়ে নিয়ে যান। এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন - রামগোপাল ঘোষ, রামতনু লাহিড়ী, প্যারিচাঁদ মিত্র, দক্ষিণারঞ্জন মুখোপাধ্যায় প্রমুখ।
মূল্যায়ন: নব্যবঙ্গ গোষ্ঠীর উগ্র হিন্দুত্ববিরোধী কার্যকলাপ এবং নেতিবাচক চিন্তাধারা রক্ষণশীল হিন্দুসমাজের কাছে তাঁদের গ্রহণযোগ্যতা কমালেও এবং শহরকেন্দ্রিক কর্মসূচি সত্ত্বেও তাঁদের কিছু সদর্থক দিকও ছিলো। তাঁদের নারী-নির্যাতন, নারী-পুরুষের অসাম্য, দাসপ্রথা বিরোধী প্রচারে তাদের ভূমিকা তাদের চিরস্মরণীয় করে রাখবে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন