বাঙালির বিজ্ঞানচর্চাকে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে যাঁরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু তাঁদের অন্যতম। এই লক্ষ্যে ১৯১৭ সালে তাঁর তৈরি বসু বিজ্ঞান মন্দির বাংলায় বিজ্ঞান শিক্ষার প্রসারে অবিস্মরণীয় অবদান রেখেছে।
বসু বিজ্ঞান মন্দির প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য :
ইংল্যান্ডের রয়েল সোসাইটির অনুকরণে জগদীশচন্দ্র বসু ভারতে একটি বিজ্ঞান গবেষণাগার গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেন। এই প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলার উদ্দেশ্য হল বিজ্ঞানের অগ্রগতি ও জ্ঞানের প্রসার ঘটানো।
তড়িৎ চুম্বকীয় তরঙ্গ আবিষ্কার:
জগদীশচন্দ্র বসুর একটি অবিস্মরণীয় কাজ হলো বিদ্যুৎ চুম্বকীয় তরঙ্গ, যা বেতার তরঙ্গ নামে পরিচিত, আবিষ্কার। এই তরঙ্গ এক ঘর থেকে অন্য ঘরে পাঠানোর যন্ত্রও তাঁর আবিষ্কার। এই গবেষণার জন্য তিনি লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টর অফ সাইন্স উপাধি লাভ করেন।
উদ্ভিদের প্রাণের অস্তিত্ব প্রমাণ :
তিনিই বিশ্বে প্রথম প্রমাণ করেছিলেন যে গাছের চেতনা আছে, সে কষ্ট বা যন্ত্রণা পায়।
বৈজ্ঞানিক যন্ত্র আবিষ্কার :
উদ্ভিদের উত্তেজনার বেগ মাপার যন্ত্র 'রিজোনাস্ট রেকর্ডার', উদ্ভিদের বৃদ্ধি মাপার যন্ত্র 'ক্রেস্কোগ্রাফ' এবং অন্যান্য যন্ত্র যেমন 'ফটো মিটার','স্ফিগমোগ্রাফ' ইত্যাদি যন্ত্র আবিষ্কার করে তিনি খ্যাতি লাভ করেন।
বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা স্থাপন :
বসু বিজ্ঞান মন্দিরে তিনি বিভিন্ন শাখা চালু করেছিলেন। উদ্ভিদবিদ্যার সাথে সাথে পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, মাইক্রোবায়োলজি, বায়োকেমিস্ট্রি, বায়োফিজিক্স, পরিবেশ বিজ্ঞান ইত্যাদি বিষয়েও এখানে গবেষণা শুরু হয়।
বিজ্ঞান গ্রন্থ প্রকাশ :
বিজ্ঞানী গবেষণার সহ তিনি বিজ্ঞান বিষয়ক গ্রন্থ রচনায় ও মনোনিবেশ করেন। তার লেখা 'অব্যক্ত', 'প্লান্ট রেসপন্স অ্যাজ এ মিনস অফ ফিজিওলজিক্যাল ইনভেস্টিগেশন', 'ফিজিওলজি অফ ফটোসিন্থেসিস', 'নার্ভাস মেকানিজম অফ প্লান্টস' গ্রন্থ গুলি বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
সম্মান প্রাপ্তি :
বৈজ্ঞানিক গবেষণায় সাফল্যের স্বীকৃতি স্বরূপ ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি 'নাইটহুড' লাভ করেন। ১৯২০ সালে 'রয়াল সোসাইটি'র সদস্য পদ লাভ করেন। ১৯২৭ ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯২৮ সালে 'একাডেমি সায়েন্স'-এর সদস্যপদ লাভ করেন।
বলাবাহুল্য, ভারতের বিজ্ঞান চর্চা ও গবেষণার উন্নয়নে আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু প্রতিষ্টিত বসু বিজ্ঞান মন্দিরের অবদান অপরিসীম। এই প্রতিষ্ঠানের হাত ধরেই ভারতে বিজ্ঞানের গবেষণা চর্চা নতুন ধারায় প্রবাহিত হয়।
বিকল্প প্রশ্ন :
উনিশ শতকে আধুনিক বিজ্ঞানচর্চার প্রসারে জগদীশ বসুর ভূমিকা কী ছিল? এপ্রসঙ্গে বসুবিজ্ঞান মন্দিরের অবদান উল্লেখ করো।
অন্যান্য প্রশ্ন :
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন