রবীন্দ্রনাথের শিক্ষা দর্শন ও জীবন দর্শনের প্রধান এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো প্রকৃতি। তাঁর মতে, প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থার একটি বড় ত্রুটি হল প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে শিক্ষার বিচ্ছিন্নতা। আর এজন্য আমাদের দেশের শিক্ষা শুধু অসম্পূর্ণই নয়, যান্ত্রিক এবং হৃদয়হীনও বটে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিক্ষাচিন্তার বৈশিষ্ট্য :
১) শিক্ষা ও তার লক্ষ্য :
তাঁর মতে, শিক্ষা হলো বাইরের প্রকৃতি ও অন্ত:প্রকৃতির মধ্যে সমন্বয় সাধন। এই সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে নিজেকে জাতির উপযোগী, দক্ষ ও কল্যাণকামী সদস্য হিসেবে গড়ে তোলাই হলো শিক্ষার লক্ষ্য।
২) লক্ষ্য পূরণের উপায় :
তাঁর মতে, এই লক্ষ্য পূরণের জন্য একজন শিশুর প্রকৃতির সান্নিধ্যে এসে তার দেহ মন সুসংগঠিত করতে পারলেই সে পরমসত্তাকে উপলব্ধি করতে পারে।
৩) লক্ষ্য পূরণের উদ্যোগ : শান্তিনিকেতন প্রতিষ্ঠা :
এই কারণেই তিনি প্রাচীন তপবনের শিক্ষার আদর্শ অনুপ্রাণিত হয়ে শান্তিনিকেতন স্থাপন করেছিলেন যাতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থী প্রকৃতির স্নিগ্ধ ও সুশীতল পরিবেশে বসবাস করে শিক্ষা দান ও শিক্ষা গ্রহণ সম্পন্ন করতে পারে।
৪) মানুষে মানুষে দ্বন্দ্বের কারণ :
রবীন্দ্রনাথের শিক্ষা দর্শনে মানবপ্রেম একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে আছে। তাঁর মতে, অজ্ঞতা থেকেই আসে ব্যবধান, পার্থক্য আর অহংকার। এই অহংকারের বসেই তৈরি হয় মানুষের মানুষের দ্বন্দ্ব।
৫) প্রকৃতি, মানুষ ও শিক্ষার সমন্বয় :
রবীন্দ্রনাথ মনে করেন, প্রকৃত শিক্ষা প্রকৃতির সঙ্গে মানুষকে একাত্ম করে দেয়। ফলে মানুষ দ্বন্দ্ব ভুলে একাত্মতা প্রকাশ করে এবং প্রকৃতি, মানুষ ও শিক্ষার মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে মানুষের সার্বিক ও সঠিক জ্ঞান লাভ হয়।
৬) দ্বন্দ্বের অবসানে প্রকৃতির ভূমিকা :
এই সার্বিক ও সঠিক জ্ঞান অজ্ঞানতা দূর করে স্বাধীন চিন্তা শক্তির বিকাশ ঘটায় এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি জাগিয়ে তোলে। তাঁর মতে, কেবলমাত্র এই স্বাধীন চিন্তাশক্তি ও বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গির দ্বারাই আমাদের সমস্ত দুঃখ দুর্গতির অবসান ঘটতে পারে।
এভাবে রবীন্দ্রনাথ শিক্ষার সঙ্গে প্রকৃতি ও মানুষের সমন্বয় গড়ে তুলে এক অভিনব মুক্ত শিক্ষাদর্শনের জন্ম দেন এবং একটি আদর্শ শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলেন যা বিশ্বজাতির মহামিলনের ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল।
বিকল্প প্রশ্ন :
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিক্ষাদর্শন ও শান্তিনিকেতন ভাবনা বিশ্লেষণ করো। - ২০২০
অন্যান্য প্রশ্ন :
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন