বাংলার ছাপাখানার ইতিহাসে উইলিয়াম কেরি, উইলিয়াম ওয়ার্ড এবং জোসুয়া মার্শম্যান নামে তিনজন মিশনারির অবদান নির্ণয় করো।
শ্রীরামপুর ত্রয়ী :
বাংলার হুগলি জেলার শ্রীরামপুরে ১৮০০ সালে একটি ছাপাখানা গড়ে ওঠে। নাম 'শ্রীরামপুর মিশন প্রেস'। এই প্রেসটি গড়ে তোলেন উইলিয়াম কেরি, উইলিয়াম ওয়ার্ড এবং জোসুয়া মার্শম্যান নামে তিনজন মিশনারি। বাংলার ছাপাখানার ইতিহাসে এঁরা 'শ্রীরামপুর ত্রয়ী' নামে পরিচিত।
শ্রীরামপুর ত্রয়ী কেন :
বাংলায় ১৯ শতকে ছাপাখানা তথা মুদ্রণ শিল্পের বিকাশে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছিল 'শ্রীরামপুর মিশন প্রেস'। আর এই প্রেস গড়ে তুলতে এই তিনজন মিশনারির গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল। তাঁদের সমবেত চেষ্টায় এই ছাপাখানায় ১৮৩২ সালের মধ্যে দু'লক্ষ ১২ হাজার গ্রন্থ ছাপা হয়েছিল।
ছাপাখানার ইতিহাসে তিনজনের এই অবদানের স্বীকৃতি দিতেই এদেরকে 'শ্রীরামপুর ত্রয়ী' নামে অভিহিত করা হয়।
শ্রীরামপুর ত্রয়ীর ভূমিকা / অবদান :
উনিশ শতকে বিকল্প চিন্তার বিকাশে / বিস্তারে / প্রসারে কিংবা শিক্ষার প্রসারে শ্রীরামপুর ত্রয়ীর 'শ্রীরামপুর মিশন প্রেস' গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছিল।
১) ধর্ম-পুস্তক প্রকাশ :
এই তিনজন মিশনারির প্রচেষ্টায় শ্রীরামপুর মিশন (প্রেস) বাংলা, হিন্দি, অসমিয়া সহ বিভিন্ন ভারতীয় ভাষায় বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ প্রকাশিত হয়। বাইবেল, রামায়ণ-মহাভারত বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
২) প্রাচীন ভারতীয় সাহিত্য প্রকাশ :
এছাড়া হিতোপদেশ, বত্রিশ সিংহাসন, রামরাম বসুর 'প্রতাপাদিত্য চরিত্র' প্রভৃতি প্রকাশিত হয়।
৩) পাঠ্যপুস্তক প্রকাশ :
ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের ছাত্রদের জন্য এই মিশন প্রেস থেকে পাঠ্যপুস্তক ছাপা হয়। এই তিনজনের উদ্যোগেই বাংলা ভাষায় প্রচুর স্কুলপাঠ্য বই সাধারণ মানুষের হাতে কম দামে তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা হয়।
৪) সংবাদপত্র প্রকাশ :
শ্রীরামপুর ছাপাখানা থেকে মার্শম্যানের সম্পাদনায় ১৮১৮ সাল থেকে 'দিগদর্শন' নামে একটি মাসিক এবং 'সমাচার দর্পণ' নামে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশিত হতে থাকে।
৫) মাতৃভাষায় শিক্ষাদান :
গ্রামাঞ্চলে মাতৃভাষায় শিক্ষাদানের উদ্যেশ্যে মার্শম্যান ১৮১৬ সালে 'স্থানীয় স্কুল সম্বন্ধে আভাস' নামে একটি কর্মপরিকল্পনা হাতে নেন। এই সব বিষয়ের পাঠ্যপুস্তকও শ্রীরামপুর মিশন প্রেস থেকে প্রকাশিত হয়।
৬) বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা :
শ্রীরামপুরের মিশনারিরা শিক্ষা-বিস্তারের উদ্যেশ্যে ১৮১৮ সালের মধ্যে ১০৩ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় গড়ে তোলেন। এছাড়া নারী-শিক্ষার জন্য বিদ্যালয় ও উচ্চশিক্ষার জন্য শ্রীরামপুরে প্রথম ডিগ্রি কলেজ (এশিয়ায় প্রথম) গড়ে তোলেন।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে, উনিশ শতকে শ্রীরামপুর ছাপাখানা থেকে প্রকাশিত বইপত্রগুলি জ্ঞান ও শিক্ষার (গণশিক্ষার) প্রসারে গরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই কর্ম-যজ্ঞে শ্রীরামপুর-ত্রয়ীর অবদান বিশেষভাবে স্মরণীয়।
বিকল্প প্রশ্ন :
১) শ্রীরামপুর মিশন প্রেস কীভাবে একটি অগ্রণী মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়?
২) শিক্ষার বিস্তারের শ্রীরামপুরের খ্রিস্টান মিশনারীদের ভূমিকা কী ছিল?
৩) বিকল্প চিন্তার বিস্তারে/বিকাশে/প্রসারে শ্রীরামপুর প্রেসের অবদান কতখানি?
এই বিষয়ে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন :
- হ্যালহেডের 'এ গ্রামার অব দ্য বেঙ্গল ল্যাঙ্গুয়েজ' গ্রন্থটি গুরুত্বপূর্ণ কেন? বাংলা ছাপাখানার বিকাশে চার্লস উইলকিনস-এর ভূমিকা
- ছাপাখানা বিকাশে গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য্যের ভূমিকা
- ছাপাখানা বাংলায় শিক্ষা বিস্তারে কীরূপ পরিবর্তন এনেছিল?
- বাংলায় ছাপাখানার বিকাশে জেমস অগাষ্টস হিকির অবদান
- ভারতের ইতিহাসে অগাষ্টস হিকি-এর অবদান কী ছিল?
- বাংলার ছাপাখানার বিকাশে পঞ্চানন কর্মকার-এর ভূমিকা কি ছিল?
- বাংলার ছাপাখানার ইতিহাসে পঞ্চানন কর্মকার (মল্লিক) কী জন্য বিখ্যাত?
- গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য স্মরণীয় কেন?
- উনিশ শতকে ছাপাখানার ব্যবসার বিকাশে ইউ এন রায় এন্ড সন্স এর অবদান লেখো।
- ছাপাখানার ইতিহাসে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী স্মরণীয় কেন?
- উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী স্মরণীয় কেন?
- উনিশ শতকে বিকল্প চিন্তার বিস্তারে (শিক্ষার প্রসারে) ছাপাখানার গুরুত্ব আলোচনা করো।
- বাংলার ছাপাখানার ইতিহাসে উইলিয়াম কেরি, উইলিয়াম ওয়ার্ড এবং জোসুয়া মার্শম্যান নামে তিনজন মিশনারির অবদান নির্ণয় করো।
- ক্যালকাটা স্কুল বুক সোসাইটি কে কী উদ্দেশ্যে গড়ে তোলেন? বাংলার ছাপাখানার ইতিহাসে তারা কীভাবে অবদান রেখেছে?
- বাংলায় ছাপাখানার ব্যবসায়িক উদ্যোগের সংক্ষিপ্ত বিবরণ।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন